Site icon suprovatsatkhira.com

সাতক্ষীরাসহ সারাদেশে সবজি সংরক্ষণের জন্য বিশেষ কোল্ডস্টোরেজ তৈরি করা হবে-কলারোয়ায় মাঠ দিবসে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব সায়েদুল ইসলাম

ফারুক হোসাইন রাজ, কলারোয়া: সারা বাংলাদেশের যে সকল জায়গায় অনেক সবজি হয় অনেক ফল হয় সেগুলোর যখন উৎপাদন বেশি হয় তখন বাজারে দাম পাওয়া যায় না তখন স্টোরেজে জায়গা থাকে না এসময় অনেক সবজি নষ্ট হয়ে যায়। আবার প্রতিটি সবজি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রা এ বিষয়টা অত্যন্ত জটিল। ঝড় বৃষ্টির মধ্যে দেশের কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণাগারের অভাবে বিপাকে পড়ে। বাংলাদেশে টমেটোসহ সকল সবজি যাতে সংরক্ষণ করে রাখা যায় এ জন্য আমারা উদ্যোগ নিয়েছি। সরকার ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় সাতক্ষীরাসহ সারা দেশে অনেক কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ করা হবে। সাতক্ষীরা অঞ্চলের এসকল গ্রীষ্মকালীন টমেটো যদি কোল্ডস্টোরেজ করে রাখা যায় তাহলে ভারত থেকে এলডি টমেটো বাংলাদেশে প্রবেশ করবে না এমনকি তার প্রয়োজন হবে না। বাংলাদেশ অন্য দেশেও রপ্তানি করতে পারবে। শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরার কলারোয়ায় মাঠ দিবসে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব সায়েদুল ইসলাম কৃষকদের সামনে এসব কথা বলেন।

শুক্রবার দুপুরে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের বাঁটরা গ্রামের সম্ভাবনাময় বারি -৮ জাতের গ্রীষ্মকালীন টমাটো ক্ষেত পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট আয়োজিত এক মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে অন্যান্নদের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী পরিচালক অতিরিক্ত সচিব ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কতৃপক্ষ সাবিনা পারভিন। এ সময় তিনি কৃষকদের আশ্বস্ত করে আরও বলেন, পদ্মাসেতু হয়ে গেছে এখন সাতক্ষীরা ঘেকে সরাসরি ঢাকায় টমেটো যাচ্ছে এখন আর কোথাও বাঁধা নেই এতে মধ্যসত্ব ভোগী হ্রাস পাচ্ছে কৃষক দামটাও ভালো পাচ্ছে এটা একটা মাইলফলক । করোনার পরে এখন রাশিয়ার ইউরোপের যুদ্ধে জ্বালানির দাম বাড়লেও কৃষি বান্ধব সরকার সারে ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকী দিচ্ছে তবুও সারে দাম বাড়াচ্ছে না।

দেশে সারের কেনরকম সংকট নেই পর্যাপ্ত সার মজুদ আছে কেউ যদি সারের দাম বেশি নিয়ে কৃষককে ক্ষতি করার চেষ্টা করে আমরা বরদাস্ত করবো না এমন ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে প্রশাসন ও কৃষি বিভাগকে জানানোর আহ্বান করেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকারের সভাপতিত্বে এ মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআরআই গাজীপুর পরিচালক পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন ড. অপূর্ব কান্তি চৌধুরী, বিআরআই এর সরেজমিন গবেষণা বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: মাজহারুল আনোয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ ফজলুল হক, সাতক্ষীরা উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো: জামাল উদ্দীন, সরেজমিন গবেষণা বিভাগের খুলনা প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: হারুনর রশিদ, কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও রুলী বিশ্বাস, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম, জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিশান হোসেন প্রমূখ।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ সাতক্ষীরার কলারোয়া অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিঘা প্রতি ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকা উৎপাদন খরচ হয়। খরচ বাদে সবশেষে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা লাভ করা সম্ভব। যা একই সময় আমন ধানের তুলনায় অধিক লাভজনক। গত ২০২০-২১ খরিপ মৌসুমের সাতক্ষীরা জেলায় মোট ৮৪ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো আবাদ হয়। যেখানে গড় ফলন ছিল হেক্টর প্রতি ৩৮ থেকে ৪০ টন। চলতি ২০২১-২২ খরিপ মৌসুমী সাতক্ষীরা জেলায় মোট ৯৫.১ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো আবাদ হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় ১৩.২ % বেশি। গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ সারা দেশে সমপ্রসারণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে আজ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত হাইব্রিড টমেটো ৪ , ৮ ও ১১ জাতের উপর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়।

টমেটো চাষি আব্দুল আলিম বলেন, পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে বাংলাদেশে এলসি টমেটো বাংলাদেশে আমদানি বাড়ছে যে কারনে আমাদের উৎপাদিত টমেটোর মূল্য হ্রাস পেয়েছে প্রতি কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা । যখন এলসি টমেটো বাংলাদেশে আসেনি তখন আমরা প্রতি কেজি টমেটো ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারতাম। এখন বাজার পাচ্ছি কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এলসি টমেটো বন্ধ করতে না পারলে এ অঞ্চলের টমেটো চাষিরা লাভের থেকেও ক্ষতির সম্মুখীন হবে অনেক বেশি । এ জন্য সরকারসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেন যাতে ভারত থেকে আসা এলসি টমেটো বন্ধ হয়।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version