Site icon suprovatsatkhira.com

একাধিক মাছের আড়ৎ ভাংচুর-লুটপাট ও ব্যবসায়ীদের পিটিয়ে জখম

দেবহাটা প্রতিনিধি : আইন শৃঙ্খলা সভার রেজুলেশনকৃত সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেবহাটা উপজেলা প্রশাসনের ইজারা প্রদত্ত কুলিয়ার বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেণু পোনার বাজারে গভীর রাতে তান্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিজিবি’র কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে। রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে বিজিবি’র কথিত সোর্স নামধারী শহরের রাজারবাগান কলেজ মোড় এলাকার শফিক, তালতলা এলাকার মাছুমসহ ৪/৫ জন উশৃঙ্খল যুবককে সাথে নিয়ে সাতক্ষীরা ৩৩ ব্যাটেলিয়ানের ঝাউডাঙ্গা ক্যাম্পের বিজিবি সদস্য মিজান এবং বাঁকাল চেকপোষ্টের বিজিবি সদস্য মহাসিনের নেতৃত্বে ৮/১০ জন বিজিবি সদস্য উদ্ধর্ত্তন কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে এবং আইন শৃঙ্খলা সভার সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৩৩ ব্যাটেলিয়ানের গন্ডি পেরিয়ে নীলডুমুর ১৭ ব্যাটেলিয়ানের আওতাভুক্ত দেবহাটার কুলিয়াতে গলদার রেণু পোনার বাজারে ঢুকে বেআইনীভাবে এ তান্ডব চালায়।

এসময় তালা ভেঙে জোরপূর্বক বেশ কয়েকটি মাছের ঘরে হামলা, আসবাবপত্র ভাংচুর ও ঘুমন্ত মাছ ব্যবসায়ীদের পিটিয়ে জখম করেন ওইসব বিজিবি সদস্য ও তাদের সাথে থাকা কথিত সোর্স নামধারীরা। বিজিবি’র অতর্কিত হামলা ও বেদম প্রহারে ঘুমন্ত ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদসহ বেশ কয়েকজন আহত হলে ক্ষুদ্ধ ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়ে বিজিবি। এক পর্যায়ে তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষন করে গোটা এলাকায় আতংক ছড়িয়ে আশু মার্কেট অভিমুখে থাকা সোর্স নামধারী চাঁদাবাজ ও মাদকসেবীদের বহনকারী একটি রেজিস্ট্রেশন বিহীন প্রাইভেটকারে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে সোর্সদের সাথে নিয়ে পালিয়ে যায় বিজিবি সদস্যরা। খবর পেয়ে রাতেই দেবহাটা থানা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উত্তেজিত মাছ ব্যবসায়ী ও আড়ত মালিক-শ্রমিকদের শান্ত করেন।

তাৎক্ষনিক সখিপুর ফায়ার স্টেশন ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন বিহীন জ্বলন্ত প্রাইভেটকারটির আগুন নিয়ন্ত্রন ও সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ মাহাসড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক করেন। এদিকে বিজিবি সদস্য ও তাদের সোর্স নামধারী চাঁদাবাজ, মাদকসেবীদের হামলা এবং বেদম প্রহারে গুরুতর আহত গলদার রেণু ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। কুলিয়া মৎস্য ও রেণু সেডের একাধিক আড়ৎ মালিক গলদার রেণু ব্যবসায়ীরা জানায়, যুগ যুগ ধরে উপজেলা প্রশাসনের ইজারা প্রদত্ত কুলিয়া মৎস্য ও রেণু সেডটিতে দেশীয় বিভিন্ন নদ-নদী থেকে আহরিত এবং হ্যাচারীতে উৎপাদিত বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেণু পোনা ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা করে আসছেন ব্যবসায়ীরা।

গেল দু’বছর সীমান্ত এলাকা থেকে অন্তত ৮-১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কুলিয়া রেণু বাজার থেকে ক্রয়-বিক্রয়কৃত বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেণু পোনা সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণ ও বিজ্ঞান সম্মত পরীক্ষা নীরিক্ষা ছাড়াই কেবলমাত্র ‘ভারতীয়’ আখ্যা দিয়ে জব্দ, বিনষ্ট করে রেণু ব্যবসায়ী, ঘের মালিক, মৎস্য চাষী এবং বাজারের ইজারা গ্রহীতাদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতিসাধণ ও হয়রানী করে আসছিল বিজিবি’র কিছু বিপথগামী সদস্যরা। এদের মধ্যে সাতক্ষীরা ৩৩ ব্যাটেলিয়ানের আওতাধীন ঝাউডাঙ্গা ক্যাম্পের বিজিবি সদস্য মিজান এবং বাঁকাল চেকপোষ্টের বিজিবি সদস্য মহাসিনের এমন বেপরোয়া ও আইন বর্হিভূত কর্মকান্ডে সবচেয়ে বেশি হয়রানী ও ক্ষতিসাধন হচ্ছেন ব্যবসায়ী, মৎস্য চাষী, ঘের মালিক ও খামারীরা। তারা বিভিন্ন সময়ে মাছ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা চাঁদা হিসেবে গ্রহণ করে। আর যারা চাঁদা দিতে আপত্তি করে সেসব ব্যবসায়ীদের মাছের আড়তে ঢুকে হয়রানীসহ গলদার রেণু পোনা ‘ভারতীয়’ আখ্যা দিয়ে জব্দ ও বিনষ্ট করে ক্ষতিসাধণ করেন। সম্প্রতি রেণু পোনা ব্যবসায়ী, মৎস্য চাষী, ঘের মালিক, বাজারের ইজারাগ্রহীতাদের ক্ষতিসাধনের হাত থেকে রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছেন দেবহাটা উপজেলা প্রশাসন।

আইন শৃঙ্খলা সভায় রেজুলেশনের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকা ব্যাতিরিকে বিশেষ করে কুলিয়া মৎস্য সেডে সুষ্পষ্ট প্রমাণ বা বিজ্ঞান সম্মত পরীক্ষা নীরিক্ষা কিংবা উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া গলদার রেণু পোনা জব্দ বা বিনষ্ট না করতে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহ বিজিবিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অথচ সেই নির্দেশনা লংঘন করে রোববার গভীর রাতে বিপথগামী বিজিবি সদস্য মিজান এবং মহাসিনের নেতৃত্বে অতর্কিত রেণু পোনার বাজারে ঢুকে তান্ডব চালানোর পাশাপাশি মাছের ঘর, আসবাব পত্র ভাংচুর এবং আবু সাঈদসহ কয়েকজন আড়ৎ মালিক ও ব্যবসায়ীদের পিটিয়ে জখম করেন বিজিবি সদস্য ও তাদের সোর্স নামধারী চাঁদাবাজ-মাদকসেবীরা। এ ব্যাপারে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ ওবায়দুল্লাহ বলেন, বিজিবি ও তাদের সোর্সদের সাথে কুলিয়ায় রেণু বাজারের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মারপিটের খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে পুলিশ। একই সময়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে কুলিয়া ব্রীজ ও রেণুর বাজার থেকে প্রায় এক হাজার গজ দূরত্বে আশু মার্কেট অভিমূখে জলন্ত একটি প্রাইভেট কারের আগুন নিয়ন্ত্রন এবং মহাসড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক করেন। বর্তমানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান ওসি। এদিকে এসংক্রান্ত বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি বিজিবি।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version