নিজস্ব প্রতিনিধি: কলারোয়ায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষার নামে সরকারী অর্থ তছরুপ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী নিয়ে ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে কলারোয়ায় ৭০ টি উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সাস ও উন্নয়ন পরিষদ (উপ) নামে দুটি এনজিও যৌথ ভাবে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৩০ শিক্ষার্থী থাকার কথা রয়েছে। এই খাতে স্কুল ঘর ভাড়া মাসিক ১৫০০ টাকা, বসার কার্পেট ৫ হাজার টাকার, শিক্ষক বেতন মাসিক ৫ হাজার টাকা এবং সুপার ভাইজার বেতন ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাসিক উপবৃত্তি ১২০ টাকা, পোষাক, স্কুল ব্যাগ দেওয়ার কথা থাকলেও কিছুই দেওয়া হয়নি। সরেজমিনে পূর্ব কয়লা উপ-আনুষ্ঠানিক বিদ্যালয়ের অস্বিত্ব খুজে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে এই স্কুলের শিক্ষিকা নাসরিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান গৃহ না থাকায় তিনি বুইতা গ্রামে স্কুল পরিচালনা করছেন।
উত্তর বাটরা উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্র বন্ধ পেয়ে শিক্ষিকা মমতাজের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার স্বামী জানায়, মমতাজ বাড়িতে আছে। কয়েক মিনিট পরে শিক্ষিকা মমতাজ মুঠোফোনে কেন্দ্রে আছে বলে জানায়। পুনরায় স্কুলে যেয়ে ৫ বছরের একটা শিশুকে পাওয়া যায়। একটা বাচ্চা পায়খানা করার কারণে ১০ মিনিট আগে ছুটি দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। এদিকে কয়লা কওমী মাদ্রাসার পাশে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্রের সাইন বোর্ড ঝুলানো স্বল্প পরিসরের জানালা বিহীন একটি তালাবদ্ধ দোকানে। এই দোকানে ৩০ শিক্ষার্থীর স্থান সংকুলন অসম্ভব বলে মনে হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানায়, মাঝে মাঝে কিছু লোকজন ও শিশুদের দেখা যায়। শ্রীপতিপুর ঋষিপাড়া শিল্পকেন্দ্রে যেয়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর স্থলে ৫ থেকে ৬ বছর বয়স্ক প্রায় ২০ শিশুকে দেখা যায়। এদিকে ২ দিন যেয়ে কেএল হাইস্কুলের বাউÐারী ওয়াল সংলগ্ন খাসপুর ঋষিপাড়া উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ পাওয়া যায়। কেএল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম সহ স্থানীয়রা জানায়, প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষার্থী ও কিছু শিশু নিয়ে মাঝে মাঝে স্কুল চলে। লাঙ্গলঝাড়া বাজার শিক্ষাকেন্দ্রের সাইন বোর্ড ঝুলানো রয়েছে রান্নার কাঠ রাখা ঘরে। শিক্ষিকা আত্মীয় বাড়ি বলে প্রতিবেশীরা জানায়। লাঙ্গলঝাড়া পশ্চিমপাড়া কেন্দ্রের সাইনবোর্ড এলাই নামক ব্যক্তির বাসভবনে ঝুলানো থাকলেও শিক্ষিকা বা শিক্ষার্থীর কোন হদিস পাওয়া যায়নি। আলাইপুর কেন্দ্রের হদিস না পেয়ে শিক্ষিকা খাদিজা সুলতানার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ১২ কিমি দূরে দেয়াড়া গ্রামে আত্মীয় বাড়ি আছে জানায়।
তবে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা শুরু করেন। এ দিকে দেয়াড়া ইউনিয়নের কয়েকটি কেন্দ্রসহ অধিকাংশ ইউনিয়নের অধিকাংশ শিক্ষাকেন্দ্রেরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এভাবে সাইনবোর্ড সর্বস্ব দুই একটি শিক্ষাকেন্দ্রে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী নিয়ে নামকাওয়াস্তে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সচল দেখানো হচ্ছে বলে সুত্র জানায়। এসব কেন্দ্র দেখে ফেরার পথে কতিপয় উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সুপার ভাইজার পথরোধ করে নিউজ বন্ধের জন্য ঘুষের প্রস্তাব করেন। উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তর সাতক্ষীরার সহকারী পরিচালক হীরামন কুমার সরকার বলেন, কলারোয়ার অভিযোগ শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের জরিপ অনুযায়ী ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪.৫৫% অর্থাৎ ১২৮৭ জন, কিন্তু ৭০ কেন্দ্রে ২১০০ শিক্ষার্থী কোথা থেকে এসেছে সে প্রশ্নের কোন জবাব কেউ দিতে পারেনি।