Site icon suprovatsatkhira.com

শ্যামনগরে ড্যানিশ রাজকুমারীর আগমনে উৎসবের আমেজ

জি এম মাছুম বিল্লাহ, সুন্দরবনাঞ্চল প্রতিনিধি : বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের উপজেলা শ্যামনগরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ডেনমার্কের রাজকুমারী ম্যারি এলিজাবেথ ডোনাল্ডসনের আগমনে শ্যামনগর জুড়ে সর্বত্র উৎসবের আমেজের পাশাপাশি উপজেলার সর্বত্র নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। দেশের সর্ব দক্ষিণের এই জনপদটি বিভিন্ন সময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। গতবছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমন উপলক্ষে পুরো শ্যামনগর সেজেছিল এক বর্ণিল সাজে। এবারও তার ব্যাত্যয় ঘটেনি। দেখা গেছে, দেশের রাস্ট্রীয় মেহমানের নির্বিঘেœ সব জায়গায় যাতায়াতের জন্য তৈরি করা হয়েছে নতুন রাস্তা এবং সংস্কার করা হয়েছে পুরাতন রাস্তাগুলোও।

২৭ এপ্রিল (বুধবার) কক্সবাজার থেকে সকাল ৯টায় সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন ড্যানিশ রাজকন্যা। সকাল সাড়ে ৯টায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের শেখ বাড়ির সংলগ্ন বিলে আগে থেকেই তৈরি করা হয়েছে তিনটি হেলিপ্যাড সেখানেই নামবেন ম্যারি এলিজাবেথ ডোনাল্ডসন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে রওনা হবেন মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কুলতলী গ্রামে। প্রধান রাস্তা থেকে পায়ে হেঁটে গ্রামে প্রবেশের সময় সিপিপির ইউনিয়ন টীম লিডার জগদীশ, কুলতলী গ্রামের রমেশের স্ত্রী টুম্পা ও বিমানেশের স্ত্রী পুষ্পার সাথেও কথা বলবেন তিনি। পরে ডেনমার্কের অর্থায়নে নির্মিত সাইক্লোন শেল্টার পরিদর্শন করবেন। ডেনমার্কের অর্থায়নে আগে থেকে খননকৃত খাল ও পানি থেকে উপকৃত কৃষকদের সাথে কথা বলবেন। জলাবদ্ধতা নিরসনে কুলতলী থেকে খাল খননের বিষয়ে খানে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকটি বাড়ি পরিদর্শন করারও কথা আছে।

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালি বেড়ীবাঁধ ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করবেন। আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার ভ্রমণ করে কলাগাছিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। কলাগাছিয়া থেকে ফিরে বরসা রিসোর্ট দুপুরের খাবার সেরে রওনা দেবেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। ঢাকা থেকে ওই রাতেই ডেনমার্কের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবেন বলে জানা গেছে। তবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও পিআইডি ছাড়া কেউ সরাসরি সংবাদ সংগ্রহের সুযোগ পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন জেলা তথ্য কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক। শুধুমাত্র নিরাপত্তার স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্ত বলেও জানান তিনি। মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অসীম মৃধা বলেন, ডেনমার্কের রাজকন্যার আগমন উপলক্ষে মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। অতিথিকে বরণ করতে উপকুলবাসীর সাথে জনপ্রতিনিধিরাও অধীর অপেক্ষায় আছে। কুলতলী গ্রামের টুম্পা বলেন, একটা দেশের রাজকন্যা আমার বাড়িতে আসবে আমি এর চেয়ে আর কি প্রত্যাশা করতে পারি।

আমার তার কাছে কোনো কিছুই চাওয়া নেই। তিনি আমাদের অনেক কিছুই দিয়েছেন। শুকনা মৌসুমে যখন ধান বা অন্যান্য ফসল চাষ করতে পারতাম না তখন তাদের অর্থায়নে এখানে খাল খনন করেছেন সি এন আর এস নামে একটি এনজিও তার সুফল আমরা ভোগ করে চলেছি। একই গ্রামের পুষ্প বলেন, রাজকুমারি আসছেন আমাদের অজ পাড়াগাঁয়ে। সেজন্য আমার ভাঙা ঘরটা একটু লেপে পুসে ঠিক করেছি। অন্ততপক্ষে যেন একটু বসতে পারে। মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন সিপিপির টিম লিডার জগদিশ মÐল বলেন, আমার সৌভাগ্য যে উনি আমাদের ইউনিয়নে আসছেন এবং উনার সাথে আমার একটু কথা বলার সুযোগ হবে। আমি আসলে নিজেকে ঠিক ধরে রাখতে পারছি না। এতো বড় একটা দেশের রাজকন্যা আমার সাথে কথা বলবে! তিনি আরো বলেন, আমি জানানোর চেষ্টা করব জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় তখন এই এলাকার অবস্থা সম্পর্কে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে সিপিপি সদস্যরা জীবন বাজি রেখে দুর্যোগ মোকাবেলায় স্থানীয়দের সাথে যুক্ত হয়ে যে কার্যক্রম করে থাকে সেটা জানানোর চেষ্টা করব। সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনীর স্টেশন অফিসার নুরুল আমিন বলেন, এ সফরের জন্য সর্বত্র নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে বন উপকুল সর্বত্র। অতিথির জন্য নির্মিত হয়েছে নতুন হেলিপ্যাড। উপকুলবাসী অকৃত্রিম স্বাগত জানাতে তাদের কাঁচাগৃহকে কাঁদাপানিতে লেপে দিয়েছে। রাস্তা সংস্কার হয়েছে, যাতে অতিথির পথ চলতে কষ্ট না হয়। আর নিরাপত্তায় জড়িত সব প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হয়েছে। তারা পাহারা দিচ্ছে পানিতে, জঙ্গলে, ঘরে বাড়িতেও। এ ক’দিন নিষেধাজ্ঞা নয় অতিথি’র নিরপত্তার স্বার্থে সুন্দরবনে ঢুকতে পারবে না সাধারণ পর্যটকরা। মাছধরা জেলেদেরও অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version