মাজহারুল ইসলাম : অধিকাংশ মানুষের ঈদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। আর মাত্র দু’তিন দিনের মধ্যেই মুসলিম বিশ্বের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। তাই এখনই নিজেকে পরিপাটি করার সময়। সে কারণেই ঈদের আগের শেষ সময়টায় নিজেকে একটু পরিপাটি করে তুলতে ছেলে-বুড়ো সবাই চুল-দাঁড়ি কাটার প্রয়োজনে নরসুন্দরদের কাছে যাচ্ছেন। আর সে কারণেই ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরার নরসুন্দররা। তবে চুল কাটানোর কাজে থেমে নেই শিশুরাও। মা-বাবার সাথে সেলুনে এসে চুল কাটানোর জন্য অপেক্ষা করছেন ছোট্ট শিশুরাও। শহরের বিভিন্ন এলাকায় সেলুন ও জেন্টস পার্লারগুলোতে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতি ঈদের মতো এবারও ব্যস্ত সময় পার করছেন নরসুন্দররা। স্বাভাবিক দিনের সময়ের চেয়ে পারিশ্রমিকও নিচ্ছেন বেশি। করোনার কারণে বিগত দুই বছর মানুষ শান্তিতে ঈদ উদযাপন করতে পারেনি।
এবছর অন্যান্য বছরের মতই খশির ঈদ হচ্ছে। ফলে কাস্টমারের কাছে একটু অতিরিক্ত দাবি করলেও মানুষ খুশি হয়ে তা দিচ্ছে। নরসুন্দররা বলছেন, দিনরাত সমান তালে কাজ করেও সিরিয়াল কমাতে পারছি না। সময় মত অনেকের চুল দাড়ি কেটে দিতে না পারায় রাগ করে চলেও যাচ্ছে। আবার কিছুক্ষণ পরে ফিরেও আসছেন। তারা বলছেন, কাজের চাপ থাকায় অনেকে সেলুনে নির্ঘুম রাত পার করছেন। শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) রাতে শহরের সেলুনগুলোতে চুল কাটার জন্য অপেক্ষায় মানুষের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মত। শহরের নিউ মার্কেট মোড়, সঙ্গীতা সিনেমা হলের মোড়, কুখরালী মোড়, চালতেতলা মোড়সহ এলাকার মোড়ে মোড়ে সেলুনের দোকানে সিরিয়ালে বসে অপেক্ষা করছেন চুল-দাড়ি কাটতে আসা লোকজন। কুখরালী মোড়ের মায়ের আশির্বাদ হেয়ার কাটিংয়ের স্বত্ত¡াধিকারী গনেশ জানান, তার সেলুনে ৩ জন কাজ করেন।
সবাই ব্যস্ত কারোরই দম ফেলার ফুসরত নেই। আক্তার হোসেন নামে স্থানীয় বাসিন্দা জানান, দিনের বেলায় কয়েকবার এসেছিলাম। সিরিয়াল খালি না পেয়ে ফিরে গিয়েছি। তাই সন্ধ্যার সময়টা বেছে নিয়েছি। এই সময় ব্যস্ততা একটু কম থাকায় সিরিয়াল পেয়েছি। বাঁকাল এলাকার সোহাগ হোসেন নামে এক যুবক বলেন, অন্য সময় মাথার চুল কাটাতে ৫০ টাকা লাগলেও এখন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ টাকা লাগছে। শহরের সুলতানপুর এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম জানান, ‘সব সময় চুল-দাড়ি কাটাতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা খরচ হয়। এখন ঈদের সময় সেই চুল-দাড়ি কাটাতে ১শ’ থেকে ১শ’৫০ টাকা পর্যন্ত লাগছে। এরপর আবার সিরিয়াল পাওয়া নিয়ে কথা। তিনি আরো জানান, আমি সারাদিন ঘুর ঘুর করে কোনরকমে ছেলেটার চুল কাটিয়েছি। রাত বাজে ১২টা এখন আমার সিরিয়াল আসলো। সাতক্ষীরা জেন্টস পার্লারের মালিক বাপ্পা বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন অনেক কষ্টে ছিলো এ পেশার লোকজন। ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে।
সেলুনগুলোতে মানুষ আসছে। গত দুই-তিন দিন আগ থেকে কাস্টমারের চাপ কিছুটা বেড়েছে। ব্যস্ততার কারণে বাড়িতেও যেতে পারিনি। শহরের সঙ্গীতা মোড় এলাকার নরসুন্দর প্রকাশ বলেন, ‘দাঁড়ি সেভ করা ও কাটার জন্য ৭০ টাকা এবং চুল কাটতে দিতে হচ্ছে ১শ’ টাকা। সবকিছুর দাম বেশি, তাই পারিশ্রমিক বাড়ানো হয়েছে’। সার্কিট হাউস মোড় এলাকার নরসুন্দর বিকাশ চন্দ্র নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘দুই ঈদ ও পূজা কেন্দ্রিক তাদের ব্যবসা। তাই ঈদের সময় সারারাত কর্মব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ঈদের এ মৌসুমে পারিশ্রমিক একটু বেশি নেওয়া হয়। তবে তা জোর করে নয়। যারা সেলুনে আসেন খুশি হয়েই বেশি করে দেন। কলেজ ছাত্র সাকিবুল হাসান বলেন, ‘চুল-দাড়ি কাটানোর জন্য খুশি করে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দিতে পারি। তবে দ্বিগুণ দাম বাড়ানোটা ঠিক নয়। ঈদ সবার জন্য এসেছে শুধু তাদের জন্যর একার নয়’।