Site icon suprovatsatkhira.com

মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টির জন্যই শিক্ষকগণের পাঠদান

শয়তান মানুষের ঈমান ও আমল ধ্বংস করার জন্য সর্বদা তৎপর থাকে। সে যখন কোন মানুষকে নেক আমল থেকে বিরত রাখতে অক্ষম হয়, তখন অন্তরে রিয়া ঢুকিয়ে আমল নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে। আর মানুষ তার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে গোপনে নেক আমলের চেয়ে প্রকাশ্যে নেক আমলে বেশী মজা অনুভব করে। নিজের নেক আমলগুলো অন্যের নিকট প্রকাশ করে আলাদা একটা তৃপ্তি পেয়ে থাকে। আসুন, একটু চিন্তা করি আমাদের দ্বারা এমটা হচ্ছে না তো! যদি উত্তর আসে হ্যাঁ, তবে এটাকে শরীয়ত শিরকে খফী বা গোপন শিরক বলে আখ্যায়িত করেছে। এর পরিনতি অত্যন্ত ভয়াবহ। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন (সুরা আনআম,আয়াত-৮৮):

‘যদি তারা শিরক করে, তাদের আমল সমূহ বরবাদ হয়ে যাবে।’ শিরক অন্যসব গুনাহ থেকে সর্ম্পূন ব্যতিক্রম। কোন গুনাহের কারণে আমলনামায় সওয়াব বাতিল হয়না। যেমন, হাজী সাহেব যদি কোন দিন নামাজ কাযা করেন, এতে তার হজ্জ বাতিল হয়না। নামাযী যদি কোন একদিন মিথ্যা বলে ফেলে এর কারণে তার নামাজ বাতিল হয়না। কিন্তু শিরক এমন একটি অপরাধ তা করলে পূর্বের কোন সওয়াব আমলনামায় অবশিষ্ট থাকেনা। তাই, শিরকের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী সতর্ক থাকা প্রয়োজন। শিরককারী যদি নবীর পিতা ও হয় তার জন্য তার সন্তান নবীর সুপারিশ চলবেনা।
রাসুল (সা:)বলেছেন-কিয়ামতের দিন ইব্রাহীম (আ:) তাঁর পিতা আযরের দেখা পাবেন। আযরের মুখ মন্ডলে কালি ও ধুলাবালি থাকবে। তখন ইব্রাহীম (আ:) তাকে বলবেন-আমি কি পৃথিবীতে আপনাকে বলিনি যে, আমার অবাধ্যতা করবেননা? তখন তাঁর পিতা বলবে-আজ আর তোমার অবাধ্যতা করবোনা। অত:পর ইব্রাহীম (আ:)আবেদন করবেন: হে আমার রব! আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, হাশরের দিন আপনি আমাকে লজ্জিত করবেন না। আমার পিতা রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার চেয়ে বেশী অপমান আমার জন্য আর কী হতে পারে? তখন মহান আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আমি কাফেরদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। পুনরায় বলা হবে হে ইব্রাহীম! তোমার পদতলে কী? তখন তিনি নিচের দিকে তাকাবেন। হঠাৎ দেখতে পাবেন তাঁর পিতার জায়গায় সর্বাঙ্গে রক্তমাখা একটি জানোয়ার পড়ে আছে। এর চার পা বেঁধে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হবে। (সহীহ বুখারী: হাদীস নং ৩৩৫০ )।

অথচ এ জঘন্যতম গুনাহটি আজকের সমাজে ভয়াবহ রুপে বিস্তার লাভ করেছে। শিরক সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। কেউ বুঝে আবার কেউ না বুঝে শিরকে লিপ্ত হচ্ছে। শিরক শিরকই, বুঝে করুক আর না বুঝে করুক। না বুঝে বিষ পান করলে যেমন ক্ষতি হয়, ঠিক না বুঝে শিরক করলে ও তা-ই হবে। হাশরের দিন অসংখ্য মানুষ আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে দেখবে তাদের আমলনামানা সওয়াব শুন্য। তারা অবাক হয়ে বলবে আল্লাহ আমার আমলনামা সওয়াব শুন্য কেনো? আমার আমলনামায় শিরক আসল কোথা থেকে,আমি তো শিরক করিনি। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-‘তারা বলবে,আমাদের প্রতিপালক আল্লাহর কসম! আমরা মুশরিক ছিলাম না। (সুরা আনআম,আয়াত-২৩)

আল্লাহ তায়ালা উত্তরে বলবেন-‘দেখ! কিভাবে তারা নিজেদের ব্যাপারে মিথ্যা বলছে? তারা যতসব মিথ্যা রচনা করেছিল তা সবই আজ উধাও হয়ে গেছে।’( সুরা আন আম ,আয়াত -২৪)। তাদের অনেকে হয়ত না বুঝে শিরক করেছে। তাদের সম্পাদিত এ কাজটি যে শিরক তা হয়ত তারা বুঝেনি। আল্লাহর আজাব প্রত্যক্ষ করে তারা বলবেÑ‘আমরা কোনো মন্দ কাজ করতাম না।’ (সুরা নাহল,আয়াত-২৮)। তারা বুঝাতে চাইবে -হে আল্লাহ! এটা যে মন্দ তা আমরা জানতাম না। তবে জানতাম না বলে সেদিন কোনো লাভ হবে না। কেননা পবিত্র কুরআনের প্রথম নির্দেশই ছিল ‘পড় তোমার প্রভুর নামে।’ (সুরা আলাক,আয়াত-১)।

