Site icon suprovatsatkhira.com

শ্যামনগরে বেড়ি-বাধ ভেঙে ৯টি গ্রাম প্লাবিত

জি এম রুস্তম আলী, বুড়িগোয়ালিনী (শ্যামনগর) প্রতিনিধি : শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পশ্চিম দূর্গাবাটিতে প্রবল জোয়ারের চাপে ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে অন্তত আশপাশের ৯টি গ্রামের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাগদা চিংড়ির ঘের। আগে থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দূর্গাবাটির খোলপেটুয়া নদীর ওই বাধটি প্রবল জোয়ারের চাপে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভেঙে যায়। এর আগে থেকে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মেরামতের চেষ্টা করলেও তা রক্ষা করতে পারেনি। রাতেই জোয়ারের পানি কমলেও শুক্রবার (১৫ জুলাই) সকালের জোয়ারে আবারো পানি প্রবাহের গতি বাড়তে থাকে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জোয়ারে বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের পশ্চিম পোড়াকাটলা, দূর্গাবাটির ২টি গ্রামসহ ৬টি ওয়ার্ডের মোট ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়। প্লাবিত গ্রামগুলো হলো- পশ্চিম দূর্গাবাটি, পূর্ব দূর্গাবাটি, পশ্চিম পোড়াকাটলা, পূর্ব পোড়াকাটলা, টুঙ্গিপাড়া, বিলাটি, আড়পাঙ্গাশিয়া, পূর্ব আড়পাঙ্গাশিয়া, ভামিয়া পোড়াকাটলা।

এছাড়া প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বাগদা চিংড়ি ঘের লোনা পানিতে একাকার হয়ে যায়। তবে দ্রæত বাধ মেরামত করতে না পারলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানান, ‘শ্যামনগর উপজেলার পশ্চিম দূর্গাবাটি এলাকায় সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এর আওতাধীন ৫ নং পোল্ডারের উপক‚ল রক্ষা বাঁধের প্রায় দেড়শ ফুটেরও বেশি এলাকা জুড়ে বেড়ি-বাঁধের অর্ধেক অংশ খোলপেটুয়া নদীতে ধ্বসে পড়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে পশ্চিম দূর্গাবাটি এলাকার সাইক্লোন শেল্টার সংলগ্ন অংশের ওই বাঁধের এই ধ্বস দেখা দেয়। এসময় সম্পূর্ণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় আশপাশের এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ভাঙন কবলিত অংশে মাটি ফেলার কাজ শুরু করে। খবর পেয়ে সন্ধ্যা সাতটার দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। কিন্তু তাৎক্ষণিক বাঁধ রক্ষার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে রাতের জোয়ারে ওই বেড়ি-বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে যায়’। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ‘পাউবো’র বেড়ি-বাঁধের ওই অংশে সংস্কার কাজের সময় গুনগত মান রক্ষা করা হয়নি।

যে কারণে বাঁধের অর্ধেক দেবে যাওয়া চরের উপরিভাগের বাঁধ নদীতে ধসে গেছে। দ্রæত রিং বাঁধ নির্মাণ করা না গেলে মধ্য রাতের জোয়ারে তদসংলগ্ন আরো ৫/৬টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে’। স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেন, ‘দূর্গাবাটির বিভিন্ন অংশে কোটি কোটি টাকার কাজ করা হলেও ভাঙনকৃত অংশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাটির কোনো কাজ করা হয়নি। এছাড়া প্রভাবশালীরা পাশের নদী হতে কোটি কোটি ঘন ফুট বালু উত্তোলন করায় চর দেবে গেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কেউ তদারকি করেননি’। এদিকে খবর পেয়ে শুক্রবার (১৫ জুলাই) বিকাল ৫টায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ি-বাঁধ পরিদর্শন করেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। এ সময় শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম আতাউল হক দোলন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক সাঈদ-উজ-জামান সাঈদ, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শাহিনুল ইসলাম, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এস আতাউল হক দোলন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সারাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হলেও আমাদের উপক‚লের বেড়ি-বাঁধের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। তবে এই মুহ‚র্তে দূর্গাবাটি বেড়ি-বাঁধ মেরামত করার জন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা আগামীকাল থেকে এই বাঁধে কাজ করতে আসা সকল শ্রমিকদের জন্য আহারের ব্যবস্থা করব। তাছাড়া পাউবো যে মালামাল বরাদ্দ দিচ্ছে তা দিয়ে আমরা সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যেভাবে হোক এই বাঁধ মেরামতের কাজ সম্পন্ন করব’। পাউবো এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বস্তা, দড়ি, বাঁশ, পেরেক সরবরাহ করা হয়েছে। তাছাড়া গতকাল যেটি ১৩০ ফুট ছিল, সেই ভাঙনটি শুক্রবার সকালে ১৫০-১৬০ ফুট দীর্ঘ হয়েছে।

সেক্ষেত্রে ৫৫০ ফুট পাইলিং করার জন্য আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। তবে বর্তমানে তেজ কটালের তীব্র জোয়ারের কারণে সেটি করা সম্ভব না হলেও আমরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় পর্যাপ্ত পরিমাণ জিও টিউব, বাঁশ, প্লাস্টিক বস্তা সরবরাহ করে পর্যাপ্ত পরিমাণে বালু মজুদ করে এই পাইলিংয়ের কাজ শুরু করব’। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। খুব শীঘ্রই এই বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে। তাছাড়া এখানকার মানুষের এই মুহ‚র্তে সুপেয় খাবার পানির সংকট নিরসনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে কথা বলেছি। আজই দূর্গাবাটিতে আর.ও (রিভার্স অসমোসিস) পানির প্লান্ট চালু করা হবে। এছাড়া ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে এই অঞ্চলের ৩ হাজার পানি-বন্দী মানুষকে জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version