Site icon suprovatsatkhira.com

আশাশুনিতে ২৭ বছর ধরে পাউবোর ৬৫০ মিটার এলাকাজুড়ে বেড়িবাঁধ নেই !

সমীর রায়, আশাশুনি : ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র মোকাবিলায় যখন সরকার নানা ধরনের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে মানুষের জানমাল রক্ষার্থে ব্যস্ত সময় পার করছে। ঠিক তখন দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খোলপেটুয়া নদীর ৬৫০ মিটার এলাকায় কোন ওয়াপদা বেড়িবাঁধ না থাকায় অস্বস্তি ও আতঙ্কে ভুগছেন সাতক্ষীরার আশাশুনি সদরের ৩ গ্রামের মানুষ। আশাশুনি সদর থেকে মাত্র দেড় কি.মি. দুরে ১৯৯৫ সালের মার্চ মাসে দয়ারঘাট গ্রামে ৬ ব্যাÐের ¯øুইস গেট সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে আশাশুনি উপজেলা সদর থেকে বলাবাড়িয়া গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এরপর প্রায় ১০ বছর ধরে চলেছে খেয়া পারাপার। তারপর ১৫ বছর ধরে খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানি আটকানো হচ্ছে মৎস্য ঘেরের সরু বাঁধ দিয়ে। আম্ফান ও ইয়াসে এর ভেতর ৪টি পয়েন্ট ভেঙে জোয়ারের পানিতে ভেসে যায় শতাধিক মৎস্য ঘের। প্রকল্প জমা দেওয়া হলেও ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে বছরের পর বছর।

সরজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আশাশুনি উপজেলা সদর থেকে মাত্র দেড় কি.মি. দুরে দয়ারঘাট গ্রামের নিমাই মন্ডলের বাড়ি থেকে বলাবাড়িয়া গ্রামের সুনীল মন্ডলের বাড়ি পর্যন্ত ৬৫০ মিটার খোলপেটুয়া নদীর কোন বেড়িবাঁধ নেই। স্থানীয় বাসিন্দা গণেশ মÐল জানান- ১৯৯৫ সালে বলাবাড়িয়া ও দয়ারঘাট গ্রামের মাঝামাঝি ৬ ব্যান্ড ¯øুইস গেট সংলগ্ন এলাকায় খোলপেটুয়া নদী ভাঙ্গনে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে উপজেলা সদরসহ পার্শ্ববর্তী শ্রীউলা ইউনিয়নও প্লাবিত হয়ে যায়। দীর্ঘদিন যাবৎ জোয়ার-ভাটা চলায় ¯øুইস গেট সংলগ্ন এ এলাকায় গভীর খালের সৃষ্টি হয়। কয়েক বছর পর প্রায় ২ হাজার বিঘা জমি ঘুরে রিং বাঁধের মাধ্যমে জোয়ারের পানি আটকে দেয়া হয়। সেই থেকে এ খালে খেয়া-পারাপার হয়ে বলাবাড়িয়া, হাঁসখালী, গাইয়াখালী ও এর আশপাশের মানুষ আশাশুনি সদরে যাতায়াত করেছেন। এরপর ২০০৫ সালে প্রায় ১০ বছর পর মূল বাঁধ থেকে সরে চুক্তির ভিত্তিতে ক্লোজার চাপান দিয়ে ওই ২ হাজার বিঘাতে মৎস্য চাষ শুরু করেন খুলনার জনৈক ব্যবসায়ী আব্দুল হাই বাহার। সেই থেকে তার মৎস্য ঘেরের বাঁধটিই অদ্যবধি ওয়াপদা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