পড়লেই জানতে পারতে,কিন্তু যে গ্রন্থ পড়লে জানতে পারতে সে কুরআন তো পড় নাই। জানবে কীভাবে? আল্লাহ যদি প্রশ্ন করেন-তুমি কেনো জাননি? বিবাহ-শাদী, সন্তান জন্মদান, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি-অর্থনীতি সবই জেনেছ। গাদা গাদা গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজি প্রভৃতি পড়ে শিক্ষক/সচিব/ ডিসি/এসপি/ব্যারিষ্টার/ইঞ্জিনিয়ার/ বিভিন্ন কর্মকর্তা হতে জেনেছ শুধু কোনটা কাজটা করলে ঈমানটাই থাকেনা , জান্নাতটাই পাওয়া যায়না সেটাই জানার সময় সুযোগ পাওনি। তাই না? তিনি তখন বলবেন-‘ হ্যাঁ,নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কর্ম সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। অতএব জাহান্নামে প্রবেশ করো, আর এতেই চিরকাল অবস্থান করো।’( সুরা নাহল,আয়াত-২৮,২৯)। নিশ্চই আমরা কেউ এমন পরিনতি প্রত্যাশা করিনা। আমাদের সাধ্যমত আমরা প্রতি নিয়ত নেক আমল বা ভালো কাজ করে চলেছি।
উদাহরনস্বরূপ: একজন শিক্ষক সকাল ৯টা থেকে থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত (২শিফট পরিচালিত বিদ্যালয়ে) অত্যন্ত পরিশ্রম করে পাঠদান পরিচালনা করেন। সকাল ৯টায় শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হলে ও ডিজিটাল হাজিরার কারণে তাঁর প্রস্তুতি নিতে হয় আরো ১/২ ঘন্টা পূর্বেই। আর আমাদের শিক্ষিকাগণের প্রস্তুতিটা আরো বেদনাদায়ক। কেননা তাদের সংসার ও বিদ্যালয় উভয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। পড়ি মরি করে এসে বায়োমেট্রিকে হাজিরা দিতে হয়। মাঝে মাঝে শোনা যায় মেশিনের সময় ঘড়ির সময়ের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে যাচ্ছে। এর ফলাফল যথা সময়ে এসেও শিক্ষকের উপস্থিতি বিলম্বে দেখাচ্ছে! এরপর শুরু হয় বিদ্যালয়ের মূল কর্মযজ্ঞ। একজন গুনাহগার পরিদর্শক হিসেবে অনেক গুণি শিক্ষকের শ্রেণি কার্যক্রম পরিদর্শনের সুযোগ আমার রব আমাকে দিয়েছেন, আলহ্ামদুল্লিাহ! আমার বিশ্বাস ও প্রত্যাশা সবাই কম বেশি একই রকম পরিশ্রম করে চলেছেন। এটি আমাদের ইবাদাত, যা মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর দিয়েছেন।

সুরা মূলক, আয়াত-২ এ মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- “কাজের দিক দিয়ে কে উত্তম তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য তিনি জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীলও।” অর্থাৎ তিনি পৃথিবীতে মানুষের জীবন ও মৃত্যুর এ ধারাবাহিকতা চালু করেছেন কোন মানুষটির কাজ বেশী ভালো তা দেখার জন্য। আর আমরা প্রতিনিয়ত অন্যের চেয়ে আরো সুন্দরভাবে নিজের কাজ গুলো করার চেষ্টা করছি। কখনো কখনো নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছি। কিন্তু মহোদয় সাবধান! মিস্টার শয়তান আমাদেরকে শিরকে খফী বা গোপন শিরকে নিয়োজিত করছে না তো??? যদি উত্তর আসে “না” তাহলে আলহ্ামদুল্লিাহ। আর যদি আসে হ্যাঁ, তাহলে রবের কাছে তাওবা করি। নিয়তকে শুদ্ধ করি। হে আল্লাহ ! শুধু মাত্র আপনাকে সন্তুষ্টি করার জন্য আমাদের খুব সকালে পড়ি মরি করে বিদ্যালয় পানে ছুটে চলা। শিক্ষক সংস্করণ অনুসরণ করে উপকরণ ও পাঠটিকা নিয়ে পাঠদান করা, শিশুদের হাতের লেখা দেওয়া এবং যাচাই করা, ধারাবাহিক মূল্যায়ন, বাড়ির কাজ প্রদান, অধ্যায় শেষে পরীক্ষা নেওয়া, খাতা মূল্যায়ন করে ভুল করা জায়গায় সংশোধন করে দেওয়া এবং শেষে অভিভাবকগণকে অবহিত করা। শুধু মাত্র আপনার সন্তুষ্টির জন্য আমাদের প্রতিদিনের প্রাণান্তকর এই প্রচেষ্টা।

লেখক: সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার, খুলনা সদর, খুলনা।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version