Site icon suprovatsatkhira.com

ডা: শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে স্বার্থান্বেশী মহল

ডেস্ক রিপোর্ট : ‘যে রোগে নিজের বাবা ও ভাইকে হারিয়েছি, সেই রোগে আমিও মৃত্যু পথযাত্রী ছিলাম। ভগবানের কৃপায় আর সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ থেকে বেরিয়ে সিবি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এখনো বেঁচে আছি। আমি যদি ওই সরকারি হাসপাতালে থাকতাম তাহলে হয়তো এতদিনে আমি আর পৃথিবীতে থাকতাম না’।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিকেলে কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলছিলেন তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামের শিবপদ ঘোষের স্ত্রী অশোকা ঘোষ। তিনি বর্তমানে সাতক্ষীরা সিবি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

অশোকা ঘোষ জানান, ‘গত ৯ এপ্রিল শনিবার রাতে হঠাৎ আমার প্রচন্ড পেটে ব্যাথা শুরু হয়। রাতে গ্রাম্য ডাক্তারের চিকিৎসা নেই। তাতে কোন সুরহা না হওয়ায় রবিবার (১০ এপ্রিল) সকালে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই। ভর্তির প্রায় তিনদিন পর সেখানে ডাক্তাররা আমার অপারেশন করানোর প্রস্তুতিও নেয়। কিন্তু হাসপাতালে অজ্ঞান করার ডাক্তার না থাকায় তারা আমাকে অপারেশনের জন্য আরো দুইদিন দেরি করতে বলে। কিন্তু আমি সেই মুহুর্তে পেটের ব্যাথা সহ্য করতে পারছিলাম না। আরো দুইদিন অপেক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। এজন্য আমার মা এবং স্বামীর পরামর্শে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে সাতক্ষীরা সিবি হাসপাতালে ভর্তি হই। পরদিন আমার অপারেশন সম্পন্ন হয়। তিনি আরো জানান, ‘আমাকে যখন সিবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তখন আমি মৃত প্রায়’।

অশোকা ঘোষের মা রেণুকা রানী পাণ বলেন, ‘আমার স্বামীরও একই সমস্যা হয়েছিল। অপারেশনের জন্য খুলনা আড়াইশ বেডে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সে মারা যায়। আমার ছেলেটাও একইভাবে মারা যায়। এজন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপারেশনে সমস্যা দেখে মেয়েকে হারানোর ভয়ে সিবি হাসপাতালে ভর্তি করি। এখানে অপারেশন হয়েছে। আমার মেয়ে এখন সুস্থ্য আছে। এই হাসপাতালের ডাক্তারদের চেষ্টায় ভগবানের কৃপায় আমার মেয়েটা বেঁচে গেছে’।

এদিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অশোকা ঘোষ সাতক্ষীরা সিবি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনাকে পুজি করে সিবি হাসপাতালের বিরুদ্ধে এবং সার্জারী ডাক্তার শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতেছেন একটি স্বার্থান্বেশী মহল। হাসপাতাল ও ডাক্তারের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে বিভিন্ন মাধ্যমে চালাচ্ছেন অপপ্রচার। আর এতে ফুঁসে উঠেছেন রোগী ও অন্যান্য ডাক্তাররা।

জানা গেছে, মহলটি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা: শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছেন। তাদের নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ডা: শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে সমাজে তার সুনাম নষ্ট করার অপচেষ্টা করছেন। ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। তবে ডা: শরিফুল ইসলাম ও রোগীর অভিযোগ, যে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছে সে বিষয়ে রোগী অথবা ডাক্তার কারো বক্তব্য নেয়া হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরার কৃতি সন্তান ডা: শরিফুল ইসলাম দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের চালতেতলা গ্রামের আঃ রহিম মোড়লের ছেলে। তিনি সাতক্ষীরাবাসীর সেবাদানের লক্ষে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যোগদান করেন। পরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি সার্জারি বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পান। স্বপদে থেকে তিনি সব ধরণের জটিল, কঠিন রোগের চিকিৎসাসহ বড় বড় অপারেশন করে যাচ্ছেন। এছাড়া তিনি প্রায় সময় তার নিজ এলাকায় মেডিকেল ক্যাম্প করে বিনামূল্যে অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। তার সকল সামাজিক কার্যক্রম ও ডাক্তারি পেশার সুনাম ক্ষুণœ করতে ডা: শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারমূলক একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডা: শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ওই রোগী যখন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তখন আমি ছুটিতে ছিলাম। সে সময়ে আমি যশোর মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস পরীক্ষার এক্সটার্নাল এ্যাক্সিমিনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম’।

তিনি আরো জানান, ‘আমি ১০, ১১, ১২ ও ১৩ এপ্রিল ছুটিতে ছিলাম। সুতরাং সংবাদে প্রকাশিত অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই’। ডা: শরিফুল ইসলাম জানান, ‘আমি ১৩ তারিখে সাতক্ষীরায় ফিরলে সিবি হাসপাতাল থেকে ফোন দেয় একটা জরুরী রোগীর জন্য। আমি গিয়ে দেখি রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। সে সময়ে রোগী অক্সিজেন ছিল ৮৪ পারসেন্ট। অপারেশনটাও ছিল জটিল। আমি তখনই রোগীর অভিভাবকদের সাথে কথা বলে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেই এবং অপারশেন পরবর্তী রোগী এখন সুস্থ্য আছে। বর্তমানে অশোকা ঘোষের অক্সিজেন আছে ৯৮ পারসেন্ট’।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে অপারেশন না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মেডিকেলে জরুরী কোন অপারেশনের রোগী থাকলে জুনিয়র ডাক্তাররা অপারেশন করেন। যখন তারা কোন বিষয় জটিল মনে করেন তখন আমাকে জানালে আমি সেটার সমাধান করি’।

রোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অজ্ঞান করা ডাক্তারের (এ্যানেস্থেসিয়া) বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার সংকট আছে। কিছু যন্ত্রপাতিও বিকল আছে। যার ফলে অনেক সময় অপারেশন করা সম্ভব হয় না। এতে রোগীরা সেবা বঞ্চিত হয়ে বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতালের দিকে যান। তবে পরিচালনা বোর্ডকে অনেকবার বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা আমাকে সব সময় আশ^স্ত করেছেন’।

তিনি আরো জানান, ‘এ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার সংকট আছে এ বিষয়টা তো সাধারণ মানুষ বা রোগী বুঝবে না। তারা না জেনে না বুঝে সার্জারি ডাক্তারদের দোষারোপ করেন’।

প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে অথচ আমার বক্তব্য নেয়া হয়নি। আমার বক্তব্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে সত্যটা উঠে আসতো। সংবাদটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে প্রকাশ করা হয়েছে’।

ডা: শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ডাক্তারি পেশায় আছি। মানুষকে সেবা দিয়ে আসছি। সেবা দিয়ে যেতে চাই। সেই সাথে সেবা দেয়ার মত যথোপযুক্ত পরিবেশটাও আমাদের প্রয়োজন’।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version