গত আম্ফানের জলোচ্ছ্বাসে দয়ারঘাট-জেলেখালী গ্রামের বেড়িবাঁধের সাথে নিচু এ বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ভেতরে ঢুকে শতশত ছোট ছোট মৎস্যঘের তলিয়ে যায়। উক্ত ৬৫০ মিটারের মধ্যে আরও ৪ জায়গায় ভেঙ্গে জোয়ারভাটা চলতে থাকে। এক মাস ধরে বলাবাড়িয়া থেকে আশাশুনি সদরে যাতায়াত দুরহ হয়ে পড়ে। কোন রাস্তা না থাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল, রোগীসহ নারী-শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের যাতয়াতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আম্ফান ঝড়ের ৩৯ দিন পর পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে সেই বাঁধ সম্পন্ন হয়। এরপর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তীর উদ্যোগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উক্ত ৬৫০ মিটার রাস্তা নির্মাণের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। সে মোতাবেক পাউবো’র কর্মকর্তারা মাপ-জরীপ করে লিখেপড়ে নিয়ে যান। তারপর বছর পার হতে চললেও কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।

এই ৬৫০ মিটার মৎস্য ঘেরের বাঁধের রাস্তা স্থানীয় জনগনের ব্যক্তিগত জমির উপর দিয়ে হওয়ায় ১৯৯৫ সাল থেকে অদ্যবধি বলাবাড়িয়া গ্রামে যাতয়াতের জন্য কোন সরকারি রাস্তা নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও আশাশুনি সদর থেকে মাত্র দুই কি.মি. দুরের গ্রাম বলাবাড়িয়ায় যাতয়াতের কোন সরকারি রাস্তা বা ইটের সোলিংও নেই। অবহেলিত এই গ্রামে বিদ্যুতায়ন হয়েছে ২০২০ সালে। বর্ষা মৌসুমে কাদাপানিতে এ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। অথচ এ গ্রামের পাশাপাশি যত গ্রাম আছে সব গ্রামেই চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। কোটি কোটি টাকার চিংড়ি রপ্তানি হয়ে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখে চললেও এ এলাকার মানুষের কোন উন্নয়ন হয়নি। শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এ গ্রামে তিন চাকার ভ্যান এমনকি অ্যাম্বুলেন্সও ঢুকতে পারে না। এ গ্রামের যাদের মোটরসাইকেল আছে বর্ষা মৌসমে সেগুলোকে পার্শ্ববর্তী কোন আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে আসতে হয়। এ এলাকার ছেলে-মেয়েরা বর্ষার কাদাপানিতে ভিজেপড়ে তাদের লেখা পড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই তারা বছরের পর বছর পার করে যাচ্ছেন শুধু একটি সরকারি রাস্তার জন্য।

বর্তমানে নদীতীরে ছোট রিংবাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় মন্টুলাল মÐল। তার ৫শ গজ দুরে ২০০৫ সালে ঘেরমালিক আব্দুল হাই বাহার নির্মিত সেই রিং বাঁধ। প্রতি জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যাওয়ায় নতুন ঘেরমালিক বছরের শুরুতেই নিজ অর্থায়নে সরু রাস্তাটি কোনমতে সংস্কার করেছেন। কিন্তু আশাশুনি সদরের মানুষের প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি কমেনি। ঘূর্ণিঝড় অশনি’র মত যেকোন জলোচ্ছ্বাস হলে নদীর জোয়ারে প্রথমে মন্টুলাল মÐলের সরু বাঁধ ভেঙে যাবে। এর ফলে তারক মÐল, বিভূতি রায় ও তারা মুহুরীর বাড়ির সামনের নিচু রিং বাঁধ ছাপিয়ে আশাশুনি সদরে জোয়ারের পানি প্রবেশ করবে। তাই অনতিবিলম্বে এই রিং বাঁধটি উঁচু করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও গোলাম রাব্বীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন- ওই সাড়ে ৬শ মিটার রাস্তার নির্মাণের লক্ষে নকশা ও অর্থ বরাদ্দের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষ থেকে আমাদের কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আমি আবারও এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে চেষ্টা করব মুলবাঁধটি নির্মাণ করে এলাকার মানুষের কষ্ট লাঘব করতে।
দয়ারঘাট থেকে বলাবাড়িয়া গ্রাম পর্যন্ত স্থায়ী ওয়াপদা রাস্তা নির্মাণের দাবি জানিয়ে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version