কলারোয়া প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বৃষ্টিতে ভাসছে ধান। ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে সৃষ্ট নিম্মচাপে সোমবার সকাল থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। দিনভর ঝরা বৃষ্টির পানিতে ভাসছে মাঠে কেঁটে রাখা কৃষকের সোনালি স্বপ্ন বোরো ধান। ধার দেনা করে চাষ করা ধান ঘরে তুলে বছরের খোরাকি আর ঋণ শোধের যে স্বপ্ন এত দিন কৃষকেরা দেখছিলেন অশনির বৃষ্টিতে তা ফিঁকে হয়ে গেছে। ভিজে যাওয়া ধান শুকিয়ে কবে ঘরে তুলতে পারবেন নাকি জমিতে ভিজে ধানে চারা গঁজিয়ে যাবে তা নিয়ে এখন চিন্তিত কৃষকরা। মঙ্গলবার সরেজমিনে উপজেলার খোরদো, ছলিমপুর, তরুলিয়া, রায়টা, কুশোডাঙ্গা, হেলাতলা, আলাইপুর, কামারালী, বামনখালী, সোনাবাড়ীয়া, গণপতিপুর, ঝিকরা ইত্যাদি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মাঠের পর মাঠ পাকা ধান কেঁটে ও আঁটি বেঁধে ফেলে রেখেছেন চাষিরা। অনেকে আবার গাঁড়ি ভরে বাড়ি নেওয়ার জন্য খেতে ধান গাদা দিয়ে রেখেছেন। সোমবার ও মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে সব ধান ভিঁজে গেছে। খেতে জমা পানিতে এখন ভাসছে সব ধান। এদিকে সোমবার ও মঙ্গলবারের টানা বৃষ্টিতে থেমে গেছে সাধারণ কর্মজীবন। বৃষ্টিতে বাইরে বের হতে না পেরে গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে মানুষ। যারা নানা কাজে বাইরে বেরিয়েছেন বৃষ্টিতে ভিঁজে তাঁদের ঘরে ফিরতে হয়েছে।
কৃষকেরা বলেছেন, এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৩৩ শতকের বিঘাতে ২৫-৩০ মণ করে ফলন পাচ্ছে কৃষক। বাজারে দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে ধান গোলায় তুলতে পারলে কৃষক বেশ লাভবান হতেন। দেয়াড়া গ্রামের নতুন চাষি সুব্রত কুমার ঘোষ বলেন, ‘মাঠে দশ বিঘা জমির ধান কাঁটা ছিল। সকাল থেকে আকাশ মেঘলা দেখে তাড়াতাড়ি মাঠে যেয়ে অধিকাংশ ধান বেঁেধ বাড়ী আনতে পারলেও অনেক ধান এখনও মাঠে। ছলিমপুর গ্রামের মোকাম হোসেন বলেন, ‘দেড়বিঘা জমিতে ধান পেঁকে আছে। সকালে যেয়ে কাটা শুরু করার কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি শুরু হয়েছে। জমি নিচু হওয়ায় এখন সকল ধান পানির নীচে। রায়টা গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে বিচালি নষ্ট হয়ে গো খাদ্যের চরম অভাব দেখা দেবে। বিচালির দাম দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।’
উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া সূত্রমতে, চলতি মৌসুমে কলারোয়ায় ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে অনেক এলাকায় ধান কাঁটা প্রায় শেষ হয়েছে। তবে কৃষকরা বলছেন উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলে এখনো সব ধানের মধ্যে মাত্র ৪ আনা ধান কাটা পড়েছে। ১২ আনা ধান খেতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। আর দু চার দিন সময় পেলে ধান বাড়ি চলে আসত। এখন শুনছি ৩-৪ দিন টানা বৃষ্টি হবে। তখন এ ধানের কি উপায় হবে তা ভেবে পাচ্ছি না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এরই মধ্যে অর্ধেক ধান কৃষক বাড়ি তুলতে পেরেছেন। বাকি ধান মাঠে কাঁটা রয়েছে। গত দুই দিনের বৃষ্টিতে ধান ভিঁজে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’