মোশাররফ হোসেন: কলারোয়া উপজেলায় কৃষকদেও আমন ধানে সার প্রয়োগ শেষ। সবজি চাষে সারের তেমন প্রয়োজন লক্ষ্য করা যায়নি। তার পরেও কলারোয়ায় আবারো ভূতুর্কির সার বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে মাছ চাষে সার বরাদ্ধ না থাকলেও মাছের ঘের ও পুকুরে কৃষি ফসলের জন্য বরাদ্ধকৃত সারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারও সার সংকটের অন্যতম কারণ বলে দাবি করেছেন কৃষকরা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কলারোয়ায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১৭৫৯৪ হেক্টর। এর মধ্যে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টরে বোরো, ১২ হাজার হেক্টরে আমনধান, ২২৬০ হেক্টরে আউশ এবং সাড়ে ৬ হাজার হেক্টরে সরিষার আবাদ হয়। প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হাজার হাজার ট্রাক কুমড়া, পটল, উচ্ছে, বেগুন, টমেটা রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। প্রায় সাড়ে ১১’শ হেক্টরে আম ও কুলের আবাদ হয়। বিপুল পরিমাণ আম বিদেশে রফতানি করা হয়। এদিকে আবাদী জমির মধ্যে ৯ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে বছরে দুই বার আবাদ হয় অর্থাৎ দুই ফসলী। ৬০৪৪ হেক্টর জমি ৩ ফসলি। আধুনিক পদ্ধতিতে হাইব্রিড জাতীয় ফসলের জন্য ৪ ফসলী বহু জমিও রয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্যে, আবাদী জমি সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টর হলেও সারা বছর ফসল চাষ হয় ৩৯ হাজার ৬’শ ৩২ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ ফসলের নিবিড়তা ২৪০%। নিবিড় চাষাবাদে অর্থাৎ এক জমিতে বছরে ৩/৪ ফসল উৎপাদনে মাটির উর্বরাতা শক্তি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। তাই সারের চাহিদা বেশী থাকায় ডিলাররা বাড়তি দামে সার বিক্রির সুযোগ নেয়। উপজেলার কোমরপুরের কৃষক জেহের জানায়, ইউরিয়া ২৫ টাকা, টিএসপি ৩০ টাকা, ডিএপি ২০ টাকা, এবং পটাশ ৩০ টাকা কেজি কিনে উচ্ছে চাষ করেছেন ।
রামকৃষ্ণপুরের কৃষক আলাউদ্দীন জানায়, ইউরিয়া ৩০ টাকা, টিএসপি ৩০ টাকা ডিএপি ২৫ এবং পটাশ ৩২ টাকা কেজি দরে কিনে তিনি সবজি চাষ করেছেন। দেয়াড়া গ্রামের আ: রব বলেন, সরকার সারের দাম নির্ধারন করে দিলেও আমরা ইউরিয়া সার কিনছি ৩০ টাকা কেজিতে অন্যান্য সারও বেশী দামে কিনছি। ইলিশপুরের কৃষক মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম বলেন, কিছু সবজি ছাড়া মাঠে সারের প্রয়োজন নেই। তারপরেও ৫০ কেজির বস্তা ইউরিয়া ১৩’শ টাকা, টিএসপি ১৩’শ টাকা এবং পটাশ সাড়ে ৯’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনাবাড়িয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আক্তার আসাদুজামান জানায়, তিনি ১১৫ টাকা দিয়ে ৪ কেজি ইউরিয়া সার কিনেছেন। লাউডুবির শহিদুল জানায়, এখন বাইরের জেলা বা উপজেলার সার আনার প্রয়োজন নেই। তাহলে কলারোয়ার বরাদ্দের সার বাড়তি দামে বিক্রি করে কৃষকের পকেটের কোটি কোটি টাকা লোপাটের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে কেন? নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক উপজেলার সরসকাটি, জয়নগর, কামারালী, বাঁটরা, বামনখালী, খোরদো ও কলারোয়া বাজারের কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, বিসিআইসি ডিলাররা বাড়তি দামে সার বিক্রি করায় সারের বাজারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিসিআইসি ডিলার সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, জেলা/উপজেলা থেকে আনা সারে সামান্য বাড়তি পয়সা নেওয়া হয় । কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, বাৎসরিক ইউরিয়া সারের চাহিদা ৯ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া যায় মাত্র ৬ হাজার মেট্রিক টন। তাই চলতি মৌসুমে সার নিয়ে হৈ চৈ কালে ২৪৭ মেট্রিক টন ইউরিয়ার অতিরিক্ত বরাদ্দ বাজারে ছাড়তে হয়। সেই হিসাবে উপজেলার কৃষকদের পকেট কেঁেট এই অসধিু চক্রটি বছরে বাড়তি কয়েক কোটি টাকা নিরবে লোপাট করছে। এছাড়া চাষীর চাহিদা পূরণে শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, দেবহাটা উপজেলা, কখনো খুলনা/বাগেরহাট থেকে বিপুল পরিমাণ সার এনে কলারোয়ার কৃষকের চাহিদা পূরণের বিসিআইসি ডিলারদের দাবী সত্য বলে কৃষি বিভাগ সুত্র জানায়। এতে উল্লেখিত জেলা উপজেলার ডিলারদের কাছে বাড়তি সার থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে।
ভিন্ন উপজেলা/জেলা থেকে আগত সার আন্তঃ উপজেলা ও আন্তঃ জেলায় চোরাচালান এবং বাড়তি দামে সার বিক্রির সুযোগ করে দেয়। প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে প্রয়োজন কম সেখানে সারের বরাদ্দ বেশী কেন? আর কলারোয়া চাহিদামত সার পায় না কেন? যেহেতু ভূতুর্কি বর্হিভূত একদানা ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশ ও ডিএপি সার দেশে প্রবেশ করেনা। সার আমদানীতে ইতিপূর্বে সাড়ে ৭ হাজার কোটি আর বর্তমানে ২৮ হাজার কোটি টাকা ভতুর্কি প্রয়োজন। শুধু কৃষকের স্বার্থে নয়; বরং আম জনতার পেটের ক্ষুধা নিবারণ করে জীবন বাচাতে-এই ভর্তুকি। কিন্তু কার স্বার্থে ভতুর্কির সার নিয়ে চোরাচালান আর কৃষকের পকেটের টাকা লোপাটের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে? আর ন্যার্যমূল্যে সার প্রাপ্তি নিশ্চিতে বাধ্যতামূলক প্রকাশ্য মূল্য তালিকা প্রদর্শন ও মেমো প্রদান বাস্তবায়নে গড়িমসি কেন-সেই প্রশ্ন গণ মানুষের। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন চাহিদা মত বরাদ্দ না হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বাড়তি দামে সার বিক্রির বিষয় তিনি জানেন না। উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লালটু বলেন, কৃষকের কাছে বাড়তি দামে সার বিক্রির কথা তিনি এলাকার কৃষকদের মুখেই শুনেছেন, কিন্তু ডিলাররা তা অস্বীকার করেন।