নুরুল ইসলাম, খাজরা (আশাশুনি) প্রতিনিধি: আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নে তুলনামূলক কমেছে খেলার মাঠ। সেই সাথে খেলা-ধুলা পরিচালনার অভাবে খেলা-ধুলার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে উঠতি বয়সের যুবক,স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরসহ অনেকেই।
এক সময়ে দেখা যেত তুয়ারডাঙ্গা হাইস্কুল,কাপসন্ডা স্কুল, খাজরা হাইস্কুল মাঠ, খালিয়া দাশের বিল,রাউতাড়াসহ ইউনিয়নের প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে ছোট বড় খেলার মাঠ ছিল। বিকাল বেলা বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে এসব বিলে ও মাঠে ক্রিকেট,ফুটবল,হা-ডু-ডু খেলা অনুষ্ঠিত হত। মাঝে মাঝে স্থানীয় বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন খেলার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হত। সময়ের বিবর্তনে এখন এগুলো আর চোখে পড়ছে না। হাতে গোনা কয়েকটি ক্লাবের নাম শোনা গেলেও তাদের কার্যক্রম নেই বললেও চলে। তুয়ারডাঙ্গা ও কাপসন্ডার মাঠ থাকলেও নেই খেলোয়াড়। ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠটি সীমানা প্রাচীর দেওয়ায় সেখানেও এখন আর নেই খেলার পরিবেশ। খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মান হওয়ায় সেখানেও খেলার মাঠ সংকট।
কারন হিসিবে স্থানীয়দের মতামত,ইউনিয়নের অধিকাংশ বিলে মৎস্য ঘের ও বার মাস সবজির চাষ হওয়ায় এখন আর খোলামেলা বিল পাওয়া যায় না। এছাড়াও ঘনবসতির কারনে অনেকে বিলের মধ্যেও বসতি স্থাপন করেছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ গুলো এখন আর উন্মুক্ত থাকে না। অনেক মাঠ ইতিমধ্যে সংস্কার না করায় খেলার অনুপোযুক্ত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ভাবে ছেলেমেয়েদের খেলার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে কোন ব্যক্তি বিশেষ বা সংগঠন চোখে পড়ে না।
যার ফলে উঠতি বয়সের যুবক-স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থীরা খেলা-ধুলার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। মোবাইল গেমের প্রতি আসক্তি হচ্ছে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা। যুব সমাজ বিভিন্ন অপকর্মে যুক্ত হচ্ছে।
আজ থেকে ১০-১৫ বছর পেছনে তাকালেই একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ধারণা পাওয়া যাবে। বিগত বছরগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বসতবাড়ি। ফলে পতিত জমিগুলো আর ফাঁকা পড়ে না থাকায় ছেলে-মেয়েরা তাদের নিজ নিজ এলাকার স্কুল বা কলেজের মাঠে খেলাধুলা করতে পারছে না।
বর্তমানে খেলার মাঠ কমে যাওয়ার কারণে ছেলেমেয়েরা প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। যার ফলে তাদের আচরণগত পরিবর্তন হচ্ছে। ইচ্ছাকৃত ভাবে স্কুল পালাচ্ছে। কিংবা সেখানকার নিয়মশৃংখলা ভঙ্গ করছে। মাতা-পিতা বা অভিভাবকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ছেলেমেয়েরা পর্নোগ্রাফি বা মাদকে আসক্ত হচ্ছে দিন দিন। কৈশোরে যে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, খেলাধুলা, গান-বাজনা, অভিনয়, অংকন, কবিতা লেখা এবং অন্যান্য কাজের মাধ্যমে বিকাশ ঘটার কথা, তারা অপরাধমুখী হয়ে উঠছে।
জাতির ভবিষ্যৎ অগ্রগতি নির্ভর করছে কিশোর-কিশোরীদের ওপর। এরাই আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব দেবে, হবে জাতির কর্ণধার। তাই কিশোর-কিশোরীদের অধ্যয়ন, সৃজনশীলতা, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করা জরুরী। প্রতিটি স্কুলে মাঠ থাকার পাশাপাশি সেখানকার পরিবেশ হওয়া দরকার আনন্দময় ও প্রণোদনাপূর্ণ। তবেই জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হবে আমাদের নতুন প্রজন্ম। এজন্য সরকারিভাবে খাজরা ইউনিয়নে নতুন নতুন খেলার মাঠ তৈরী ও খেলা-ধূলার প্রতি সকলের আগ্রহ সৃষ্টিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন এলাকাবাসী।