Site icon suprovatsatkhira.com

পাটকেলঘাটার কাশীপুরে অবদ্বৌত গোস্বামীর সমাধিস্থলের জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি: পাটকেলঘাটা থানাধীন কোমরপুর-সরুলিয়া খেয়াঘাটের নিকটবর্তী কাশীপুর তিন রাস্তার মোড়ে শতাধিক বছরের পুরাতন অবদ্বৌত গোস্বামীর আখড়া বা সমাধিস্থলের জায়গা দখল করে ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ওইসব ঘর ভেঙে নেওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হলেও উল্টে পুরো জায়গা দখল করে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে জবরদখলকারিরা।

কাশীপুর তিন রাস্তার মোড়ের অবদ্বৌত গোস্বামীর আখড়া বা সমাধি পরিচালনা কমিটির সভাপতি চন্দ্র শেখর দাস ও সাধারণ সম্পাদক মাধব চন্দ্র দাস জানান, ১৯০২ সালে কপোতক্ষ নদের কোমরপুর- সরুলিয়া খেয়াঘাটের নিকটবর্তী কাশীপুর মৌজার কাশীপুর তিন রাস্তার মোড়ে সরকারি ৩২ শতক জমিতে স্থাপিত হয় অবদ্বৌত গোস্বামীর আখড়া বা শবদেহ সৎকারের জন্য সমাধিস্থল। বছরে তিন বার এখানে সাধু সমাবেশ হয়ে থাকে প্রতি সপ্তাহের বৃহষ্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত হয় কীর্তণ। বছরব্যাপি সকল অনুষ্ঠানে যশোরের কেশবপুর, সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা, তালা, সাতক্ষীরা সদর, শ্যামনগরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে ৪০০ সাই ও ৬০০ সাধু অংশগ্রহণ করে থাকে। সারা বাংলাদেশের মানচিত্রে এটি একটি অসা¤প্রদায়িক চেতনার মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। সাবেক ও বর্তমান মানচিত্রে আখড়া বা সমাধিস্থলের ছবি চিহ্নিত করা হয়েছে। গত ২০১০ সালে সরকারি অনুদান দিয়ে সমাধিস্থলে একটি টিউবওয়েল, একটি ল্যাট্রিন ও একটি তুলসী মন্দির নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালে ১১৯তম বাৎসরিক সমাবেশে তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার উপস্থিত থেকে সমাধিস্থল বা আখড়ার উন্নয়নকল্পে এক লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন।

অবদ্বৌত গোস্বামীর আখড়া বা সমাধিস্থলের বিভিন্ন কর্মসুচিতে অংশ নেওয়া নগরঘাটার আগর আলী শাহ, মেহের আলী শাহ, কেশবপুরের দয়াল শাহ, সাতক্ষীরা সদরের থানাঘাটার আবু সেলিমসহ কয়েকজন জানান, পূর্বপুরুষদের দেখাদেখি তারাও ওই আখড়া বা সমাধিস্থলে মৃতদেহ সমাধি করে থাকেন। অংশ নেন বছরব্যাপি বিভিন্ন কর্মসুচি ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। এ আখড়াটি বাংলাদেশের একটি অসা¤প্রদায়িক চেতনার মানুষের মিলনস্থল। প্রতিদিন এখানকার তুলসী মন্দিরে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালানো হয়। অথচ গত রোজার ঈদের দুই দিন আগে কাশীপুর তিন রাস্তার মোড়ে স্থানীয় বাজার কমিটির সভাপতি পরিচয়ে আব্দুল মজিদ ও তার সহযোগী রুহুল আমিন সমাধিস্থলের জমি জবরদখল করে সেখানে কয়েকটি দোকান ঘর নির্মাণ করতে চাইলে সমাধিস্থলের সেবায়েত মধুসুধন দাস বাধা দেন। এ সময় তাকে মারপিট করেন সেকেন্দার আলী। সভাপতি চন্দ্র শেখর দাসের জামার কলার ধরে মারপিট করে রুহুল আমিন ও আব্দুল মজিদ। সকল বাধা উপেক্ষা করে আমিরুল ইসলাম চায়ের দোকান, মনিরুল ইসলাম মুদির দোকান, ও সালাহউদ্দিন ভাজার দোকান তৈরি করেন।

এর দুই দিন পর বিষয়টি তালা উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও স্থানীয় সরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়। অজ্ঞাত কারণে এর কোন প্রতিকার না হওয়ায় কোরবানীর ঈদের এক সপ্তাহ আগে আব্দুল মজিদ ও সন্ত্রাসী রুহুল আমিনের উপস্থিতিতে সমাধিস্থলের জায়গা আবারো দখল করে দক্ষিণপাশে সালাউদ্দিন ও দবিরউদ্দিন মাছের এবং রুহুল আমিন পোল্ট্রী মুরগির দোকান নির্মাণ করে। বাধা দেওয়ায় সেবায়েত মধুসুধন দাস, সভাপতি চন্দ্রশেখর দাস, সাংগঠণিক সম্পাদক অনিল কৃষ্ণ দাসকে মারিপট করা হয়। বিষয়টি থানায় অভিযোগ করলে উপরিদর্শক মেহেদী হাসানের উপস্থিতিতে থানার গোলঘরে শালিসি সভা চলাকালে রুহুল আমিন, আব্দুল মজিদ, সেকেন্দারসহ কয়েকজন আখড়ার পক্ষের লোজনকে খুন জখমের হুমকি দেয়। পাটকেলঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাঞ্চন রায় জবরদখলকারিদের দুই দিনের মধ্যে ওইসব জবরদখল করা ঘর ভেঙে নেওয়ার নির্দেশ দেন। অথচ ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও তারা ওইসব ঘর সরিয়ে নেয়নি। উপরন্তু আখড়ার সকল জায়গা দখল করে নেওয়ার হুমকি দিয়ে সেখানে থাকা কলাগাছের কলাসহ বিভিন্ন গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে মজিদ ও রুহুল আমিনের লোকজন। এমতাবস্থায় তারা হুমকির মধ্যে রয়েছেন।

এ ব্যাপারে জবরদখল কারি রুহুল আমিন বলেন, সরকারি খাস জায়গা তাই তিনিসহ কয়েকজন মিলে রাস্তার পাশেই কয়েকটি দোকান বানিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। ওই জমিতে আখড়া কর্তৃপক্ষের কোন ডিসিআর নেই। পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাঞ্চন রায় জানান, জবরদখলকারীরা তার নির্দেশনা না মানলে খুব শীঘ্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার রায় বলেন, সেখানকার বর্তমান অবস্থা তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version