শিশুরা বিদ্যালয়ে আসে ভবিষ্যতের ভিত্তিকে মজবুত করার জন্য। শিক্ষকগণ তাদেরকে আগামীর জন্য গড়ে তোলেন। ভবিষ্যতের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কারিকুলাম প্রণীত হয়েছে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগের প্রধান চালিকাশক্তি হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। সঙ্গতকারণেই অন্যান্য বিষয় থেকে বিজ্ঞানকে আলাদা করে গুরুত্বদেওয়ার সময় এসেছে।
অধিকাংশ বিজ্ঞানের শিখন শেখানো কার্যাবলী চলছে গতানুগতিক। এভাবে চলতে থাকলে ধীরে ধীরে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ শূন্যের কোটায় চলে আসবে। তাই শিশুদের মাঝে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার দায়িত্ব শিক্ষকগণকে নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে হবে। প্রতিটি পাঠের শিখনফল কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সেটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে যথেষ্ট পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। বিজ্ঞান শিক্ষকগণ যে কাজগুলো করতে পারেন সেটা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাকঃ
শিশুদেরকে চিন্তা করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। যেকোনো বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেই ছেড়ে দিলে হবেনা। বিষয়বস্তুর গভীরে যাতে শিশুরা প্রবেশ করতে পারে সে বিষয়ে শিক্ষককে পদক্ষেপ নিতে হবে। কঠিন বিষয়বস্তুর গভীরে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন কাজ প্রদান করা যেতে পারে। সমস্যা সমাধানে শিশুদের উৎসাহ দিতে হবে, প্রয়োজনে সহায়তা করতে হবে তাদের আগ্রহ ধরে রাখার জন্য। জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয়গুলোর সাহায্য নিয়ে শিশুর ধারণা পরিস্কার করতে হবে।
শিশুদের মধ্যে প্রেষণা সৃষ্টি করতে হবে। প্রতিটি পাঠের শিখনফল প্রতিটি শিশুর নিশ্চিত না করে পরবর্তী পাঠে প্রবেশ করা যাবেনা। তবে একটি ক্লাসে যদি ৫/৬ জন অগ্রগামী শিশু থাকে তাহলে তাদেরকে আরো এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের উপযোগী শ্রেণির কাজ প্রস্তুত করে রাখতে হবে। একজন সৃজনশীল বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষকের পক্ষেই সম্ভব একজন শিক্ষার্থীকে সৃজনশীল ও বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলা। তাই, শিক্ষকগণকে আগে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।
শিক্ষকগণের প্রস্তুতিটা এমন হতে পারে যিনি ৩য় শ্রেণির ক্লাস নেন তিনি এই শ্রেণির বিজ্ঞান বইটি নিয়ে অধ্যায়ভিত্তিক বিষয়বস্তু এবং এই বিষয়বস্তুকে প্রাণবন্তভাবে উপস্থাপন এবং দলীয় কাজ করানোর জন্য যে উপকরণ প্রয়োজন তা শিশুদের সহায়তায় পূর্বেই প্রস্তুত করে রাখা। উদাহরণস্বরুপ-৫ম শ্রেণির প্রথম অধ্যায়ে আমাদের পরিবেশ পাঠ উপস্থাপনে শিশুদের পূর্বজ্ঞান যাচাই করার সময় ছোট ছোট প্রশ্নের মাধ্যমে সকল শিশুকে পাঠে সক্রিয় অংশগ্রহণ করানো সম্ভব।
শিক্ষক শিশুদের বিজ্ঞানমনস্ক ও কৌতূহলী করতে শিশুদের শ্রেণিকক্ষের বাহিরে নিয়ে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করাতে পারেন। এর মাধ্যমে পাঠে নতুনত্ব আসবে। বাস্তবতার সাথে সম্পৃক্ত করায় পাঠের শিখনফল নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি শিখনফল স্থায়ী হবে। শিশুরা বিজ্ঞানে আগ্রহী হবে, হবে বিজ্ঞান মুখী। ছোট বেলা থেকে বিভিন্ন প্রকার চারাগাছের সাথে শিশুদের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। সেই গাছকে যদি পাঠদানের উপকরণ হিসাবে শিক্ষক বেছে নেন তাহলে শিশুর চেয়ে বেশি খুশি আর কে হতে পারে?
উদ্ভিদের খাদ্য তৈরি, দেহের বিভিন্ন অঙ্গ বা অংশ বিষয়ক পাঠদানে শিশুদের যদি সরাসরি বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় ফুল বাগানে থাকা চারাগাছের নিকটে নিয়ে গাছের পাতায় হাত দিয়ে বলা হয় এটা পাতা, এর নিচের দিকটা দেখো, এখানে রয়েছে ছোট ছোট ছিদ্র যাদের বলা হয় পত্ররন্ধ্র। এর মাধ্যমে উদ্ভিদ পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে পাশাপাশি পরিবেশকে উপহারস্বরুপ অক্সিজেন দেয় সেই অক্সিজেন নিয়ে প্রাণীরা বেঁচে থাকে। যদি গাছের মূল দেখিয়ে বলা হয় এই হলো গাছের মূল যার মাধ্যমে মাটি থেকে পানি গ্রহণ করে। এই পানি, সূর্যের আলো এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের সাহায্যে উদ্ভিদ পাতায় খাদ্য তৈরি করে। উদ্ভিদের বেঁচে থাকা এবং বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি নিজের তৈরি খাদ্য থেকেই পেয়ে থাকে।
তাহলে এই শিখন -শিখানো কার্যাবলী শিশুকে ভবিষ্যতে বিজ্ঞানী হওয়ার বীজ বপন করবে। শিশুদের পারগতার স্তর অনুযায়ী প্রত্যেক শিশুর জন্য উপযুক্ত পৃথক পরিকল্পনা গ্রহণ করে, শিক্ষকগণ তা শিখন- শেখানো কাজে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন। তাহলে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার উপযুক্ত মানব সম্পদ সৃষ্টি হবে।
লেখক: সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার, খুলনা সদর, খুলনা।