আল-হুদা মালী, গাবুরা (শ্যামনগর) প্রতিনিধি : শ্যামনগর উপজেলার গাবুরার ডুমুরিয়া খেয়াঘাটে যাত্রী ছাউনি না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। খেয়াঘাট ইজারা নিয়ে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার মানুষ নিয়মিত টোল দিয়ে আসলেও যাত্রীদের সুবিধার্থে নির্মাণ হয়নি একটি যাত্রী ছাউনি। দেখা গেছে টোল আদায়ের জন্যে খুটির মাথায় কোনরকম ছাউনি দেয়া একটি ঘর থাকলেও তা বেশ জরাজীর্ণ। যাত্রীরা বলছেন, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সীগঞ্জ, নওয়াবেকী, শ্যামনগর, সাতক্ষীরাসহ গাবুরা অংশে যাত্রা পথে অতি গুরুত্বপূর্ণ ডুমুরিয়া খেয়াঘাটটি। অথচ যাত্রীদের জন্য একটি যাত্রী ছাউনি তৈরির উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। খেয়াঘাটে মাঝিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন এই খেয়াঘাট দিয়ে আনুমানিক ২-৩ হাজার যাত্রীসহ বয়োবৃদ্ধ, নারী-শিশু, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ পারাপার হন। যাত্রী ছাউনি না থাকায় যাত্রীদের খেয়াঘাটে এসে নৌকা বা ট্রলারের অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দাড়িয়ে থাকতে হয়।
কথা হয় খেয়ায় পারাপাররত ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রহিমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গাবুরা ইউনিয়নে ২টা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও সেটা আমার বাড়ি থেকে অনেক দূরে। এজন্য আমি বুড়িগোয়ালিনী হাইস্কুলে লেখাপড়া করি। কিন্তু স্কুলে যাওয়ার সময় ডুমুরিয়া খেয়াঘাটে এসে দীর্ঘ সময় রোদে দাড়িয়ে থাকতে হয়’। ওই শিক্ষার্থী আরো জানান, ‘এখন বর্ষকাল, যখন তখন বৃষ্টি শুরু হয়। স্কুলে যাওয়ার সময় খেয়াঘাটে থাকাকালীন বৃষ্টি শুরু হলে বৃষ্টিতে ভেজা ছাড়া কোন উপায় নেই। অনেক সময় বৃষ্টিতে ভিজে আবার বাড়ি ফিরে যেতে হয়। এখানে একটা যাত্রী ছাউনি থাকলে খুব ভালো হতো’। যাত্রীরাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ‘খেয়াঘাটে যাত্রী ছাউনি না থাকায় পারাপারের অপেক্ষায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এখানে একটা যাত্রী ছাউনি থাকলে রোদে পুড়তে ও বৃষ্টিতে ভিজতে হতো না। সকল যাত্রীদের বসার জন্য ভালো সুবিধা হতো। বৃদ্ধ রুস্তম আলী জানান, ‘আমার বয়স প্রায় ৬৫ বছর। বয়সের ভারে সোজা হয়ে চলতে পারি না। জরুরী কাজে কোথাও যাওয়ার দরকার হলে খেয়াঘাটে এসে রোদে দাঁড়িয়ে থাকা লাগে। হঠাৎ বৃষ্টি আসলে দৌঁড়েতো কোথাও গিয়ে দাঁড়াতে পারি না। নিরুপায় হয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। কর্তৃপক্ষ একটা যাত্রী ছাউনির ব্যবস্থা করলে সকলের জন্য ভালো হতো’। খেয়াঘাটের টোল আদায়কারী মোহর আলী মোল্ল্যা বলেন, ‘যাত্রী ছাউনির জন্য বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে কিন্তু তারা এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা করলো না।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমি আবেদন জানাই যেন দ্রæত খেয়াঘাটের একটি যাত্রী ছাউনির ব্যবস্থা করেন’। এ বিষয়ে গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, ‘ডুমুরিয়া খেয়াঘাটে যদি যাত্রী ছাউনি করার মত পর্যাপ্ত জায়গা থাকে তাহলে আমি ওখানে যাত্রী ছাউনি করে দেবো’। শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান সাঈদ জানান, ‘জেলা পরিষদ এ খেয়াঘাটের ইজারা দেয়। যারা রাজস্ব নেয় তাদের অবশ্যই এ বিষয়টি দেখা উচিৎ। যাত্রীদের সুবিধার্থে গাবুরা ও বুড়িগোয়ালিনী খেয়াঘাটের যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা উচিৎ বলে আমি মনে করি। এবিষয়ে জেলা পরিষদে আমরা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানাবো’। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আক্তার হোসেন বলেন, ‘যেহেতু ডুমুরিয়া খেয়াঘাটটি জেলা পরিষদের আওতাভুক্ত। এ বিষয়ে আমি জেলা পরিষদের মাসিক সভায় উপস্থাপন করবো’। এদিকে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ডালিম কুমার ঘোরামী বলেন, ‘এগুলো মন্ত্রণালয় স্পেশাল বরাদ্দ দেয়। জেলা পরিষদ বরাদ্দ দিতে পারে না। কারণ এখানে অধিকতর টাকার প্রয়োজন। কমপক্ষে ২৫-৩০ লাখ টাকার বিষয়। উপরে ৫০ লাখ। এইগুলো প্রকল্প আকারে পাঠাতে হয় মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় এটার অর্থ বরাদ্দ করে। জেলা পরিষদের কাজ হলো প্রকল্প পাঠানো। এটা আমরা রেজিলেশন করে কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। বরাদ্দ না হওয়ায় এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে’।