মোশাররফ হোসেন: সাতক্ষীরার প্রবীন সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী লাভ করলেন ‘বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১’। সোমবার সন্ধ্যা ৭ টায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার নবতরী হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এর হাত থেকে তিনি গ্রহন করেছেন এই অ্যাওয়ার্ড। এসময় তার গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয় ও সম্মাননা ক্রেস্ট, সম্মাননা সনদ ৫০ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। বসুন্ধরা গ্রæপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষনা করেন। এসময় বিশেষ অতিথি হিসাবে আরও উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিম, অধ্যাপক ড. মোঃ গোলাম রহমান এবং বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড এর আহবায়ক সায়েম সোবহান আনভীর ও সুধীজনরা।
আবেগ আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, মফস্বলের ৬৪ জন গুণি সাংবাদিককে খুঁজে বের করে বসুন্ধরা গ্রæপ তাদের সংবর্ধিত করায় বসুন্ধরা গ্রæপকে শুধু ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না। অনেকেই মনে করেন মফস্বলের সাংবাদিক মানেই অবহেলিত। কিন্তু বসুন্ধরা গ্রæপ আজ সেই ধারণা পাল্টে দিয়ে সাংবাদিকদের যে সম্মান প্রদান করেছে তাতে বসুন্ধরা গ্রæপের উত্তরোত্তর উন্নতি কামনা করি। একই সাথে বসুন্ধরা গ্রæপের চেয়ারম্যান জনাব আহমেদ আকবর সোবহান এঁর দীর্ঘায়ু কামনা করছি ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। পাশা পাশি এর সাথে যারা জড়িত ছিলেন তাদের প্রতিও রইল কৃতজ্ঞতা। ৩০ মে বসুন্ধরা কনভেশন সেন্টারে তাঁকেসহ ৬৪ জন প্রাবীণ সাংবাদিকসহ ১১ জন সেরা সাংবাদিককে উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে সম্মাননা ক্রেষ্ট এবং ৫০ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়।
বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড অর্জনকারী সাতক্ষীরার সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী আরো বলেন, মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকদের এভাবে মূল্যায়ন করা হলে তারা আরও বেশী অনুপ্রানিত হতে পারবেন। আমি এই অ্যাওয়ার্ড পেয়ে নিজেই উজ্জীবিত হয়েছি এবং আমার কর্মপ্রেরনা আরও বেড়ে গেল। বসুন্ধরা গ্রæপের এ ধরনের উদ্যোগ দেশের গুণী সাংবাদিক বাছাই করার কাজে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে বলে আমার ধারণা। পুরস্কার পাওয়ার জন্য নয়, নতুন প্রানশক্তি নিয়ে আমরা আরও এগিয়ে যাবার সাহস খুজে পেয়েছি।
তৃণমূল পর্যায়ের একজন সাংবাদিক হিসাবে সুভাষ চৌধুরী গত প্রায় অর্ধ শতাব্দী যাবৎ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে টানা ৩৮ বছর শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখে আসছেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক যুগান্তর ও বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি হিসাবে কর্মরত রয়েছেন।
ক্ষুরধার লেখনীর অধিকারী এই গুণী সাংবাদিক গনমাধ্যম জগতে প্রবেশ করে দৈনিক বাংলা, সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও ভোরের কাগজে দায়িত্বপূর্ন ভ‚মিকা পালন করেছেন। ‘সাতক্ষীরার ইসলামপুর চরে লাঠিয়াল বাহিনীর সন্ত্রাস’ লিখে দেশখ্যাত হয়ে ওঠা এই সাংবাদিক প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়ে কারা বরন করেছেন। বর্তমান সময়ে বয়সের ভার ও শারিরীক নানা জটিলতা তার লেখনী শক্তিকে এতটুকু দমাতে পারেনি। তিনি সাড়া জাগানো অগণিত রিপোর্ট করে নিজেকে সাংবাদিকতায় একজন অপরিহার্য ব্যক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বর্তমানে ৭৪ বছর বয়সী এই সাংবাদিক নিজেই গড়ে তুলেছেন একটি তথ্যভান্ডার। একারণে তিনি সাতক্ষীরায় চলমান ডিকশনারী হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
এই প্রবীণ সাংবাদিক সাতক্ষীরার একাধিক দৈনিকের জন্মলগ্ন থেকে তাদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কাজে সফল ভূমিকা রেখেছেন। এখন তিনি ঢাকার গনমাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব করা ছাড়াও স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের দৈনিক সংবাদপত্রে নিয়মিত কলাম লিখে জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। নির্ভীক, সত্যনিষ্ঠ এবং সাহসী প্রতিবেদন লিখে তিনি সামাজিক অপশক্তির প্রতিরোধের মুখে পড়েও ক্ষান্ত হননি। তার হাত ধরে বহু সাংবাদিক নিজেদের দাঁড় করাতে পেরেছেন।
সাংবাদিকতাকে আপন প্রাণশক্তি হিসাবে ধরে নিয়ে তার লেখনীর মাধ্যমে তিনি সমাজের সকল ইতিবাচক ও নেতিবাচক চিত্র ধারন করেছেন। এতে তিনি বারবার প্রশংসিত হয়েছেন। বহু গুনের এই সাংবাদিক সাতক্ষীরার প্রেক্ষাপটে লাভ করেছেন জেলা কবিতা পরিষদ পুরস্কার, জেলা সাহিত্য পুরস্কার, জেলা শিল্পকলা একাডেমী পুরস্কার সহ নানা সম্মাননা। তার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সমসাময়িক রাজনীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সীমান্তে চোরাচালান, দূর্যোগ, জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি, জলাবদ্ধতা এবং দূর্নীতির পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন, নির্বাচন, যাপিত জীবন, শিক্ষা, কৃষি, নারীর ক্ষমতায়ন এবং অপার সম্ভাবনার বহুমুখী চিত্র।
অনুসন্ধানী ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদন খাড়া করতে তিনি এখনও শহর ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে যেয়ে খবরের ওপর অনুসন্ধান চালিয়ে থাকেন। এভাবেই তিনি সামাজিক জীবনকে সামনে তুলে এনেছেন।