নিজস্ব প্রতিনিধি : গত ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরায় কলারোয়ায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের দু’টি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের ৭ম দিনে সোমবার সাক্ষ্য দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আবু আহমেদ ও কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য্য করা হয়েছে।
সোমবার সাতক্ষীরার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল -৩ এর বিচারক বিশ্বনাথ মÐলের আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। আদালতের কাঠগড়ায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৩৯ জন আসামী উপস্থিতি ছিলেন।
এদিকে গত ২৯ জুন আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামী হাবিবুল ইসলাম হাবিব রাষ্ট্রপক্ষের এটর্ণি জেনারেল এস এম মুনির ও তার পরিবারের সদস্যদের এজলাসে প্রকাশ্যে জীবনননাশের হুমকির ঘটনায় জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফের দায়েরকৃত ২০৩৯ নং সাধারণ ডায়েরীর আলোকে সৃষ্ট ননএফআইআর ১৫৩/২২ নং মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আশরাফ হোসেন, আরিফুর রহমান রঞ্জু, নজরুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, তামিম আজাদ মেরিন, রকিব মোল¬া, আক্তারুল ইসলাম, মোঃ আব্দুল মজিদ ও হাসান আলীকে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম জিয়ারুল ইসলামের আদালতে সোমবার দুপুর একটায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ জানান, অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের দু’টি মামলায় কারাগারে থাকা ৩৯ জন আসামীকে সোমবার সকাল ৯টায় জেলা কারাগার থেকে স্পেশাল টাইব্যুনাল-৩ এর কাঠগড়ায় হাজির করানো হয়। এ মামলার অপর নয়জন আসামী পলাতক রয়েছেন। সকাল ৯টা ১০ মিনিটে এ মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক আবু আহম্মেদ ও আমিনুল ইসলাম লাল্টু সাক্ষ্য দেন। দুপুর একটায় হাবিবসহ ১০ জনকে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করানো হয়। সেখানে তাদেরকে অতিরিক্ত এটর্ণি জেনারেল এসএম মুনিরকে গত ২৯ জুন এজলাসে হুমকির ঘটনায় সাধারণ ডায়েরীর তদন্ত শেষে সৃষ্ট ১৫৩/২২ নং ননএফআইআর মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে. অধ্যাপক আবু আহম্মেদকে জেরা করার পর কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু কাঠগোড়ায় হাজির হলে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুতেই আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ এসটিসি ২০৭/১৫ ও এসটিসি২০৮/১৫ দুটি মামলার সাক্ষীর কার্যক্রম একসঙ্গে চালানোর ব্যাপারে আপত্তি জানান। নবম সাক্ষী চলাকালে আসামীপক্ষের আইনজীবীরা কোন কথা বলেননি, অথচ ১০ম সাক্ষীর শুরুতেই একথা বলে মামলার বিচার কার্যক্রম দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে আসামীপক্ষের আইনজীবীর কথার তীব্র প্রতিবাদ জানান জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ। একপর্যায়ে আমিনুল ইসলাম লাল্টুর জেরা শেষে সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবের পক্ষে অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের পৃথক দুটি মামলার বিচার আইন বর্হিভুতসহ ১১টি আপত্তি তুলে ধরে তাকে মামলায় দায় হতে অব্যহতি দেওয়ার লিখিত আবেদন জানান। বিচারক বিশ্বনাথ মÐল আবেদন গ্রহণ করে পরে আদেশ দেবেন বলে সংশি¬ষ্ট আইনজীবীদের অবহিত করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন, সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ, জিপি অ্যাডভোকেট শম্ভুনাথ সিংহ, অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল বারি, অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট ফাহিমুল হক কিসলু , অ্যাডভোকেট শহীদুল ইসলামস পিন্টু, অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ, অ্যাড. হাবিব ফেরদৌস শিমুল, অ্যাডভোকেট সৈয়দ জিয়াউর রহমান,প্রমুখ।
অপরদিকে, আসামীপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট শাহানারা আক্তার বকুল, অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ (২), অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান পিন্টু, অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান ভুট্টো, অ্যাডভোকেট এবিএম সেলিম প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সকাল ১০টায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে যশোরে ফিরে যাওয়ার পথে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা কলারোয়ায় দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস (সাতক্ষীরা-জ-০৪-০০২৯) রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। হামলায় আওয়ামী লীগের ১২ জন নেতা-কর্মী আহত হন। এঘটনায় করা হামলা মামলায় ২০২১ সালের ৪ ফেব্রæয়ারি তালা-কলারোয়ার বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জন নেতা-কর্মীকে চার থেকে ১০ বছর মেয়াদে সাজা প্রদান করেন সাতক্ষীরার মুখ্য ব্চিারিক হাকিম হুমায়ুন কবির। মুল মামলার তিনটি অংশের মধ্যে গত ১৪ জুন অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের অপর দুটি মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় কারান্তরীন থাকা অবস্থায় মাহাফুজুর রহমান সাবু খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ১৫ জুলাই ও জাভিদ রায়হার লাকী গত ২৭ আগস্ট সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। সোমবার এ নিয়ে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলো।