জুলাই ২১, ২০২২
উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে বদলে গেছে কৃষি: বেড়েছে কর্মসংস্থান
গাজী আল ইমরান, নিজস্ব প্রতিনিধি : কৃষি নির্ভর উপকূলে বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলাবদ্ধতা, অপরিকল্পিত মৎস্য চাষ এবং প্রতিনিয়ত লবনাক্ততা বৃদ্ধির ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে উপকূলবাসী। বিভিন্ন সমস্যার কারণে পেশা বদল, অন্যত্র চলে যাওয়া এসব এখন নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকায় কর্মসংস্থান না থাকায় মানুষেরা মাইগ্রেশান হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রবণতা দিনদিন বেড়েই চলেছে। পূর্বেকার দিনে উপজেলার কুলতলি-ধানখালি এলাকাটিতে কৃষি কাজ সমৃদ্ধশালী হলেও লবনাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় এবং একই সাথে সুপেয় পানির ব্যবস্থা না থাকায় কৃষি কাজ একবারেই মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছিল। এলাকার কাজের সন্ধানে গ্রাম থেকে শহরে ভিড়ছিল স্বল্প আয়ের কর্মহীন মানুষেরা। উপকূলীয় এলাকার মানুষ হিসেবে দুর্যোগে ভঙ্গুর বাঁধের জন্য এলাকার মানুষ প্রায় প্রতি বছর লবন পানির আগ্রাসনে পড়েন। এছাড়া এলাকায় কৃষি কাজ না থকায় বেকারত্ব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে অত্র এলাকায়। লবনাক্ততা বেড়ে যাওয়ায়, মিষ্টি পানির আঁধার না থাকায় মিষ্টি পানির অভাবে কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্তায় জলাভূমি খনন করে মিষ্টি পানির ব্যবস্থা করে এলাকায় কৃষি ব্যবস্থা আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনার দাবি তোলেন কৃষকেরা। কৃষি কাজে বিপ্লব আনতে এলাকাবাসী এলাকার একাধিক খাল খননের মাধ্যমে কৃষির পূর্বাকার অবস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্ঠা করছে। কুলতলি এলাকার দীর্ঘদিন অবৈধ দখলে থাকা প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো আস্তে আস্তে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। যার কারণে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্ঠির পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে সবুজায়ন। এলাকায় গেলে চোখে পড়ে মাঠ ভরা হরেক রকমের ধানের পাশাপাশি সবজি ক্ষেত। এলাকাবাসীর উদ্যোগে মাত্র তিন-বছরেই বদলে যেতে শুরু করেছে পুরো এলাকার চিত্র। তবে এই অবস্থায় নিয়ে আসতে কঠোর সংগ্রাম করেছে এলাকাবাসী। প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের দখলে থাকায় তা একবারে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব ছিল না। এলাকাবাসী খাল গুলো ইজারা মুক্ত এবং দখলমুক্ত করতে উপজেলা প্রশাসন থেকে জেলা প্রশাসন এমনকি মামলায় জড়িয়েছে খাল ও প্রাকৃতিক জলাশয় উদ্ধারে। একসময় এলাকাবাসী নিজেরা অসহায়ত্ববোধ করলেও নিজেদের গুটিয়ে না নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দারস্থ হয়েছে। বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান সিএনআরএস তাদের আর্থিক এবং আইনি সহায়তা দিয়েছে প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো ফিরিয়ে আনতে। একই সাথে সিএনআরএস সংস্থার সাথে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বারসিক বিভিন্ন এডভোকেসি এবং তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করেছে প্রাকৃতিক জলাশয় ফিরিয়ে আনতে এবং বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে। আইনি লড়ায়ে জিতে সরকারের পক্ষে রায় এনেছে জনগণ। এরপর এসমস্ত জলাশয় খননে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছে সিএনআরএস নামক সংস্থাটি।কুলতলি এলাকার উদ্ধার কৃত ৩ টি এবং ৪টি খাল খননের ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠী এক ফষলের জায়গায় তিন ফষল চাষ করছে বর্তমানে। এলাকাবাসীর চাওয়া সকল জলাভূমি ইজরা মুক্ত করে খননের মাধ্যমে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করা। তাদের ভাষ্য মতে যেহেতু এলাকা দুর্যোগ প্রবণ এলাকা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই অঞ্চল থেকে বহু মানুষ কাজের জন্য বাইরে চলে যেতে হচ্ছে। সুতরাং কৃষি কাজের সাথে যুক্ত হতে পারলে এলাকার কৃষকগণ সহ প্রকৃতি পরিবেশ ফিরে পাবে। প্রতিফলনও ঘটেছে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। স্থানীয় জনগোষ্টীর আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন কুলতলি প্রায় ১ কিঃ মিঃ খালটি স্থানীয় প্রভাবশালীদের কবল থেকে উন্মুক্তের পরে জনমুখে আনন্দের ছাপ ফুটে ওঠে। খাল উন্মুক্তের পরে এলাকার নারী ও পুরুষদের জাল নিয়ে মাছ ধরতে দেখা যায়। শুরু হয় জাল যার জলা তার প্রথা। একই ভাবে বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ধরনের ইতিবাচক চিত্র লক্ষ্য করা গেছে মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের বিভন্ন স্থানে। খননকৃত জলাশয় গুলো মিষ্টি পানির আঁধার তৈরি হওয়ায় বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে সহায়ক হয়েছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে অন্য এলাকা থেকেও এমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা গেছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনে তাদের গৃহিত উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে এলাকার উন্নয়ন হয় তা প্রমাণ করেছে কুলতলি গ্রামবাসী। এলাকায় মিষ্টি পানির আঁধার তৈরি বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. এনামুল ইসলাম বলেন, এলাকাটিতে বিভিন্ন জলাশয় দখলমুক্ত এবং খনন হওয়ায় এলাকার কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করি। এলাকাবাসীর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আক্তার হোসেন বলেন, জন উদ্যোগ একটি এলাকায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে তা প্রমাণ করেছে কুলতলি গ্রামের মানুষেরা।তাদেও উদ্যোগের ফলে এলাকার কৃষিতে একটি ইতিবাচক আমূল পরিবর্তন আসবে বলে মনে করি। 8,592,111 total views, 8,797 views today |
|
|
|