Site icon suprovatsatkhira.com

অবৈধ পথে সাতক্ষীরায় নিয়ে এসে ধর্মান্তরিত করা ভারতীয় হিন্দু নারীকে পুলিশ কথিত শাশুড়ির জিম্মায় দেওয়া নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনের উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রচলিত আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ফুসলিয়ে অবৈধ পথে সাতক্ষীরায় নিয়ে এসে ধর্মান্তরিত করা ভারতীয় হিন্দু নারীকে পুলিশ কথিত শাশুড়ির জিম্মায় দেওয়ায় মানবাধিকার সংগঠণের কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার রাত টার দিকে খুলনার পাইকগাছা থানার বাকা গ্রামের তাজুল ইসলামের বাড়ি থেকে ওই নারী ও তার কথিত স্বামীকে উদ্ধার করা হয়। বুধবার বিকেল সাড়ে ৬টায় ওই মেয়েকে জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে থানা থেকে কথিত স্বামী ইব্রাহীম হোসেনের মা রুবিনা বেগম, মামা ফারুক হোসেন ও আবু তাহেরের জিম্মায় দেওয়া হয়।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুরের টিটাগড় থানাধীন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বিনয় কৃষ্ণ ঘোষ জানান, তার একমাত্র সন্তান ইংলিশে মাস্টার্স বহ্নিশিখা ঘোষের সঙ্গে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার জালালপুর ইউনিয়নের জেঠুয়া বাজারের বাসিন্দা রেজাউল আকুঞ্জির ছেলে ইব্রাহীম হোসেনের ফেইস বুকে পরিচয় হয় তিন বছর আগে। ইব্রাহীন হোসেন মুন্না আকুঞ্জি নামে ফেক আইডি খুলে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে মুন্না আকুঞ্জি হিসেবে ফেইসবুকে ব্যবহার করে। নিজের শারীরিক গঠণ, গায়ের রং পরিবর্তণ করে সে বহ্নিশিখার কাছে উপস্থাপন করে। মা একজন গরুর হাটের সপ্তাহে দুই দিনের বস্তিতে ক্ষুদ্র হোটেল পরিচালনা করলেও নিজে একজন ভবঘুরে যুবক ছিল ইব্রাহীম হোসেন।

বিনয় কৃষ্ণ ঘোষ আরো জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ি চলতি বছরের ২৮ মার্চ বনগার পেট্রোপোল বন্দর দিয়ে তার মেয়ে বাংলাদেশের বেনাপোলে যায়। সেখানে আগে থেকে মাইক্রোবাস নিয়ে অপেক্ষা করা ইব্রাহীম হোসেন ওরফে মুন্না, তার মামা ফারুক হোসেন, জেঠুয়া বাজারের গ্রাম ডাক্তার খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দিয়াড়া গ্রামের উত্তম কুমার দেসহ কয়েকজন বহ্নিশিখাকে মাইক্রোবাসে তুলে সাতক্ষীরার একটি অজ্হাতস্থানে নিয়ে ধর্মান্তরিত হওয়া সংক্রান্ত একটি এফিডেফিডে সাক্ষর করানো হয়। পরে তাকেতালার জালালপুরের যুবলীগ নেতা মিঠুর বাড়ির পাশে একটি ভাড়া বাসায় স্বামী স্ত্রী হিসেবে ইব্রাহীস হোসেনের সঙ্গে থাকতে বাধ্য করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি তার আত্মীয় তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমারকে অবহিত করেন। এরপরপরই টেলিভিশনের সাংবাদিক পরিচয়ে ওই এলাকার শাহীন গোলদার তার সঙ্গে কয়েকবার কথা বলেন। ০১৩০৪-৩০৫০১৫ ও ০৯৬৩৮৩৪৪৭৯৭ নম্বর থেকে মেয়ের সঙ্গে তার কথা বলিয়ে দিতো ইব্রাহীম। ফোনে তারা ঢাকায় অবস্তান করতো বলে জারাতো। মেয়ের কাছে থাকা ছয় ভরি ওজনের সোনার গহনা জেঠুয়া বাজারের জুয়েলারী ব্যবসায়ি কৃষ্ণপদ এর কাছে বিক্রি করে কানে ইমিটেশন পরিয়ে রাখা হতো। তালা উপজেলা চেয়ারম্যান এর ভূমিকার কারণে বহ্নিশিখাকে গত ৯মে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ইমিটেশনের দুল পরিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়। এরপর থেকে মেয়ে তার বাড়িতে ছিল।

