Site icon suprovatsatkhira.com

প্রাণ ফিরে পাচ্ছে হারিয়ে যাওয়া নৌকা শিল্প

নাজমুল হক, পাটকেলঘাটা প্রতিনিধি : পাটকেলঘাটায় নৌকা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। সারাদিন খটখট শব্দ, হাতুড়ি দিয়ে পেরেক ঠোকানো, দড়ি দিয়ে বেঁধে গোন টানা, কেউ কেউ আলকাতরা টানা, কেউ করাত দিয়ে কাঠ কাটা, বিক্রির জন্য নছিমন-করিমনে নৌকা টেনে তুলতে ব্যস্ত। এমনই চিত্র সরেজমিনে দেখা গেছে পাটকেলঘাটা বলফিল্ড মোড় হতে পেট্রলপাম্প পর্যন্ত খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ধারে নৌকা পল্লীতে। এখানকার ব্যবসায়ী যুগিপুকুরিয়া গ্রামের সুমি ফার্নিচারের মালিক নূর ইসলামের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আমার কারখানায় ৪-৫ জন শ্রমিক রাতদিন পরিশ্রম করে দিনে ১ টি করে নৌকা তৈরী করে।

এতে নৌকা প্রতি তার ৫-৬ শত টাকা আয় হয়। কর্মচারীদের মুজুরি ও তিন বেলা থাকা-খাওয়া আমাকে ম্যানেজ করতে হয়। তার কর্মচারীদের অধিকাংশের বাড়ী খুলনা কয়রা উপজেলার মহারাজপুর এলাকায়। পাটকেলঘাটার নৌকা ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর বর্ষা কম হওয়ায় এ ব্যবসায় আমরা বিপাকে আছি। বেচাকেনা কম হওয়ায় কর্মচারীদের বেতন দিতে আমরা হিমসীম খাচ্ছি। এ করাখানার প্রধান কারিগর হাফিজুর রহমান জানান, আমি কয়রা এলাকা থেকে প্রায় ১১ বছর আগে এ এলাকায় এসে নৌকা তৈরী কাজ শুরু করি। খৈ কাঠ, চাম্বুল কাঠ, লম্বু কাঠ, পুঁই কাঠ, মেহগনী কাঠ নৌকা তৈরী কাজে ব্যবহার করি। ১২ হাতের একটি নৌকা তেরী করতে ২ হাজার টাকা, ১৪ হাতের একটি নৌকা তৈরী করতে ৩ হাজার টাকা, ১৬ হাতের একটি নৌকা তৈরী করতে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত আমরা মুজুরী পাই। কারখানার মালিক ১২ হাতের নৌকা ৭ হাজার টাকা বিক্রি করলে ৫০০ টাকা লাভ পায়।

১৪ হাতের নৌকা ১১ হাজার টাকা বিক্রী করলে ১ হাজার টাকা মত, ১৮ হাতের নৌকা ২০ হাজার বিক্রী করলে ২ হাজার ৫ শত টাকা লাভ পায়। বৈশাখ মাস থেকে শুরু করে কার্ত্তিক মাস পর্যন্ত এ ব্যবসা জমজমাট চলে। কারখানার মালিক নূর ইসলাম আরো জানান, বর্তমানে এ নৌকার চাহিদা এত বেশী যে, নৌকা তৈরী করে ডেলিভারী দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ হিসাবে তিনি আরো জানান, চারিদিকে ঘেরভেড়ীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বর্ষার মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে এ চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নৌকাগুলো পাটকেলঘাটা থেকে শুরু করে খুলনা, বাগেরহাট, রুপসা, পাইকগাছা, কয়রা, আমাদী, শ্রামনগর, মুন্সিগঞ্জ, ঝিনাইদাহ, মাদারীপুর সহ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে এ নৌকা চলে যায়।

পেট্রলপাম্পের পাশে তৈয়াবা ফার্ণিচার এন্ড নৌকা কারখানার আরাকা মালিক আক্তারুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, এ কারখানায় ৯ জন কর্মচারী চুক্তিভিত্তক কাজ করেন। প্রতি কর্মচারী প্রতিদিন ৭-৮ শত টাকা আয় করেন। প্রতি মাসে প্রায় ৩৫-৪০ টি নৌকা বিক্রী করি। এতে তার ২৫-৩০ হাজার টাকা মাসে আয় হয়। নদী মাতৃক বাংলাদেশে আবহমান কাল থেকে নৌকা শিল্প আমাদের লোক শিল্পের সাথে মিশে আছে। ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, জারি-সারি, মাঝি মাল্লার গানগুলো এখনো আমাদের শিকড়ের সন্ধান এনে দেয়। কিন্তু নব্বই এর দশকের পর যান্ত্রিক সুবিধা বেড়ে যাওয়া ও অধিকাংশ নদীগুলো মৃতপ্রায় হওয়ায় নৌকার কদর অনেকটা কমে যায়। কিন্তু বর্তমানে বৈশ্বিক জলবায়ু চ্যালেঞ্জের মোকাবেলাই আবারো যেন নৌকা শিল্পের কদর পেতে শুরু করেছে। পাটকেলঘাটা নৌকা পল্লীতে কারিগরদের ব্যস্ততা দেখে তেমনটি মনে হয়েছে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version