Site icon suprovatsatkhira.com

সুপেয় পানির জন্য নিত্য যুদ্ধ উপক‚ল বাসির

গাজী আল ইমরান, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ফাল্গুন পেরিয়ে চৈত্রের শুরু থেকেই উপকূল জুড়ে শুরু হয় যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধের নাম সুপেয় পানি যুদ্ধ।যে এলাকার জনসাধারণের বছর জুড়ে পানির মধ্যে বসবাস, সেই এলাকার মানুষগুলোর মধ্যেই প্রতি বছরের ন্যায় শুরু হয়েছে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার। এলাকা জুড়ে পানি আর পানি কিন্তু জীব বৈচিত্রের জীবন ধারণের জন্য পানির উৎস নেই।

চারিদিকে পানির উৎস থাকলেও আসলেই তা পান যোগ্য না। প্রতিদিনই দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে না হতেই গ্রামের মেঠো পথ ধরে পানি আনতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেন গ্রামের গৃহবধুরা। অনেক গ্রামের নারী পুরুষ ৪ থেকে ৫ কিঃমিঃ দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে। গাবুরা, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের অনেকেই ট্রলারযোগে এলাকার অন্য ইউনিয়ন থেকে পানি সংগ্রহ করতে দেখা যায়। হিসাব করলে দেখা যায় একজন মানুষ তার শ্রম দিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যে এক কলস পানি নিয়ে আসে ঐ সময়ে তার শ্রমের মূল্য আসে প্রায় ১শ টাকা অর্থাৎ এক কলস পানির দাম ১শ টাকা।
গ্রামের নারী পুরুষের পাশাপাশি পড়াশুনা বাদ রেখে পানি আনার কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন শিক্ষার্থীরা।

সুপেয় পানির তীব্রতায় পানি বিহীন জীবদেহে সুপেয় পানির অভাবে দেখা দেয় নানাবিধ রোগ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গভীর নলক‚পের ব্যবস্থা থাকলেও পানি স্তর নেমে যাওয়ায় নতুন ভোগান্তি শুরু হচ্ছে এলাকা বাসির মধ্যে। বর্তমানে অত্যন্ত তাপ ও খরার ফলে এলাকার মিষ্টি পানি আঁধার শুকিয়ে চৌচির হতে শুরু করেছে। জীবন যুদ্ধে হার মানতে নারাজ উপক‚লের মানুষগুলো পানির তৃষ্ণা মেটাতে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপক‚লীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার প্রভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। যার ফলে সুপেয় এবং নিরাপদ পানির আঁধার দিন দিন কমে যাচ্ছে।

প্রাচীন কালে বিভিন্ন ধরনের নিত্যকার দিনের প্রয়োজনীয় পণ্যের বিনিময় প্রথা চালু থাকলেও বর্তমান সময়ে গ্রামাঞ্চলে পানি বিনিময়ের কথা শোনা যাচ্ছে। উপক‚লীয় অঞ্চল শ্যামনগর উপজেলার রাজা প্রতাপাদিত্যর রাজধানী ধুমঘাট শাপলা নারী উন্নয়ন সংগঠনের সদস্যদের সাথে আলাপকালে সংগঠনের সভাপতি অল্পনা রানী মিস্ত্রি বলেন, চৈত্রের আগমনের সাথে সাথেই এলাকা জুড়ে পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমরা এখান থেকে ৭ কিঃমিঃ দূর থেকে ভ্যান যোগে রিভার্স ওসমোসিস প্লান্ট থেকে পানি নিয়ে আসি। যেখানে প্রতি লিটার পানির দাম পড়ছে ১ টাকা। প্রতিদিন ভাতের চেয়ে পানির চিন্তা এখন প্রতিটি পরিবার জুড়ে। বর্তমান সময়ে মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিনিময়ে পানি নিচ্ছে।

শ্যামনগর উপজেলা সদরের কাশিপুর গ্রামে বসবাসরত আদিবাসি মুন্ডা জনগোষ্ঠীর সাথে কথা বলে জানা যায় পানির জন্য হাহাকারের শেষ নেই তাদেরও। তাদের সাথে কথা বলতেই প্রথমেই তাদের মুখে ফুটে ওঠে সুপেয় পানির কষ্ঠের কথা। তীব্র দাবদাহে গরমের মাত্রা যখন বেড়ে যাওয়ায় অসহ্য হয়ে উঠে জীবন ধারণ। গ্রামের মেঠো পথ ধরে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে যে পরিমাণ পানি আনা যায়, তার চাইতে শরীরে ঘাম যেন আরো বেশি বের হয় নারীদের এমনটাই বলছিলেন ওখানকার নারীরা। ভোরের সূর্য উকি দেওয়ার আগেই পানি আনতে যায় নারীরা কিন্তু পৌঁছাতে সামান্য দেরি হলেই সব মিলিয়ে তাদের দুই থেকে তিনটি মূল্যবান ঘণ্টা পেরিয়ে যায় পানি আনার কাজে। এ যেন ছকে বাঁধা এক সংগ্রামী জীবন।

উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নে গিয়ে একই চিত্র দেখা যায়। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এলাকার অধিকাংশ মিষ্টি পানির আঁধার। এরপর থেকে আর থামেনি সুপেয় পানির হাহাকার। বর্ষা মৌসুমে কিছুটা লাঘব হলেও চৈত্রের শুরু থেকেই শুরু হয় তীব্র পানির কষ্ট।এলাকায় দু একটি গভীর নলকূপ থাকলেও খরায় পানি স্তর কমে যাওয়ায় ঠিকমতো পানি পাওয়া যায় না এমনটাই বলেছেন এলাকার মানুষেরা।

উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের বয়োজ্যেষ্ঠ সুশীল মন্ডল বলেন,বর্তমান সময়ে যেভাবে সুপেয় পানির সংকট দেখা যাচ্ছে তা আগে কখনো দেখিনি। যতদিন যাচ্ছে তত সুপেয় পানির সংকট বাড়ছে। এসময় তিনি সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিকট মিষ্টি পানির আঁধার তৈরির আহŸান জানান।

উপজেলা উপসহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,শ্যামনগর উপজেলায় আর্সেনিকের প্রকোপ বেশি না হওয়ায় নলক‚পের পানি পান যোগ্য।সদর ইউনিয়ন এবং ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের কিছু জায়গায় আর্সেনিক পাওয়া গেলেও তা ০.০৫ এর নিচে থাকায় সমস্যা হয় না। এছাড়া স্বাভাবিকভাবে পানির স্তর ১৩ থেকে ২০ ফিট নিচে থাকে তবে চৈত্র কিংবা খরার সময় তা আরো ৫ থেকে ৭ ফিট নিচে নেমে যায়।তবে বর্তমান সময়ে খুব বেশি পানির তীব্রতা দেখছি না।আশা করা যাচ্ছে আগামী সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। যেটুকু সমস্যা দেখছি তা বৃষ্টি হলে আর থাকবে বলে মনে কর ছিনা।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version