Site icon suprovatsatkhira.com

কয়রার জেলে পরিবারের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে

মো. রউফ, কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি : ‘এলাকায় নেই কোন কর্মসংস্থান টানা ৩টি মাস বাড়িতে অবস্থান করে অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করেছি। হাতের নাগালে ১ খানা মাছ ধরার পারমিট পেয়ে কত যে আনন্দ লাগছে তা কি করে বোঝাবো’। কথাগুলো বলছিলেন কয়রা উপজেলার ৪নং কয়রা গ্রামের মৎস্যজীবী আঃ মান্নান মল্লিক। শুধু মান্নান মল্লিক নয় এ ধরনের মন্তব্য অনেক জেলে পরিবারে সদস্যদের। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় দীর্ঘ তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার (০১ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি। এরই মধ্যে উপক‚ল জুড়ে সুন্দরবন কেন্দ্রিক কর্মজীবীদের মাঝে বেড়েছে সকল ধরনের কর্মচঞ্চলতা। ফলে সুন্দরবনের উপক‚লীয় উপজেলা কয়রায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন বনজীবী জেলেরা। বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় বন বিভাগ থেকে জেলেদের মধ্যে মাছ ধরার অনুমতির ‘পাস-পারমিট’ বিতরণ করলে আনন্দ প্রকাশ করেন উপস্থিত সকল জেলেরা। দীর্ঘ ৯২ দিন অলস সময় কাটানোর পর বিনা বাধায় মাছ ধরতে সুন্দরবনের পথে রওনা দিয়েছেন কয়রা উপজেলার সহ¯্রাধিক জেলে।

মাছ ধরা যেন তাদের কাছে উৎসবে পরিণত হয়েছে। যেটি চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিমধ্যে নৌকা-ট্রলারের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে অভাব-অনটনে পড়ে থাকা বনজীবীরা কষ্ট ভুলে আবারও নতুন উদ্যমে রুজির সন্ধানে ফিরছেন সুন্দরবনে। টানা তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকার পর বনজীবী ও পর্যটকদের জন্যে উন্মুক্ত হয়েছে সুন্দরবন। এতে স্বস্তি ফিরেছে এ সমস্ত পেশায় যুক্ত থাকা সাধারণ মানুষের। বৃহস্পতিবার সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনে ভোর থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র গ্রহণে জেলে ও ট্রলার মালিকদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। কয়রার মঠবাড়ী বনজীবী আঃ রশিদ বলেন, দীর্ঘ তিন মাস সুন্দরবন বন্ধ থাকার কারণে খেয়ে না খেয়ে ঋণে জর্জরিত হয়ে গেছি। সুন্দরবন খুলে দিয়েছে। এখন অভাব অনটন কিছুটা হলেও কমবে। ৫নং কয়রা গ্রামের জেলে খানজাহান আলী হাওলাদার বলেন, সবার আগে পাস নিতে এসেছি। দীর্ঘ তিন মাস সুন্দরবন বন্ধ ছিল। অনুমতি নিয়ে আগে যেতে পারলে বেশি মাছ পাব এ জন্য আগে এসেছি।

কয়রা উপজেলা সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. আমিনুল হক বলেন, কয়রায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ১৩ হাজার ৫শ’ ২৬ জন। তবে সবাই বনজীবী জেলে নয়। এ ছাড়াও নতুন জেলেদের নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কয়রার সুন্দরবন থেকে আহরিত মৎস্য স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি হয় দেশ-বিদেশেও। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কয়রা উপজেলার বানিয়াখালী, কাশিয়াবাদ ও কোবাদক স্টেশনসহ খুলনা রেঞ্জের আওতায় ২ হাজার ৯শ’টি নৌকার বিএলসি (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) রয়েছে। গতকাল কয়রার তিনটি স্টেশন থেকে ১ হাজারের বেশি পারমিটধারী নৌকা বনে প্রবেশ করেছে। আগামী সোমবারের মধ্যে বিএলসিধারী বাকি নৌকাও বনে প্রবেশ করবেন। তখন পুরো গোনমুখ চলে আসবে। সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘ ৩ মাস পর আবারও সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এতে করে আবার কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসবে এই এলাকার মানুষের মাঝে। জেলেদের সমস্যা দূর হবে। প্রথম দিনে কয়রা উপজেলার তিনটি স্টেশন থেকে প্রায় ১ হাজারের বেশি পারমিটধারী নৌকায় ২ হাজার কিংবা তার আরও বেশি জেলে সুন্দরবনে প্রবেশ করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version