নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের নলতা গ্রামে আশ্রয়ন প্রকল্পের উপকারভোগী গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তালা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোঃ মফিজুর রহমান উক্ত প্রকল্পের ঠিকাদারের সাথে যোগসাজস করে অনিয়ম এবং দূর্নীতি করছেন বলে অভিযোগে বলা হয়ছে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের কল্যাণে দেয়া প্রকল্পে অনিয়ম এবং দূর্ণীতির কারনে একদিনে গরীব মানুষরা একদিকে উপকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে অপরদিকে পানির চাঁপে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ভেঙ্গে পড়বে বলে আশংকা করেছে এলাকার সচেতন মানুষ।
খলিলনগর ইউনিয়নের নলতা গ্রামে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে সরকার আশ্রয়ন প্রকল্পের অধিন এখানে ৪২টি অসহায় এবং দরিদ্র ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য বসত ঘর নির্মান করেছে। এই বসতঘর পাওয়া উপকারভোগী পরিবারগুলোর জন্য সুপেয় পানি সরবারহ করার জন্য রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্রকল্প গ্রহন করেছে। এই প্রকল্প উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধিন টেন্ডারের মাধ্যমে সাতক্ষীরার সোনা সাহেব বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু ঠিকাদারের সাথে যোগসাজস করে ঠিকাদারের পরিবর্তে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোঃ মফিজুর রহমান গোপনে নিজেই সাব ঠিকাদার হয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এলাকাবাসী জানান, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং বাস্তবায়নের জন্য পানির ট্যাংক এর নিচে ১নং ইট দিয়ে প্লাটফর্ম তৈরি করার কথা থাকলেও অধিকাংশ ইট ২নং এবং সিমেন্ট পরিমানে অনেক কম ও নি¤œ মানের চিকন দানার স্থানীয় বালি দেয়া হয়েছে। এছাড়া, প্লাটফর্ম এর নিচে অতিরিক্ত বালি ভরাট এবং বেজ ঢালাই না থাকার ফলে ৩ হাজার লিটার ধারন ক্ষমতার পানির ট্যাংকের চাঁপে প্লাটফর্ম যেকোনও সময়ে ধ্বসে পড়তে পারে।
প্লাটফর্ম নির্মান মিস্ত্রী মোঃ নুর ইসলাম বলেন, এখানে ৪২ টি এবং খলিলনগর বাজারে ৫টি মিলিয়ে ৪৭টি প্লাটফর্ম তৈরির করতে শ্যামনগরে আনিচ নামের এক সর্দারের সাথে চুক্তি হয়েছে। প্লাটফরম প্রতি তাদের ১ হাজার টাকা করে দেয়া হবে এবং কিছু কিছু ইট ২নং দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। স্থানীয় এক রাজমিস্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দূর্নীতি ও অনিয়মের মধ্যে তড়িঘড়ি করে প্লাটফর্ম তৈরির পর উপর প্লাস্টার এবং ড্যাডো দ্রæত সম্পন্ন করা হয়েছে। প্লাস্টার ও ড্যাডোর মান অপেক্ষাকৃত ভাল করায় প্লাটফর্মের ভিতরে কি ধরনের অনিয়ম হয়েছে তা বাইরে থেকে বোঝা যাবেনা। দূর্নীতি এবং অনিয়মের বিষয়টি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকি কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। তারপরও দূর্নীতি এবং অনিয়ম বন্ধ হয়নি। এব্যপারে জানতে চাইলে তালা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোঃ মফিজুর রহমান বলেন, অভিযোগ আসার পর সরজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে এবং সেখানে ২/৫টি ছাড়া কোনো ২নং ইট পাওয়া যায়নি। সঠিক ভাবে কাজ সম্পন্ন হয়েছে দাবী করে তিনি আরো বলেন, আমি ঠিকাদারের কাজের সাথে কোনো ভাবে জড়িত না। আমি ঠিক ভাবে কাজ দেখে নিচ্ছি এবং দূর্ণীতি বা অনিয়মের কোনও সুযোগ দেয়া হবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তালা সদরের এক ঠিকাদার বলেন, দীর্ঘ ৪ বছরের বেশি সময় ধরে মোঃ মফিজুর রহমান তালা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে দায়িত্বরত থাকায় তিনি ব্যপক লুটপাট চালাচ্ছেন।
গভীর নলকূপ স্থাপনে দূর্নীতি সহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশ বøকের প্রকল্প বাস্তবায়নে দূর্ণীতি করায় ইতোমধ্যে পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে সংবাদ ছাপা হয়। তিনি খলিশখালী ইউনিয়নে আশ্রয়ন প্রকল্পের রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্রকল্প বাস্তবায়নে সাব ঠিকাদার হয়ে দূর্ণীতির মাধ্যমে কাজ করেন। খলিলনগরেও একইভাবে দূনীতি ও অনিয়ম করেছেন। তিনি বিষয়টির তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট দাবী জানান। এবিষয়ে জানতে চাইলে তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, অনিয়মের বিষয়ে এলাকার লোকজন আমার কাছে ফোন করেছিল। তবে সেখানে সিডিউল অনুযায়ী কাজ হয়েছে বলে আমি জেনেছি। তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান, অভিযোগ পাবার পর সেখানে পরিদর্শন করে ইট ও সিমেন্ট পরীক্ষা করা হয়।