ফারুক হোসাইন রাজ, কলারোয়া: মাইকিং করে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারী মধ্যে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধক টিকার প্রথম ডোজ নিতে আহ্বান করার পরেই নারী পুরুষ বিভিন্ন বয়সের শিশুরা স্বাস্থ্য বিধি না মেনেই দীর্ঘ সারি দিয়ে টিকা নিতে উপচে পড়া ভিড় জমাচ্ছে ইউনিয়ন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গণটিকাদান কেন্দ্রগুলোতে। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯ টা থেকে উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গনটিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু করে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, করনা প্রতিরোধক টিকা নিতে আসা দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা অধিকাংশ মধ্য বয়সী নারী-পুরুষ। দীর্ঘ এ শাড়ির মধ্যে শতাংশ বিভিন্ন বয়সের শিশু দেখা গেছে। টিকা নিতে আসা অধিকাংশ নারী পুরুষের মুখে ছিল না মাস্ক এমনকি সামাজিক দূরত্ব। গ্রামীণ এসব মানুষের হঠাৎ করোনার টিকা নিতে উপচে পড়া ভিড়ের সামাল দিতে ও স্বাস্থ্য বিধি বিধি মানাতে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ এ জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশের বিভিন্ন টিম মোতায়ন করে শৃঙ্খলা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ । টিকা নিতে আসা অধিকাংশ ব্যক্তি জানান তারা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রশাসনের জরুরি নির্দেশের মাইকিং এ প্রচার শুনে অতি আগ্রহ হয়ে টিকার প্রথম ডোজ নিতে এসেছেন।
উপজেলার ভিখালি গ্রাম থেকে টিকার প্রথম ডোজ নিতে আসা জাহিদ হাসান বলেন, তিনি মাক্স বাড়িতে রেখে এসেছেন। মাঠে কাজ থাকায় আগে টিকা দিতে পারেননি তবে আগামী ২৬ তারিখের পরে প্রথম ডোজ টিকা বন্ধ করে দেবে সরকার পরে নিবন্ধন করা যাবেনা এমন ঘোষণা শুনেই তড়িঘড়ি করে টিকা দিতে এসেছেন।
বিক্রমপুর গ্রাম থেকে আসা রাজু আহমেদ বলেন, আরও কয়েকদিন পরে টিকা নেবো ভেবেছিলাম কিন্তু মাইকিং এ শুনেছি কয়দিন পরে নাকি টিকা আর পাওয়া যাবে না। গতকাল আইডি কার্ড দিয়ে নিবন্ধন করেছি দেড়ঘন্টা যাবৎ টিকা নিতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কখন যে এলাইন শেষ হবে আর কখন টিকা দিতে পারবো জানিনা।
ওয়ারিয়া গ্রাম থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে তৃতীয় ডোজ নিতে আসা রিতা রানী ভারতী বলেন, এর আগেও দুইবার টিকা নিয়েছি তখন এত ভিড়বা মানুষের মধ্যে টিকা নিতে এত আগ্রহ ছিল না কয়দিন পরে নাকি আর কেউ ফ্রী আবেদন বা নিবন্ধন করতে পারবে না এবং। টিকাও নিতে নাকি খরচ হবে এমন বিভ্রান্ত ধারণা নিয়ে অধিকাংশ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আগে টিকা নেওয়ার জন্য উপচে পড়া ভিড় জমাচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার শফিকুল ইসলাম বলেন, টিকা নিতে আসা মানুষকে বারবার স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সতর্ক করা হলেও কেউ তা মানছে না। টিকা নিতে এত মানুষ আগে দেখা যায়নি তবে জরুরি মাইকিং করার পরেই গনটিকা নিতে মানুষের মাঝে এমন আবেগ ও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ মানুষের উপচে পড়া ভিড় সামলাতে পুলিশ ও আনসার মোতায়ন করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার জিয়াউর রহমান বলেন, গত উপজেলার সকল ইউনিয়নের জরুরী মাইকিং করা হচ্ছে যারা তীর্থক টিকার প্রথম ডোজ নেননি এবং নিবন্ধন করেননি নিবন্ধন করে আর আহ্বান করা হয়। জরুরী মাইকিংয়ের ঘোষণা করার পরেই মানুষের এক উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে টিকা নিতে মানুষ যে এখনো এত পরিমাণ বাকি ছিল তা সম্পূর্ণ অজানা আশ্চর্যজনক বিষয়। উপজেলার ৩৬ টি কেন্দ্রে এই গনটিকা দেয়া হবে আগামী ২৬ তারিখ পর্যš। যত মানুষ বাকি আছে সকলকে টিকা দেওয়া হবে।
জরুরী মাইকিং ঘোষণার নির্দেশনাবলী উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, উপজেলায় শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে টিকা প্রদান কার্যক্রম। গণ টিকা কেন্দ্র থেকে স্থানীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা যদি নিবন্ধন না করে এমনকি আইডি কার্ড জন্ম নিবন্ধন পত্র না থাকে তবুও সে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিতে পারবে। তবে পাসপোর্ট অথবা জন্ম নিবন্ধন কার্ডের মাধ্যমে টিকার নিবন্ধন পত্র নিয়ে সিনোভ্যাক্স টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার আহ্বান করেন তিনি। তবে যারা প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ ইতোমধ্যে নিবন্ধন করে নিয়েছেন তারা পরবর্তীতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অথবা স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে টিকা দিতে পারবে।
কলারোয়া থানা অফিসার ইনচার্জ নাসির উদ্দিন মৃধা বলেন, সকলকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসচেতনতার বিধি মানা উচিত। গণ টিকাকেন্দ্রে হঠাৎ পূর্বের থেকে মানুষের উপচে পড়া ভিড় বৃদ্ধি পেয়েছে এজন্য স্বাস্থ্যবিধি ও গনটীকা কেন্দ্রের শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পুলিশ কাজ করছে।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ইউএনও জুবায়ের হোসেন চৌধুরী বলেন, কলারোয়া উপজেলার সকল ব্যক্তিকে টিকা গ্রহণ করতে হবে। সনদ বিহীন কোন ব্যক্তিকে অফিস-আদালত থেকে কোন সেবা দেয়া হবেনা এমনকি চিকিৎসাসেবা নিতে গেলেও তাকে টিকা সনদ দেখাতে হবে। গণ টিকা প্রদান কার্যক্রমের আজ প্রথম দিনে উপজেলায় ১৩হাজার ৩৫২ জন ব্যক্তিকে টিকা দেওয়া হয়েছে। সকল ইউনিয়নের মধ্যে গনটিকা এখানে ১৬৫২ জনকে দিয়ে সোনাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ প্রথম স্থান অর্জন করেছে।
আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারিতে আবারও স্বস্ব ৩৬টিকা কেন্দ্রে গনটিকা দেয়া হবে। এসময় তিনি কঠোর নির্দেশনা দিয়ে বলেন, সকল ব্যক্তিকেই টিকা নিতে হবে যদি কেউ গাফিলতি করে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধক টিকা গ্রহণ না করে তাহলে তার বাড়িতে সিল মেরে দেওয়া হবে এবং তাকে সকল প্রকার সেবা থেকে বঞ্চিত করা হবে।