মীর খায়রুল আলম : স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামাল ও বঙ্গবন্ধুর শ্যালক শেখ ইয়াসিনসহ তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে নিরাপদে পার হতে আশ্রয় নিয়েছিল সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটার নাংলা গ্রামের মৃত. মাদার শেখের ছেলে ঘড়ি মোহাম্মাদের বাড়িতে। ঘড়ি মোহাম্মাদ ছিলেন তৎকালীন সময়ের নৌকার মাঝি ও নাংলা ছুটিপুর ঘাট নিয়ন্ত্রক। যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের ভারত-বাংলাদেশে পারাপার করতেন তিনি। সেই সূত্র ধরে শেখ পরিবারের অন্যতম সদস্য শেখ কামাল ও তার মামা শেখ ইয়াসিনসহ কয়েকজন আশ্রয় নেয় তাদের বাড়িতে। ঘটনার দিন শেখ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যান নাংলা গ্রামের ঘড়ি মোহাম্মাদের বাড়িতে। এদিকে, নৌকার মাঝির বাড়িতে ঐ সময় বাংলাদেশি নৌ-যাত্রীদের কে সেবা যতেœ নিয়োজিত থাকতেন ঘড়ি মোহাম্মাদের ছোট ভাই জোহর আলী।
তিনি জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যক্তিদের থাকা খাওয়াসহ নানা ধরনের সেবায় নিয়োজিত থাকতেন। ঘটনার দিন তারালি এলাকার কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বাড়িতে হাজির হয়। এসময় আগত অতিথিদের তাদের বাড়ির দলুজ ঘরে জায়গা করে দিয়ে গোসলের জন্য তেল, গামছা, লুঙ্গির ব্যবস্থা করেন। পরে পুকুর থেকে মাছ ধরে রান্না করে অতিথিদের আপ্যায়ন করেন। অতিথিরা খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যার পূর্ব সময়ে ভারতের বরুণহাট (শিরিষ্টি তলা) ঘাটের মাঝি মুনছুর মোড়লের নৌকায় তুলে দেয়। এসময় শেখ কামাল হাত নাড়িয়ে তাদের পরিচয় জানান আমার ভাই ঘড়ি মোহাম্মাদকে। ভাই বাড়িতে এসে বললে আমরা জানতে পারি তাদের পরিচয়। ঘড়ি মোহম্মদের স্ত্রী জানান, শেখ কামাল ও তার মামাসহ কয়েকজন আমাদের বাড়িতে আসলে তাদেরকে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ায়। তারা খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে বিকালে চলে যায়। যাওয়ার চারিদিকে খবর হয়ে যায়।
আমাদের তখন ভয় হতে শুরু করে না জানি খানেরা এসে বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেয়। তাই আমরা খুব আতঙ্কে থাকতাম। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কেউ কখনো আমাদের খবর নেয়নি। কিছু দিন আগে আমার স্বামীর খোঁজে আসে কয়েকজন লোক। শুনলাম শেখ কামালের ডায়েরিতে না কি আমার স্বামীরসহ আরো ৩ জনের নাম রয়েছে। তবে ঐ ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে পরিচিত হলেও আমার স্বামী কোন কিছুই পাননি। তবে আমার শেষ ইচ্ছা বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে মরণের আগে একবার দেখা করার। তাহলে মরেও শান্তি পাব। আর বেশি কিছু চাই না।