Site icon suprovatsatkhira.com

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির চিকিৎসায় এগিয়ে আসায় গ্রামবাসীর নামে চাঁদাবাজির মামলা

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসায় গ্রামের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে উল্টো মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলনের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের কাঠুনিয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানায়, ২৯ জুন কালিগঞ্জ-রতনপুর সড়কের কাঠুনিয়া মাদ্রাসার সামনে বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলনের এক কর্মীর মোটরসাইকেলের সাথে অপরদিক থেকে আসা একটি মোটর সাইকেলের সংঘর্ষে রবিউল শেখ নামে এক ব্যক্তি গুরুত্বর আহত হয়।

এসময় কাঠুনিয়া গ্রামের ইউনুস, জাকির,শহিদুল, শাহ কামালসহ এলাকার ১০/১৫জন বাসিন্দা রবিউলকে উদ্ধার করে দ্রæত কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে স্থানীরা আহত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য ওই এনজিও কর্মীর কাছে এক হাজার টাকা সহযোগিতা করার দাবি করে। এনজিও কর্মী তখন তাদের কাছে ৫’শ টাকা দেয়। এবং আহত ব্যক্তির যাবতীয় চিকিৎসা করবে বলে অঙ্গিকার করে। কিন্তু পরদিন ওই এনজিও কর্মীর পক্ষ নিয়ে এনজিও অফিসের বাড়িওয়ালা আজিজুল মাস্টার আহত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য আর কোন টাকা দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়। এ নিয়ে কোন ঝামেলা করলে গ্রামবাসীর নামে উল্টো চাঁদাবাজি মামলার হুমকি ধামকি দেয়। বিষয়টি নিয়ে গ্রামের বাসিন্দাদের সাথে কথাকাটাকাটি হলে ওই দিন রাতেই আজিজুল মাস্টারের নেতৃত্বে একদল বাহিনী কাঠুনিয়া গ্রামের মো. ইউনুস আলী, জাকির হোসেন, মো. শাহ কামাল, মো. শহিদুল ইসলাম ও মজিদ ভাঙ্গির বাড়িঘরে হামলা করে ভাঙচুর ও লুট পাট চালায়। পরে ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা কালিগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। ঘটনার ২দিন পর গত ২জুলাই আজিজুল মাস্টারের পক্ষ নিয়ে সুশীলনের এরিয়া ম্যানেজার রিয়াজুল ইসলাম বাদী হয়ে গ্রামবাসীর নামে একটি মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ সেই ঘটনার কোন তদন্ত না করেই মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলাটি রেকর্ড করে একজনকে আটক করেছে।

কাঠুনিয়া গ্রামের ইউনুস ভাঙ্গি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির সহযোগিতায় তার চিকিৎসার জন্য এলাকাবাসীর সাথে আমিও গিয়েছিলাম। চিকিৎসার খরচ দাবি করায় তৃতীয় পক্ষ আজিজুল মাস্টারের নেতৃত্বে আমার বাড়িঘরে হামলা করে লুট-পাট করা হয়েছে। ঐ ঘটনায় আমি থানায় অভিযোগ করলে উল্টো আমিসহ গ্রামবাসীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ বাড়িতে থাকতে
পারছে না। আমরা পুলিশের কাছে আগে অভিযোগ করেছি কিন্তু পুলিশ আমাদের অভিযোগের কোন তদন্ত না করে সুশীলনের দায়ের করা মিথ্যা মামলাটি রেকর্ড করেছে। ইতোমধ্যে আমাদের গ্রামের একজনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। আমরা পুলিশ সুপারের কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুশীলন অফিসের এক নারী কর্মী জানান, প্রকৃত ঘটনা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত লোকটির ডাক্তার খরচের জন্য গ্রামবাসীরা ম্যানেজারের সাথে আলোচনা করে কিছু টাকা চেয়েছিল। অফিস থেকে তাদের কাছে প্রথমে পাঁচ’শ টাকা দেয়া হয়। বাকি টাকা পরদিন দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বাড়ির মালিক আমাদের অফিসের ম্যানেজারের পক্ষ নিয়ে গ্রামবাসীর সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। পরে তাদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়।
এ সময় আগের দেয়া ৫শ টাকাও ফিরিয়ে দেয় গ্রামের লোকজন। শুনেছি ঐ দিন রাতে কয়েকজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। এরপর কী হয়েছে তা আমার আর জানা নেই।

এ বিষয়ে সুশীলনের কাঠুনিয়া কদমতলা শাখার ম্যানেজার প্রণব কুমার মন্ডল বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য আমি পাঁচ শত টাকা দেই। কিন্তু গ্রামের কিছু যুবক এসে আমাদের কাছে আরো ৩ হাজার টাকা দাবি করে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করছিলাম। এর মধ্যে অফিসের বাড়ির মালিক আজিজুল ইসলাম বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নেন। কিন্তু কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে গ্রামের কিছু যুবক বাড়ির মালিকের উপর হামলে পড়ে তাকে মারধোর করে। আমিও আহত হই। পুরো বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে, আমাদের নিরাপত্তার সার্থে এরিয়া ম্যানেজার রিয়াজুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর বাইরে আমাদের সাথে গ্রামবাসীর কোন ঝামেলা হয়নি। বাড়ি ঘরে হামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।

মামলার বাদী সুশীলনের এরিয়া ম্যানেজার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পরদিন আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। ছোট একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের অফিসের কর্মীদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হয়। সেই টাকা দিতে না চাওয়ায় বাড়ির মালিক ও আমাদের অফিসের কর্মীকে মারধোর করা হয়েছে। এজন্য কর্মীদের নিরাপত্তার সার্থে আমি মামলাটি দায়ের করেছি। তবে চাঁদাবাজির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান।
কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হালিমুর রহমান বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুষ্ঠু তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে তিনি জানান।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version