গত ২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে আগে থেকে রাস্তায় অবস্থান নেওয়া ইব্রাহীম, তার মা রুবিনা খাতুন, মামা ফারুক হোসেন ও ডাঃ উত্তম কুমার দেসহ কয়েকজন কৌশলে তাকে অবৈধ পথে সাতক্ষীরায় নিয়ে আসে। বিকেলে মেয়ে বাড়িতে না আসায় ও মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় টিটাগড় থানায় ৩ জুলাই ১৬৮ নং মিসিং জিডি করেন তিনি। পরে তিনি বিষয়টি তার আত্মীয় সাতক্ষীরা শহরের পাকাপোল এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ি জিতেন্দ্রনাথ ঘোষকে অবহিত করনে। অবহিত করা হয় সাতক্ষীরার এক মানবাধিকার কর্মীকে। বিষয়টি তিনি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক চন্দ্র দাসকে লিখিতভাবে অবহিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশে অবস্থানকারি ভারতীয় হাই কমিশানারকে অবহিত করেন। একপর্যায়ে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার বাকা গ্রাম থেকে মঙ্গলবার রাতে বহ্নিশিখা ও ইব্রাহীমকে আটকের বিষয়টি তাকে নিশ্চিত করেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার। বহ্নিশিখাকে জিম্মায় নেওয়ার জন্য জিতেন্দ্রনাথ ঘোষ ও এক মানবাধিকার কর্মী বুধবার দুপুরে তালা থানায় গেলে তাদেরকে চেনে না বলে জানিয়ে দেয় বহ্নিশিখা। তবে অবৈধ পথে ভারতে যাওয়া বহ্নিশিখাকে ও তাকে সম্পূর্ণ আইন বহির্ভুতভাবে এফিডেফিডের মাধ্যমে বিয়ের নামে পালিয়ে থেকে স্বামী স্ত্রীর পরিচয়ে একত্র বসবাসকারি ইব্রাহীম হোসেনকে আইনে সোপর্দ না করে স্থানীয় জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মফিদুল হক লিটুকে সাক্ষী রেখে ইব্রাহীমের মা রুবিনা খাতুন, মামা ফারুক হোসেন ও আবু তাহেরের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। ব্যাপারে পুলিশ যে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সেটা আরো বেশি আইন বহির্ভুত বলে মনে করেন তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বুধবার দুপুরে তালা থানায় অবস্থানরত ইব্রাহীম হোসেন বলেন, তারা ভারতে বহ্নিশিখাকে আনতে যাননি। চোরাইপথে বেনাপোল দিয়ে আসার পর তাকে নিয়ে স্বামী স্ত্রী হিসেবে দিনপার করছেন। তবে পুলিশের ভয়ে তিনি গত ২ জুলাই থেকে তালা, পাইকগাছা ও আশাশুনির বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেছেন। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে পুলিশ তাদরেকে পাইকগাছার বাকা গ্রামের তাজুল ইসলামের ভাড়া বাসা থেকে আটক করে তালা থানায় নিয়ে আসে।
শুক্রবার সকালে বহ্নিশিখা জানায়, সে অবৈধ পথে বেনাপোল এলাকার একটি স্থান দিয়ে ইব্রাহীম এর সাথে সাতক্ষীরায় এসেছে গত ২ জুলাই সন্ধ্যার পর। বুধবার তাকে স্বামীর জিম্মায় দেওয়ার পর জেঠৃুয়া বাজারে অবস্থান করছেন।

জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু বলেন, বহ্নিশিখা ঘোষ ওরফে ফারজানা ইয়াসমিনকে ইব্রাহীম হোসেন ওরফে মুন্না আকুঞ্জির মা রুবিনা বেগম, মামা ফারুক হোসেন ও আবু তাহেরের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। জিম্মা নেওয়ার কাগজে পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ তাকে সাক্ষী হিসেবে সাক্ষর করে নিয়েছেন।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. মোসলেম জানান, মেয়েটি অবৈধ পথে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে থাকলে আইন অনুযায়ি পুলিশ তাকে আটক করে ৪বর্ডার কন্ট্রোল এ্যক্ট এ মামলা দিয়ে আদালতের পাঠাতে পারেন। আদালতে সে দোষ স্বীকার করলে জেল অথবা জরিমানা দিয়ে সে মুক্তি পেতে পারে। তবে মুক্তির পর তাকে ভারতে পুস ব্যাক করার বিধান রয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠণ রাইটস যশোর এর নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মলি¬ক বলেন, ভারত থেকে চোরাই পথে নিয়ে আসা বহ্নিশিখাকে আটকের পর তাকে আইনে সোপর্দ না করে যেভাবে কথিত স্বামী ও শাশুড়ির জিম্মায় দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ বেআইনি। এর বিরুদ্ধে তিনি আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।
তালা থানার পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বহ্নিশিখা ওরফে ফারাজানা ইয়াসমিন তার বাড়িতে যেতে না চাওয়ায় বুধবার বিকেলে সাড়ে ৬টায় জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটুর জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version