জুলাই ৩০, ২০২২
অভিবাদন সুপ্রভাত সাতক্ষীরা গাজী আজিজুর রহমান
এবার এক সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদযাপিত হচ্ছে দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। কারণ এই পত্রিকার যিনি স্রষ্টা ও দ্রষ্টা সেই প্রিয় ব্যক্তিত্ব আনিছুর রহমান আর আমাদের মাঝে নেই। সকাতরে আজ কাঁদিছে সকলে শান্তি অন্বেষণে, আশা পূরণে কিন্তু তা যেন সকলি গরল ভেলতে পরিণত। তার অকাল মৃত্যু সুপ্রভাত সাতক্ষীরার কাছে একটা বিরাট অভিঘাত। পথ চলার একটা বিরাট হোঁচট আর তার পরিবার পরিজন, সহকর্মীদের কাছে একটা বিরাট ধাক্কা, যেন এক টাইটানিক বিপর্যয়। তবু সুপ্রভাত সাতক্ষীরার চলাকে থামাতে দেয়নি তার দঁড়ি মাঝিরা। যেমন থামতে দেয়নি কাফেলার পথচলা, পত্রদূত এর পথচলা। সুপ্রভাত সাতক্ষীরারও সেই অঙ্গীকারে পথ চলেছে উপল খন্ড মাড়িয়ে। সামনে পথ দুর্গম ছিল, রক্তাক্ত ছিল, পিচ্ছিল ছিল, আঁধিয়ার ছিল, সেই মহাদুর্যোগ পাড়ি দিয়ে সুপ্রভাত সাতক্ষীরা তার স্রষ্টার স্বপ্ন কাঁধে নিয়ে আজও প্রতিদিন কুঁড়ি ফুটিয়ে, ফুল ফুটিয়ে, ফল ফলিয়ে তার বার্তা প্রতি প্রভাতে পৌঁছে দিচ্ছে সাতক্ষীরার হাজারও সংবাদ পিপাসু মানুষের সকাশে। এনজিও ব্যক্তিত্ব আনিছুর রহমানের স্বপ্ন ছিল দেরীতে হলেও সাতক্ষীরায় প্রচলিত সকল দৈনিকের মধ্যে সুপ্রভাত সাতক্ষীরা হবে একটা আদর্শনিষ্ঠ আলাদা মাত্রার সংবাদপত্র। সুন্দর কাগজ, সুন্দর ছাপা, সুন্দর পরিবেশনা, সুন্দর লোগোর মাধ্যমে সুপ্রভাত সাতক্ষীরা হবে দশের মধ্যে এক। সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে নিয়েই সুপ্রভাত সাতক্ষীরা সুলুক যাত্রা। সংবাদপত্র প্রেমী আনিছুরের ইচ্ছা ছিল সংবাদ পাঠ বিমুখ সাতক্ষীরার পাঠককে এমন পাঠ-স্বাদ দেওয়া, যে পাঠে তাদের পাঠ তৃষ্ণা বাড়বে, সংবাদপত্রের প্রতি আস্থাশীল হবে এবং সংবাদপত্রটি হবে তাদের মনের খোরাক মেটানোর একটা উপায়। আনিছুর সাংবাদপত্রটিকে কোনো লাভের হাতিয়ার বানাতে চাননি। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অস্ত্রও বানাতে চাননি। অথবা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের আয়ুধও বানাতে চাননি। হলুদ সাংবাদিকতা দিয়ে স্বার্থ সিদ্ধির কোনো হীন চেষ্টাও তার ছিলনা। তিনি চেয়েছিলেন সুপ্রভাত সাতক্ষীরা সাতক্ষীরার প্রকৃত মা মাটি মানুষের কন্ঠস্বর হবে। সাতক্ষীরার উন্নতি অগ্রগতির সোপান হবে। সাতক্ষীরার মানুষের জ্ঞান চিন্তা দর্শনকে আধুনিকমনস্ক করবে। এই গণমাধ্যমটি হবে মানুষকে শিক্ষিত করার বিদ্যাস্ত্র। সব চেয়ে বড় কথা সুপ্রভাত সাতক্ষীরা কোনো ধর্মের বেসাতি করবে না। কোনো সম্প্রদায়ের পায়রবি করবে না। জাতিকে ও সমাজকে ধর্ম-ধন ও গোত্রের নামে বিভক্ত করবে না। মৌলবাদ ও ধর্মান্ধতাকে প্রশ্রয় দেবে না। চোরাকারবারি, মাদক ও মানব পাচারকারি, সন্ত্রাসী ও খুনিদের প্রশ্রয় দেবে না। লালন করবে না লুটরাদের, ধর্ষকদের, দখলকারদের বা ক্ষমতাদম্ভী ঘের মালিকদের। বরং সুপ্রভাত সাতক্ষীরা হবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী, অসম্প্রদায়িক চরিত্রের অধিকারী, আধুনিক ও প্রগতি