জি এম মাছুম বিল্লাহ, সুন্দরবন অঞ্চল প্রতিনিধি : শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের খাসকাটা দূর্বার যুব সংঘের সদস্যদের গচ্ছিত প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সংগঠনের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। জানা গেছে খাসকাটা দূর্বার যুব সংঘ স্থাপনার পর প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত সুনামের সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু তৎকালীন সভাপতি গাজী আশরাফ হোসেন পবিত্র হজ্বে যাওয়ার সময় সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর করেন আবিদ হাসান আবেদার’র কাছে। দায়িত্ব গ্রহণের বছর খানেকের মধ্যে সকল নিয়মনীতি উপেক্ষা করে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে আবিদ হাসান আবেদার’র বিরুদ্ধে। গ্রাহকরা বলছেন, সাধারণ গ্রাহকদের বোকা বানাতে ও সমাজসেবার আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আবিদ হাসান আবেদার’র নিজের আপন ভাই, ভাতিজা, ভাগ্নি জামাইকে নিয়ে মনের মত কমিটি তৈরি করেছেন।
গ্রাহকদের অভিযোগ, সমাজ সেবার নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছরের শেষে লাভ-লোকসানের হিসাব হওয়ার কথা থাকলেও টাকা আছে বলে কাউকে কোন হিসাব দেয়া হতো না। এমন জল্পনা-কল্পনার মধ্যে হঠাৎ গত কয়েক মাস আগে সমিতির ক্যাশিয়ার শেখ আবু বক্কর তার নিজ ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করে ‘বাই বাই বাংলাদেশ’। এটি দেখে ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে সকল সদস্যদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সদস্য ভাবতে থাকে ক্যাশিয়ার সদস্যদের টাকা ফেরত না দিয়ে বিদেশ যাওয়ার পায়তারা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে সদস্যদের সঞ্চয়কৃত অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান সাধারণ সদস্যদরা। এছাড়া আত্মসাৎকৃত অর্থ বুঝে পাওয়ার আশায় সমাজসেবা সহ উপজেলার বিভিন্ন নেতাদের দ্বারস্থ হচ্ছে শতাধিক সদস্য। এদিকে খাসকাটা দূর্বার যুব সংঘের সদস্য মোঃ আব্দুল মজিদ, ছন্নত গাজী, কুদ্দুস হোসেন, মোশারফ হোসেনসহ অনেকেই বলেছেন, সভাপতি ও বুড়িগোয়ালিনীর ০১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গাজী আবিদ হাসান আবেদার, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুস সালাম গাজী, ক্যাশিয়ার আবু বাক্কার ও ক্রীড়া সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কর্তৃক অত্র সংগঠনের প্রায় তিন কোটি টাকার হিসাব না দিয়ে তালবাহানা শুরু করেছে। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি বছরের শেষে সকল সদস্যদের সামনে বাৎসরিক লাভ-লোকসানের হিসাব সম্পাদনের কথা থাকলেও আবেদার মেম্বার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কথা বলে কয়েক মাস টালবাহানা করে এসেছেন।
সাধারণ সদস্যদের দাবি সমিতির মেরে আবেদার মেম্বার জমি ক্রয় ও ব্যবসায়ীক কাজে লাগিয়েছেন। তারা আরো জানান, গত ২৬ ফেব্রæয়ারি সংগঠনের সাধারণ সদস্যরা মানববন্ধন করে। তাছাড়া সমাজসেবা ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের দ্বারস্থ হয়েছ কিন্তু কিছুতেই কোন কাজ হচ্ছে না। তাদের অভিযোগ, আবেদার সংগঠনের আত্মসাৎকৃত অর্থ কাজে লাগাচ্ছে সব জায়গায়। সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কিরণ মন্ডল বলেন, ‘খাসকাটা ক্লাব নিয়ে আমরা খুব সমস্যায় আছি। প্রতিমাসেই আমাদের রিপোর্ট করতে হয়। আজকেও একটা রিপোর্ট যাচ্ছে। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ক্যাশিয়ার অঙ্গীকারনামা দিয়েছে’। তিনি আরো বলেন, ‘এপ্রিল মাসের ১ তারিখে তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এ টাকা জমা করার কথা থাকলেও বিভিন্ন তালবাহানা করছে বর্তমান কমিটি। সাধারণ সদস্যরা প্রায় তিন কোটি টাকার দাবি করলেও সভাপতি-সম্পাদক ক্যাশিয়ার সমাজসেবার অধীনে এক কোটি নয় লক্ষ টাকার একটি হিসাব দিয়েছে। এর মধ্যে ৪০ লক্ষ টাকার একটি চেক জমা করার জন্য অঙ্গীকারনামা দিয়েছে আর বাদবাকি টাকা খুব তাড়াতাড়ি জমা করবে’। তবে সমাজসেবার রেজিস্ট্রেশন কিভাবে দীর্ঘদিন ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে এমনটা জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা।
অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাইক্রো রেগুলেটরি অথরিটির অনুমতি ছাড়া ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা না করার কঠোর নির্দেশনা থাকলেও খাসকাটা দূর্বার যুব সংঘের কমিটি সরকারি অর্থ ফাঁকি দিয়েছে এমন মন্তব্য সমাজসেবার অন্য একজন কর্মকর্তার। খাসকাটা দূর্বার যুব সংঘের সভাপতি গাজী আবেদ হাসান (আবেদার) বলেন, ‘অভিযুক্ত ক্যাশিয়ারকে আমি ধরে নিয়ে এসেছি। সে নিজে স্বীকার করেছে টাকা নিয়েছে। তার ভাইয়েরা ইতিমধ্যে জমি বিক্রি করে টাকা দেয়ার প্রতিশ্রæতি নিচ্ছে। আমি আত্মসাতের বিষয়টা কিছুই জানি না উপরন্ত আমি অনাদায়ী টাকা আদায় করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর কিছু সদস্য আমার উপর মিথ্যা দোষারোপ করছে বলে জানান তিনি’। অন্যদিকে সাধারণ সদস্যদের দাবি অনতিবিলম্বে তাদের জমাকৃত অর্থ তাদের মাঝখানে বুঝিয়ে দেয়া হোক।