নিজস্ব প্রতিনিধি: ফেসবুকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের পুইজালা গ্রামের মিহির কান্তি বাছাড় ইসলাম ধর্ম ও মহানবী সম্পর্কে আপত্তিকর পোষ্ট দিয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার পর আতংকে এলাকার ২৩ টি হিন্দু পরিবার। গত শুক্রকার বিকালে তাকে থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি শ্রীউলা গ্রামের মুকুল হোসেনের সামনে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী সম্পর্কে কটুক্তি করেছেন এমন অভিযোগে দায়েরকৃত মামলা দিয়ে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। গত শুক্রবার বিকেলে তাকে শাস্তির দাবিতে শ্রীউলা বাজারে মানববন্ধনও হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার মিহির কান্তি বাছাড় ও তাদের পাড়ায় হিন্দুদের উপর হামলার আশঙ্কায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এরপরও ওই এলাকার হিন্দু স¤প্রদায়ের চোখে মুখে রয়েছে আতঙ্কের ছাপ।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের পুইজালা মাঝেরপাড়ায় যেয়ে দেখা গেছে গ্রাম পুলিশ পলাশের বাড়ির সামনে একজন সহকারি উপপুলিশ পরিদর্শকের নেতৃত্বে দুইজন সিপাহী ও গ্রাম পুলিশ প্রসাদ বৈরাগী অবস্থান করছেন। জানতে চাইলে তারা জানান, পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে তারা সর্বোচ্চ এলার্ট রয়েছেন।
জেল হাজতে থাকা মিহির কান্তি বাছাড়ের বাড়িতে যেয়ে দেখা গেছে তার বাবা গুরুদাস বাছাড়, মা শিখা রানী বাছাড়, বোন সুচিত্রা বাছাড়, কাকা কেনারাম বাছাড়, কাকিমা উর্মিলা বাছাড় ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। পরিচয় জানালে তারা একে একে বের হয়ে আসেন। তারা জানান, মিহিরের বিরুদ্ধে যিনি বাদি হয়ে মামলা করেছেন তার অভিযোগ সত্য নয়। এমনকি ফেসবুকে যে ধর্ম অবমাননার বিষয়টি প্রচার হয়েছে সেটা আদৌ সত্য কিনা তা পুলিশ যেন যাচাই করে দেখে। ফেসবুকে মিহির অন্য ধর্ম সর্ম্পকে ধর্ম অবমাননা করলে তার শাস্তি হোক। কিন্তু সে যেনো কোন অন্যায় প্রতিহিংসার শিকার না হয় সেজন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তবে তাদের উপর শুক্রবার হামলার আশঙ্কায় পুলিশ যথারীতি শান্তি রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য তারা পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। পাশের বাড়ির স্বপন বাছাড়, বিধান বাছাড়, পরিতোষ মÐলসহ কয়েকজন জানান, ঘটনার সত্যতা সাপেক্ষে মিহিরের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা হোক সেটা চান তারাও। সত্যতা না পেলে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়।
এ সময় পুলিশের সঙ্গে কথা বলার সময় শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান দীপঙ্কর বাছাড় দীপু জানান, পুলিশ সত্যতা যাচাই করে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন এটা তিনি চান। তবে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি বজায় রাখার জন্য তিনি ইউনিয়নের সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
পুইজালা গ্রামের নজরুল সানা ও শওকত মোড়ল জানান, তারা কোনপ্রকার অশান্তি তারা চান না। ফেসবুকে যেই ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কটুক্তি করুক না কেন তদন্তে তার শাস্তি হোক। তবে ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম সরদার বলেন, স্পর্শকাতর বিষয়। সে সময় তিনি ঢাকায় ছিলেন।
আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোমিনুল হক জানান, সামনে দুর্গাপুজা। মিহিরের বিষয়টি তদন্ত চলছে। এটাকে ঘিরে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য তারা সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন।