নিজস্ব প্রতিনিধি: ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সাতক্ষীরায় কলারোয়ায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় অস্ত্র আইনে অভিযোগ গঠণ করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার (১৬ জুন) সাতক্ষীরার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল -৩ এর বিচারক বিশ্বনাথ মÐল কাঠগোড়ায় হাজির ৪০ জন ও পলাতক নয় জনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ গঠণ করেন। একইসাথে অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের দুইটি মামলায় আগামি ২৯ জুন সাক্ষীর দিন ধার্য করা হয়েছে।
এদিকে অস্ত্র আইনে অভিযোগ গঠণ ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের দু’টি মামলায় (অন্য মামলায় কারাগারে থাকা) ৪০ জন আসামীকে বৃহষ্পতিবার সকাল ১১টায় জেলা কারাগার থেকে স্পেশাল টাইব্যুনাল-৩ এর কাঠগোড়ায় হাজির করা হয়। এ মামলায় নয় জন আসামী পলাতক রয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টায় মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামকে সাক্ষী হিসেবে হাজির করানো হয়। ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (এ)(এফ)/২৩ ধারায় অভিযোগ গঠণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করেন। আসামীর পক্ষে দুই জন আইনজীবী অভিযোগ খারিজের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানী শেষে বিচারক ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (এ)(এফ)/২৩ ধারায় অভিযোগ গঠণ করা হয়। অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের দু’টি মামলায় আগামি ২৯ জুন সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য করা হয়।
প্রসঙ্গত,২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সকাল ১০টায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে যশোরে ফিরে যাওয়ার পথে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তৎকালিন সাংসদ হাবিবুল ইসলামের হাবিব ও বিএনপি নেতা রঞ্জুর নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতা কর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস (সাতক্ষীরা-জ-০৪-০০২৯) রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। হামলায় তৎকালিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মতিন, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী সাথী ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে এক ডজন দলীয় নেতা কর্মী আহত হয়।
এ ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমাÐার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উলে¬খ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে আসামী করে আদালতে দায়ের করেন। মামলায় ১৮ জনকে সাক্ষী করা হয়।
বিভিন্ন আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই মহামান্য হাইকোর্ট নি¤œ আদালতে মামলার কার্যক্রম নতুন করে শুরু করার করার জন্য সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ২০১৫ সালের ১৭ মে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে এসটিসি ২০৭/১৫, এসটিসি ২০৮/১৫ দু’টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন। অপর টিআর ১৫১/১৫ মামলাটি ২০২১ সালের ৪ ফেব্রæয়ারি অভিযোগপত্রে উলে¬খিত ৫০ জনের বিরুদ্ধে চার থেকে ১০ বছর মেয়াদে সাজা প্রদান করেন। এরমধ্যে আসামী মাহাফুজুর রহমান সাবু কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গত ২৪ এপ্রিল বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব মহামান্য হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার আগেই রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে ২৫ মে সুপ্রিম কোটের চেম্বর জজ জামিনাদেশ স্থগিত করেন।
২০১৭ সালের ৯ আগষ্ট ও ২৩ আগষ্ট তিনটি মামলার কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ দেন মহমান্য হাইকোর্ট। ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত আসামীপক্ষের স্থগিতাদেশ ও আপিল খারিজ করে দেন। মে মাসের শেষ সপ্তাহে ওই নথি আদালতে পৌঁছানোর পরপরই ১৬ জুন সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য করা হয়।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ বলেন, অস্ত্র আইনে অভিযোগ গঠণ করা হয়েছে। অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের দু’টি মামলায় আগামি ২৯ জুন সাক্ষ্য গ্রহণ হবে। এ মামলায় সকল আসামীর কারাদÐ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।