Site icon suprovatsatkhira.com

খালেক  মন্ডল  ও রোকনুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ রায় কার্যকরের দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ

ডেস্ক রিপোর্ট: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাতক্ষীরায় হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতনের মত মানবতা বিরোধী অপরাধে সাতক্ষীরার জামায়াত নেতা সাবেক এমপি আব্দুল খালেক মÐল ও খান রোকনুজ্জামানকে মৃত্যুদÐ দিয়েছে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রইব্যুনাল। বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
ফাঁসির দÐাদেশ প্রাপ্ত আব্দুল খালেক মÐল সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খলিলনগর গ্রামের লাল চাঁদ মÐলের ছেলে। খান রোকনুজ্জামান সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোলের মহব্বত আলী খানের ছেলে।

এদিকে খালেক মÐল ও খান রোকনুজ্জামানের ফাঁসির রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে জেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। মামলার রায় দ্রæত কার্যকর করার দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জিাক পার্ক থেকে মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহরের পাকা পুলের পাশে মুক্তিযোদ্ধা সড়কে এক পথসভা করে। মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সরকারের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী রিয়াজ, সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জি, ওবায়দুস সুলতন বাবলু, ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান প্রমুখ। বক্তারা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাতক্ষীরার প্রথম রায় এটি। ৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেও খালেক মন্ডল সদর্পে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে সাতক্ষীরায়। এমনকি এই কুখ্যাত ব্যক্তি মহান সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে,যেটা সাতক্ষীরার জন্য কলঙ্ক। দেরিতে হলেও ফাঁসির রায়ের মধ্য দিয়ে সেই কলঙ্ক কিছুটা হলেও মুক্ত হয়েছে। বক্তারা অবিলম্বে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি জানান।

প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাঁচ ব্যক্তিকে জবাই ও বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যার অভিযোগে সাতক্ষীরা সদর আসনে জামায়াতের সাবেক সাংসদ আব্দুল খালেক মÐলসহ নয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ২ জুলাই জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিমুলবাড়িয়া গ্রামের শহীদ রুস্তম আলী গাজীর ছেলে নজরুল ইসলাম গাজী। পরে মামলাটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
২০১৫ সালের ১৬ জুন ভোরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খলিলনগর মহিলা মাদ্রাসায় বৈঠকের সময় জামায়াত নেতা খালেক মÐলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সাতক্ষীরায় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলার মধ্যে শহীদ মোস্তফা গাজী হত্যা মামলায় সাবেক এই জনপ্রতিনিধিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এর পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে জানতে ২০১৫ সালের ৭ অগাস্ট তদন্তে নামে, যা চলে ২০১৭ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেক মÐল, রোকনুজ্জামান খান, আব্দুলাহ আল বাকী এবং জহিরুল ইসলাম ওরফে টিক্কার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

সেখানে মোট ৩৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্য শুনেছে ট্রাইব্যুনাল।
রেজিয়া সুলতানা চমনই রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন। খালেক মÐলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার। আর পলাতক আসামি খান রোকনুজ্জামানের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।
চূড়ান্ত যুক্তিতর্কে প্রসিকিউশন দুই আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদÐ চান। অন্যদিকে আসামিপক্ষ অভিযোগ থেকে আসামিদের খালাস চেয়ে যুক্তি দেয়।
প্রসিকিউশন ও আসামিক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে গত বছরের ২১ নভেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছিল আদালত।

প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন বলেন, মামলাটি ২০১৫ সালের। পরে ২০১৮ সালের ৫ মার্চ অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যনাল। সে সময় আসামি ছিল চারজন।
তাদের মধ্যে আব্দুলাহ আল বাকী এবং জহিরুল ইসলাম ওরফে টিক্কা খান নামের দুই আসামি বিচারাধীন অবস্থায় মারা যান।

বাকি দুই আসামির মধ্যে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির ও সাতক্ষীরা সদর আসনের সাবেক এমপি আব্দুল খালেক মÐলকে তদন্তের সময়ই গ্রেপ্তার করা হয়। আর সাতক্ষীরার নবজীবন এনজিওর সাবেক নির্বাহী পরিচালক একাত্তরের কসাই হিসেবে পরিচিত খান রোকনুজ্জামান এখনও পলাতক।
গত মঙ্গলবার মামলাটি কার্যতালিকায় এলে ট্রাইব্যনাল রায় ঘোষণার জন্য ২৪ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করে দেয় বলে প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন জানান।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version