খাজরা (আশাশুনি) প্রতিনিধি) : আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে সুপেয় খাবার পানির বেশ সংকট দেখা দিয়েছে। চারিদিকে লবন পানির এলাকার দীর্ঘ্য দিন অনাবৃষ্টির কারনে এ সংকট আরো প্রকট হতে শুরু করেছে। এ সংকট থেকে মুক্তি পেতে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে পর্যাপ্ত রেইন ওয়াটার হার্ভেষ্টিং সিস্টেম স্থাপন করা জরুরী বলে স্থানীয়দের দাবি।
শুক্রবার (২২ এপ্রিল) সকালে ৪নং ওয়ার্ডের খালিয়া ও ফটিকখালী গ্রাম হতে খালিয়া জালাল মাষ্টারের পুকুর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারা জানান, শুকনো মৌসুম আসলে আমাদের খাবার পানির খুব সমস্যা হয়। পান করার জন্য খাবার পানি সংগ্রহ আমরা পুকুর থেকে করি। পুকুরের পানি কতটা নিরাপদ তাদের জানা নেই, তবে চাহিদা মেটাতে আর বিকল্প নেই। ভোরে অনেকেই কলসি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পানির খোঁজে। কারণ সেটাই পান করবে সবাই, সেটাই ব্যবহার হবে রান্নায়। দীর্ঘদিন ধরেই এ অঞ্চলের মানুষ এ পানি ব্যবহার করে আসছেন। রাউতাড়ায় বিকাশ চন্দ্র মন্ডলের বাড়ির পাশে পানির ফিল্টারে সব সময় খাবার পানি সংগ্রহের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। গজুয়াকাটি গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা এই ফিল্টার থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে।
বিশেষ করে গজুয়াকাটি,ফটিকখালী,নয়বাদ,সুরেরাবাদ এই গ্রাম গুলোতে খাবার পানির তীব্র সংকট লক্ষ্য করা যায়। বিল ও মৎস্য ঘের এলাকাভুক্ত হওয়ায় মিষ্টি পানির কোন উৎস্য নেই বললেও চলে।
খালিয়া,পিরোজপুর,খাজরা,রাউতাড়া,গদাইপুর,চেউটিয়া,তুয়ারডাঙ্গা গ্রাম গুলোতে ব্যক্তি উদ্যোগে পানি বিশুদ্ধকরন প্লান্ট নির্মান করে পানি বিক্রি করছে একাধিক ব্যবসায়ী। কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ী পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট পরিচালনায় পারদর্শি না হওয়ায় কতটুক পানিতে কতটুকু ক্যামিকাল মিশাতে হবে তা সঠিক জানে না। ফলে সে পানিও ব্যবহার দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠতে শুরু করেছে। ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন প্রচেষ্টার বাস্তবায়নে একটি পানির প্লান্ট নির্মান করা হলেও তা বন্ধ আছে দীর্ঘ্য দিন ধরে। এই প্লান্টটি পূনরায় চালু করতে পারলে এই এলাকার সাধারন মানুষ প্রতি লিটার খাবার পানি ৫০পয়সা দিয়ে সংগ্রহ করতে পারবে।
তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায়, খাজরা ইউনিয়নের চারদিকে থৈ থৈ করছে পানি। অথচ তা পান যোগ্য নয়। লোনা পানির মৎস্য ঘের হওয়ায় সুস্বাধু মিষ্টি পানির উৎস্য প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর হতে যে সমস্ত পানির ফিল্টার ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছিল তাও সঠিক রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে অধিকাংশ পানির ফিল্টার অচল অবস্থায় পড়ে আছে।
গরমের সময় প্রাকৃতিক উৎস বেশির ভাগই অচল থাকে। ফলে মানুষকে এই সময় পানি কিনে খেতেও হয়। এই পানির দাম প্রতি লিটার এক টাকা। অতি নিন্ম আয়ের মানুষেরা টাকা দিয়ে পানি কিনে খেতে না পারায় তারা বাধ্য হয়ে অনেক সময় দুষিত পানি পান করছে। ফলে ডায়রিয়ারহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
সংকট দূর করতে ২০১৫ সাল থেকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে চাহিদা মেটানোর কাজ করছে বিভিন্ন সংস্থা। এবছর ব্রাকের মাধ্যমে ইউনিয়নের ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের প্রায় বাড়িতে রেইন ওয়াটার হার্ভেষ্টিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও রেইন ওয়াটার হার্ভেষ্টিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। এই বছর বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে এই দুটি ওয়ার্ডে সৃুপেয় খাবার পানির চাহিদা অনেকাংশে মিটবে।
মিষ্টি পানির উৎস্য সংরক্ষণ,পর্যাপ্ত রেইন ওয়াটার হার্ভেষ্টিং সিস্টেম স্থাপনসহ সুপেয় খাবার পানির চাহিদা মেটাতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।