মনস্ক সমাজ গড়ার একটা প্রচার মাধ্যম। সেই লক্ষ্যে আজও অবিচল থেকে সুপ্রভাত সাতক্ষীরা পথ চলেছে মাথা উঁচু করে। সুপ্রভাত কোনো রাজনীতিবিদ, প্রশাসক, শিল্পপতি বা ধনপতির কাছে মাথা নত করে পথ চলবে না, এ তার গনমাধ্যম অঙ্গিকার। সাতক্ষীরা দেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল অধ্যুষিত একটি সীমান্ত জেলা। ডাঙায় বাঘ, জলে কুমীর আর দস্যু-তস্কর উপদ্রুত অঞ্চল এই প্রাচীন জনপদটি। দেশর খুব সুদূরে ও গহীনে অবস্থানের কারণে এখানে শত শত বছর ধরে দানা বেধেছে সন্ত্রাস, চোরাচালানি, মাদক ব্যবসা, জলদস্যু, বনদস্যু সহ বিস্তার লাভ করেছে নানা রকম অপরাধ জগৎ। তাই অঞ্চলটি বরাবর ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া আছে অশিক্ষা-কুশিক্ষা, মৌলবাদ ও উগ্র ধর্মান্ধতা, ভারত বিদ্বেষ ও রাজনৈতিক অপশক্তির উপদ্রব। এখানে জেঁকে বসেছে ক্ষমতাবান ঘের মালিকদের শোষণ শাসন, অস্ত্রচোরাচালানি ও মাদক চোরাচালানিদের অপরাধ জগৎ ও মানব পাচার কারিদের সিন্ডিকেট। এমন অঞ্চলে সাংবাদিকদের কাজ করা, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করা অত্যন্ত কঠিন ও দুরূহ কর্ম। যে কারণে স, ম, আলাউদ্দীন, শামছুর রহমান কেবলের নির্মম মৃত্যু। তাদের মতো বিপদ আপদ ঘাড়ে নিয়েই কাজ করতে হয় সাতক্ষীরার সাংবাদিকদের। সুপ্রভাত সাতক্ষীরার সাংবাদিকরাও সেই নিরাপত্তাহীনতার খড়গ মাথায় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে আনিছুরের আরাধ্য স্বপ্ন পূরণের জন্য। অন্ধকারে থাকা সাতক্ষীরাকে আলোকিত উভ্যুদয় দেবে সুপ্রভাত সাতক্ষীরা। এ আমাদের প্রতীপ প্রত্যাশা। একজন প্রত্যয়ী শেরপার সাহস নিয়ে আনিছুর এ জগতে যাত্রা শুরু করেছিলেন সুপ্রভাত সাতক্ষীরার মাধ্যমে। সেই শুভ যাত্রা তার অবর্তমানে অব্যাহত আছে, নীতি আদর্শ উদ্দেশ্যে বজায় রেখে দুর্গম পথ পাড়ি দিচ্ছে তার সহযোগী শেরপারা এ জন্য তাদের অভিবাদন অভিনন্দন। সাংবাদিকরা হলেন জাতির দর্পন, সমাজের আয়না, মানুষের প্রতিদিনের ঠিকানা। তারাই মানুষের জ্ঞান চক্ষু, চৈতন্যের অদিতি, হৃদয় মনের প্রতিদিনকার খাদ্য খোরাক। তাই তারা আশা করে সৎ সাংবাদিকতা, শুনতে চায় সত্য কথা, জানতে চায় দেশ ও অঞ্চলের প্রকৃত অবস্থা। সুপ্রভাত সাতক্ষীরা সেটাই করবে। তারা মিথ্যা দিয়ে, ভুল দিয়ে, বিভ্রান্তি দিয়ে সমাজকে বিভক্ত ভঙ্গুর ও ঘূণা বিদ্বেষের মুখোমুখি করে দেবে না মানুষকে। বরং মানুষের মধ্যে সদ্ভাব সস্প্রীতি গড়ে তুলতে, ভালোবাসা ও সাম্য গড়ে তুলতে ভূমিকা পালন করবে এটাই আমাদের চাওয়া। তবেই আনিছুর রহমানের আতœার শান্তি। তার স্বপ্ন থেকে সুপ্রভাত সাতক্ষীরা কখনো বিচ্যুত হবে না। তার উদ্দেশ্যের সঙ্গে কখনো কৃতঘ্নতা করবে না। তার সু-আশার সাথে মীরজাফরী করবে না বা তার উন্নত মনের বিপরীতে অবস্থান নেবে না তার সহযোদ্ধারা এটাই হোক এবারের সুপ্রভাতের শপথ। আমি খুব আশাবাদী সুপ্রভাত সাতক্ষীরা সাতক্ষীরার সংবাদপত্র জগতে এক খন্ড আলহীন মানবজমিন তৈরি করবে তাদের সুকর্ম দিয়ে। And let there be light সুপ্রভাত সাতক্ষীরা। 8,540,024 total views, 7,356 views today |
|
|
|