এপ্রিল ১১, ২০২২
তপোবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
জি এম মাছুম বিল্লাহ, সুন্দরবনাঞ্চল প্রতিনিধি : শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে তপোবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছে সুবিধাভোগী কমিটি। নতুন কমিটি না থাকায় পূর্ববর্তী কমিটি বিরাট বড় মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। ভুয়া তারিখ ও নিয়োগ বোর্ড দেখিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোটা টাকার বিনিময় নিয়োগ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষককে। নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ নিয়ে বহাল তবিয়তে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হলেও বিভিন্ন তাল বহানা করে এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির একাধিক সদস্যের। এদিকে ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বে থাকা সভাপতি অসীম মন্ডল জানান, ‘কমিটির মেয়াদ অতিরিক্ত সময় তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নিয়মিত কমিটি ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া বৈধ না। নিয়োগের সকল বিষয় গোপন রাখা হয়েছে কোন তথ্য চাইলে দিতে বিভিন্ন তালবাহানা করছে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন কমিটি ছাড়া প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হল কি করে? নিয়োগের আসল রহস্য হল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রামরঞ্জন বিশ্বাস ২০২১ সালের অক্টোবরে অবসর গ্রহণ করার কথা থাকলেও তিনি আবেদন করে ২ বছর চাকুরি মেয়াদ বর্ধিত করার জন্য আবেদন করেন। তিনি যোগসাজসে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পাতানো নাম মাত্র নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে মনোদীপ কুমার সরকারকে উত্তীর্ন করে নিয়োগ প্রদান করেছেন’। অসীম মন্ডল আরো জানান, ‘সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি ছাড়া এডহক কমিটি বা মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি নিয়োগ প্রদান করতে না পারায় নিয়োগটি নির্দ্বিধায় প্রশ্ন বিদ্ধ। রাম রঞ্জন মন্ডলের বিরুদ্ধে ইতো পূর্বে অর্থের বিনিময়ে আয়া, পরিচ্ছন্নতা কর্মি, কম্পিউটার অপারেটর কাম অফিস সহকারী পদে নিয়োগ বাণিজ্যেও বিরুদ্ধে পত্র পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয় এবং তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ভূমি দাতার ছেলে বিজয় প্রসাদ বিশ্বাস বাদী হয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়া ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া সত্বেও প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার লোভে বোর্ডে এডহক কমিটি গঠনের আবেদন করতে দেরি করেন। এডহক কমিটি গঠনের আবেদন করতে কয়েক মাস দেরি হওয়ার কারণে বোর্ড বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। ২৩-০৩-২০২২ তারিখ মনোদীপ কুমার সরকার বনশ্রী শিক্ষা নিকেতন (মাঃ বিঃ) সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) পদে থেকে পদত্যাগ পত্র দিয়েছেন। ২৪-০৩-২০২২ তারিখ ম্যানেজিং কমিটির মিটিং এ পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করে তাকে বিদ্যালয়ে থেকে অব্যহতি প্রদান করা হয়। এরপর তিনি তপোবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় এ যোগদান করেছেন’। তিনি আরো জানান, ‘উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস নিয়োগ সংক্রান্ত কোন কাগজ পত্র দেখাতে পারেননি এমনকি তারাও বিষয়টি অবগত নয়। এ বিষয়ে নিউজ প্রকাশ না করার জন্য বিভিন্ন ভাবে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এ প্রস্তাবে রাজি না হলে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করার হুমকি প্রদর্শন করা হচ্ছে’। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাম রঞ্জন বিশ্বাসকে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে তুমি জানারকে তোমার জানার অধিকার নেই। তোমার জানার এতো কৌতূহল কেন? আমি আপনাদের নামে থানায় জিডি করবো। থানায় ডাকাবো আইনের ব্যবস্থা নেব। ওসি সাহেবের সাথে কথা হয়েছে’। এর আগে বিদ্যালয়ে নিয়োগের বিষয় অনুসন্ধানে গেলে রামরঞ্জন বিশ্বাস তথ্য গোপান করে বলেন, ‘কবে নিয়োগ হয়েছে বা কমিটির মেয়াদ কবে শেষ হয়েছে আমার মনে নেই। আমি প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক আমার ছেলে বিচারক আমি আপনাদের দেখে নেব। আমি কোন তথ্য দিতে পারবো না। পারলে আপনারা সংগ্রহ করে নেন’। এদিকে সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোদীপ কুমার সরকার মোবাইল ফোনে প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি তোমাদের টাকা দেব নিউজ করার প্রয়োজন নেই’। এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নূরমোহাম্মদ তেজারত সাহেবের নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি থাকা অবস্থায় নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। আমার অফিসে এসে কথা বলেন বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন কাছে নিয়োগের বিষয় একাধিক বার ফোন দিলেও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। 8,607,823 total views, 15,702 views today |
|
|
|