Site icon suprovatsatkhira.com

তৃতীয় বছরে পা রেখেছে চার হত্যা থেকে বেঁচে থাকা শিশু মারিয়াম

ফারুক হোসাইন রাজ : গভীর রাতে এক পরিবারের চারজনকে হাত ও পা বেঁধে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেন আপন ছোট ভাই। তবে ওই দম্পতির ছয় মাসের দুগ্ধপোষ্য শিশু মারিয়াম আফরিনকে হত্যা না করে রক্তাক্ত লাশের পাশে ফেলে রেখে যান।
নৃশংস এ হত্যা কান্ডের ঘটনাটি ঘটে গত ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর ভোর চারটার দিকে সাতক্ষীরা কলারোয়ার হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন খলশি গ্রামের মৃত শাহাজান আলীর বাড়িতে। মারিয়াম আফরিনের বয়স এখন দুই বছর. ছয় দিন৷ নৃশংস ঘটনার দিন থেকে প্রশাসনের সহযোগিতায় স্ব-পরিবার হারানো শিশুটির নিজের সন্তানের মতো করে আদর স্নেহ দিয়ে লালন-পালনের সার্বিক দায়িত্ব গ্রহন করেন স্থানীয় হেলাতলা ইউনিয়নের ব্রজবাকসা সংরক্ষিত ওয়ার্ডের টানা পাঁচ বারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুন। ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুন ব্রজবাকসা গ্রামের বিশিষ্ট মাছ ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলামের স্ত্রী৷ তার দুই ছেলে মাছ ব্যবসায়ী কামাল পারভেজ জনি আহমেদ ও প্রবাসী মাসুদ পারভেজ রনি ৷
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অবুঝ ফুটফুটে শিশুটি বারান্দায় দৌড়ে খেলা করছে৷ ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুনকে আম্মা বলে ডেকে তার নানা আবদার মিটিয়ে খুশিতে টইটুম্বুর হচ্ছে৷ কিন্ত আজও শিশুটি জানেনা যে তার সব থেকে আপনজন প্রিয় জন্ম দাতা মা সাবিনা খাতুন বাবা শাহিনুর রহমান, বড় ভাই সিয়াম হোসেন মাহী (১০) ও বোন তাসমিন সুলতানাকে (৮) গভীর রাতে নৃশংস ভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে৷ শিশু মারিয়াম দিনে দিনে বড় হচ্ছেন তার নানা চাহিদাও বাড়ছে অবুঝ শিশুটি এখন কথাও বলতে শিখেছে ওই ইউপি সদস্য ও তার স্বামীকেই সে বাবা মা ডেকে তৃপ্তি খুজে পায়৷
ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুন বলেন, মারিয়ামকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে গোসল দিয়ে নতুন পোশাক পরিয়ে বুকে টেনে নিয়েছি আজও কোন অপূর্ণতা রাখিনি৷ সাবেক সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মুস্তফা কামাল আনুষ্ঠানিক ভাবে মিট দ্য প্রেসের মাধ্যমে মারিয়ামের লালন-পালনের দায়িত্ব আমাকে দিয়ে ও শিশুর নামে ফান্ড গঠন করে এক লক্ষ টাকার অনুদান দিয়েছিলেন৷ চলতি মাসের গত ১৯ মে মারিয়ামের দ্বিতীয় জন্মদিনে মারিয়ামের বাবা-মা ও ভাই বোনের রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনায় শিশুদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে৷ মারিয়াম অত্যন্ত চঞ্চল তবে হাসিখুশি প্রিয় মেয়ে। গোমড়া মুখ পছন্দ করে না দিন রাতের মাঝে মা নামটা বেশি উচ্চারণ করে৷ শিশু মারিয়ামকে সুশিক্ষা দিয়ে ভবিষ্যতে একজন ম্যাজিস্ট্রেট বানাতে চান ওই ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর ভোর চারটার দিকে ওই চারজনকে হাত ও পা বেঁধে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। তবে ওই দম্পতির চার মাসের শিশু মারিয়াকে হত্যা না করে লাশের পাশে ফেলে রেখে যান।
এ ঘটনায় নিহত শাহীনুরের শাশুড়ি কলারোয়া উপজেলার উফাপুর গ্রামের ময়না খাতুন থানায় ১৫ অক্টোবর হত্যা মামলা করেন। তখন কাউকে সন্দেহ করতে না পারায় তিনি আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করেননি।

কলারোয়ায় এক পরিবারের চারজনকে হত্যার দায়ে একমাত্র আসামি রায়হানুরকে গতবছর ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সাতক্ষীরার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান জনাকীর্ণ আদালতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আসামি রাহানুর রহমান নিজে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছেন৷ মামলাটি ঢাকা সুপ্রিম কোর্টে চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা জর্জ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফরহাদ হোসেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version