নিজস্ব প্রতিবেদক : শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি আবাদচন্ডীপুরে দীর্ঘ ৬০ বছরের ভোগ দখলীয় জমি থেকে উচ্ছেদের পায়তারার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ওই জমিতে আদালতে মামলা চলমান থাকাকালীন তা অন্যত্র বিক্রয় করা হয়েছে। ভুক্তভোগী আবাদচন্ডীপুর গ্রামের অভিমান্য মন্ডলের পুত্র উপনন্দ মন্ডল জানান, আমার পূর্বপুরুষরা এস.এ খতিয়ানের মালিক ৬ জন। তাদের মধ্যে শুক চরণ মন্ডল, নীল মণি মন্ডল, শিশুবর মন্ডল, হরমোহন মন্ডল, প্রিয় নাথ মন্ডল, ক্ষীরধর মন্ডল। একই গ্রামের তারাপদ মন্ডল, অভিমন্ন মন্ডল, কর্ণধর মন্ডল, মনিন্দ্র মন্ডলের নিকট থেকে ১৯৬২ ও ১৯৬৩ সালে ৪৯১, ৪৯২, ৮৮৪ নং দলিলে ১৯৭২ সালে ৫৪৮৪ নং দলিলে ইং ১৭/০৯/১৯৭২ তারিখে বিনিময় সূত্রে প্রাপ্ত হয়ে ভোগ দখল করে আসছেন। তৎকালীন সময় থেকে ১৪২৮ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত অত্র জমির সরকারি খাজনা পরিশোধ করা হয়েছে। যার নামজারিও অভিযোগকারীদের নামে আছে। নামজারি নং-১০০৫৮৩। ৩৭৩ নং খতিয়ানে সাবেক ৮৫৮ দাগে যে জমিটি নিয়ে দেওয়ানী কোর্টে মামলা চলছে যার মামলা নং-৪৮/১৯, বাদী-রাধা পদ মন্ডল।
উক্ত জমিটিতে সেটেলমেন্ট অফিসে মামলা নং-৩৭৩৪৭/১১। মামলার বাদী চারজন থাকলেও ২ জনের নামে উক্ত জমি রেকর্ড হয়। বাকী দুইজনের নামে রেকর্ড হয়নি। মামলা করার পর উক্ত জমি আমাদের দখলে আছে। কিন্তু মনিন্দ্র মন্ডল, রাধাপদ মন্ডল ১একর ৫২ শতক জমি তাদের নামে রেকর্ড না হওয়ায় এ মামলাটি করেন। উক্ত জমি কেরর্ড হয় নিতাই মন্ডল, গোষ্ঠ মন্ডলের নামে। এই রেকর্ড পাওয়ার পর দখলে চলে আসে তারা। এঘটনায় ভুক্তভোগী রাধাপদ মন্ডল বাদী হয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য এস.এম জগলুল হায়ধার বরাবর ১৭/০৬/২০১৯ ইং তারিখে একটি অভিযোগ করলে স্থানীয় শালিসে বিবাদীদেরকে জমি থেকে সরে যেতে বলেন এবং ভুক্তভোগীরা জমিতে দখলে যায়। উক্ত সময় থেকে দখলে থাকার পর গত ০৬/০২/২০২২ ইং তারিখে শ্যামনগর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা আইয়ুব (ডলি) বিবাদীদের পক্ষে অতি উৎসাহী হয়ে গোবিন্দ মন্ডলকে দিয়ে একটি অভিযোগ করান বলে দাবি করেন তারা। সেই বিচারে বাদী পক্ষকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করতে থাকেন বলে অভিযোগ উঠলে ভুক্তভোগী শ্যামনগর উপজেলা চেয়ারম্যান এস.এম আতাউর রহমান দোলনের নিকট আরেকটি আবেদন করে যে, উক্ত জমিটি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে। বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান জানতে পেরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে বিচার কার্য স্থগিত রাখতে বলেন।
তিনি আরো বলেন, এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পরবর্তীতে এলাকায় স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলে এক পক্ষকে নিয়ে শালিস বসিয়ে জমি বিবাদীরা পাবে বলে একতরফা রায় দিয়ে চলে যান। পরদিন ভোরে বহিরাগত একাধিক লোকজন নিয়ে জমি ও ঘের দখল করে মাছ লুঠ করে নেয় বিবাদীপক্ষ। ভুক্তভোগীরা কোন উপায় না পেয়ে গত ১৯/০২/২০২২ ইং তারিখে বাদী হয়ে শ্যামনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বহিরাগতরা পালিয়ে যায় এবং ভুক্তভোগীরা আবার জমির দখল নিয়ে নেয়। এরপরও ভুক্তভোগীদের সায়েস্তা করতে বিবাদীপক্ষ গত ২৭/০৬/২০২২ ইং তারিখে ১০ (দশ) জনকে আসামী করে শ্যামনগর থানায় একটি মামলা দাখিল করেন। যার মামলা নং-৫৮। এদিকে ভুক্তভোগীরা থানায় মামলা দায়ের করতে না পেরে সাতক্ষীরা বিশেষ ট্রাইবুনাল আদালতে গত ২১/০৪/২০২২ ইং তারিখে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১১২২। কিন্তু বিবাদীদের মামলা দায়ের করার পর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও এলাকার কিছু সুবিধাভোগী লোক উক্ত ১ একর ৫২ শতক জমি শ্যামনগর উপজেলা বংশীপুর গ্রামে আকবর সরদারের পুত্র আব্দুল আহাদের নিকট রেজিষ্ট্রি মূলে বিক্রয় করেন।
যার দলিল নং-৩৮৫৩, তারিখ-০৩/০৭/২০২২ ইং। ভুক্তভোগীরা আরও জানায়, আমার পূর্বপুরুষেরা ১৯৬৯/৭০ সালে বিনিময় সূত্রে যার নং- ৬২৭/৬৯-৭০। এস.এ মালিক-হর মোহন মন্ডলসহ স্ত্রী ও দুই পুত্র লস্কর গংদের নিকট থেকে এই জমিটি বিনিময় হয়। যার কারণে এই জমিটি নিঃস্বত্ত¡ প্রমাণিত হয় বলে ভুক্তভোগীরা জানায়। ভুক্তভোগীর দাবি, যাতে ঐ এলাকায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে ও প্রকৃত জমির মালিকগণ জমিটিতে শান্তি শৃঙ্খলার সাথে ভোগ দখল করতে পারে সে জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান এস.এম আতাউল হক দোলন জানান, এ ব্যাপারে আমার কাছে একটি অভিযোগ এসেছিল সেটি আমি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের কাছে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। পরে জানতে পারি আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। সেজন্য আমি এই শালীশি বৈঠক বন্ধ করতে বলেছি। যেখানে আদালতে মামলা চলছে, আদালত যে রায় দেয় সেই রায় সকলকে মেনে নেওয়া উচিত। তবে আমি যতদূর জেনেছি এই জমিটির প্রকৃত মালিক অভিমান্য মন্ডল গংরাই। এ ব্যাপারে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, এ ব্যাপারে আমার কাছে ভুক্তভোগী মহলরা সঠিক বিচার পাবে এবং এলাকায় যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমি সব সময় সচেষ্ট থাকবো।