ফারুক হোসেন রাজ, কলারোয়া প্রতিনিধি: সরকারি হাসপাতালে স্ত্রীকে মাত্র ১০ টাকায় সিজার (অস্ত্রোপচার) করানো যাবে এ কথা ভাবতে পারেনি ইয়াসিন আলী। স্ত্রীর গর্ভাবস্থার ৯ মাস হলে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে খরচের কথা শুনে অনেকটা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পরে কলারোয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন মাত্র ১০ টাকা খরচে সিজার করানোর খবর।
গত সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিন টাকার টিকিট কেটে ও ৭ টাকায় গাইনি বিভাগে ভর্তি করেন তাঁর স্ত্রী জান্নাত আরাকে (২৩)। ভোরে হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর জন্ম নেয় পুত্র সন্তানের।
বর্তমানে স্ত্রী ও ছেলে দুজনেই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন ইয়াসিন আলী। ইয়াসিন কলারোয়া উপজেলার ৭ নম্বর চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে।
কলারোয়া হাসপাতালের সূত্রে জানা গেছে, কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে অ্যানেসথেসিয়া সার্জনের ঘাটতি ছিল। নতুন করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ৮ জন সহকারী সার্জন (বিসিএস স্বাস্থ্য) যোগদান করেন। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে এখন ১৩ জন এমবিবিএস চিকিৎসক রয়েছেন। হাসপাতালে নারী-পুরুষ ও শিশুদের জন্য পৃথক ৪টি কক্ষে রয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত বেড। পর্যাপ্ত অক্সিজেন ব্যবস্থার সঙ্গে রয়েছে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও নার্স।
এর মাঝে নতুন করে সরকারি হাসপাতালে চালু হয়েছে সব ধরনের অপারেশন ব্যবস্থার পাশাপাশি সিজারিয়ান অপারেশনও।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার জিয়াউর রহমান বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকার কারণে দীর্ঘদিন জরুরি ও সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ ছিল। কিন্তু হাসপাতালে এখন ১৩ জন এমবিবিএস ডাক্তার রয়েছে। এখন উপজেলার সাধারণ মানুষ হাসপাতালের সরকারি খরচ স্বল্প মূল্যের ৩ টাকার টিকিট কেটে ও ৭ টাকায় ভর্তি হয়ে নিয়মিত সকল ধরনের জরুরি ও সিজারিয়ান অপারেশন করতে পারবে। এ জন্য তিনি উপজেলা বাসীকে বেসরকারি হাসপাতাল বা বিভিন্ন ক্লিনিকে না যেয়ে এমবিবিএস ডাক্তারের চিকিৎসা সেবা পরামর্শ গ্রহণের পরামর্শ দেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার শফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে সাধারণ মানুষ এখন থেকে নিয়মিত জরুরি চিকিৎসা সেবাসহ জরুরি ও সিজারিয়ান অপারেশন সরকারি খরচে হতে পারবে। গত সোমবার ভোরে উপজেলার হিজলদি গ্রামের ইয়াসিন আলী তাঁর স্ত্রীকে সরকারি খরচে হাসপাতাল থেকে সিজার করিয়েছেন। এ ছাড়া আমিন উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি হার্নিয়ার অপারেশন হয়েছে।
শফিকুল আরও বলেন, বেসরকারি ক্লিনিকে সিজার হতে গেলে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয় সেখানে সরকারি হাসপাতালে মাত্র ১০ টাকায় সিজার ও জরুরি অপারেশন করানো হচ্ছে। পাশাপাশি বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য উপজেলার সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার আহŸান জানান।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাক্তার হুসাইন সাখাওয়াত বলেন, হাসপাতালে চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসক না থাকলে সেবা বিঘিœনত হয়। সম্প্রতি কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮ জন স্বাস্থ্য ও অ্যানেসথেসিয়া সার্জারি ডাক্তার যোগদান করেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ বছর এসব চিকিৎসকগণ সেবা দেবেন। হাসপাতালে এসে সাধারণ মানুষ সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসাসেবা পাক এটাই আমাদের চাওয়া। একই সাতে হাসপাতাল চত্বর দালালমুক্ত রাখার চেষ্টা অব্যহত আছে।