Site icon suprovatsatkhira.com

সামাজিক বন উজাড় করে চলছে পাউবোর জায়গা দখল

জি এম মাছুম বিল্লাহ, সুন্দরবন অঞ্চল প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়ায় খোলপেটুয়া নদী সংলগ্ন বড় কুপোট গ্রামে সামাজিক বন উজাড় করে পাউবোর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। উপক‚লের বেড়িবাধ রক্ষায় সৃষ্টি করা সামাজিক বনায়নের গাছ নিধন হওয়ায় বেড়িবাধ ভাঙার শঙ্কা দেখা দিয়েছে উপক‚লের সচেতন মহলের মাঝে। স্থানীয় সচেতন মহলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (১৯ ফেব্রæয়ারি) সরজমিনে দেখা গেছে আটুলিয়া ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর ধারে বৈদ্য বাড়ি খেয়া ঘাট থেকে নওয়াবেকী বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে পাউবোর বেড়িবাধ রক্ষার্থে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে গাছ রোপণ করে বন সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সেই বনায়নের জায়গা ভরাট করে স্থাপনাসহ বাড়িঘর নির্মাণের কাজ চলছে। কোথাও কোথাও মাটি দিয়ে ভরাট করে সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে এবং সেখানে মাটির স্তুপ তৈরি করে বসতি স্থাপনের প্রক্রিয়াও চলছে। স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন বর্তমানে কিছু ভূমি দস্যুরা বন উজাড় করে দখলবাজিতে মেতে উঠেছে। অন্যদিকে কাঠ পাচারকারীরা সামাজিক বন বিভাগের লাগানো গাছ কর্তন করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন।

ভূমিদস্যু ও কাঠ পাচারকারী চক্রের এমন কর্মকাÐে হতবাক স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। এসব বিষয়ে অভিযোগ তুলে বড়কুপট ও দূর্গাবাটি সামাজিক বনায়ন সমিতির সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বন বিভাগের সহযোগিতায় উপক‚লের বেড়িবাধ রক্ষায় সামাজিক বনায়ন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। অথচ বর্তমানে কিছু ভূমিদস্যু ও কাঠ পাচারকারী চক্রের কারণে বনটি ধ্বংসের দারপ্রান্তে’। তিনি আরো জানান, ‘সামাজিক বনায়ন ধ্বংসের বিষয়টি সবার কাছে জানানোর পরও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। যার কাছে জানাই সে দেখছি দেখছি বলে অথচ কেউ দেখে না’। এ বিষয়ে আটুলিয়া ভূমি কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, ‘বিষয়টা আমার জানা আছে। আমি এসিল্যান্ড স্যারকে জানিয়েছি। তবে জায়গাটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের। এজন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের শ্যামনগর এসও মহোদয়কে জানিয়েছি। যেহেতু পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় সেহেতু আমি নিষেধ করতে পারি না। তারপরও আমি নিজে অনেককে নিষেধ করেছি’। তবে সামাজিক বনায়ন উজাড় করে ভূমি দখলের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মাসুদ রানা ভূমি কর্মকর্তার উপরে চাপিয়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কর্মকর্তা (ভূমি) মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, ‘আমরা ইতিপূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।

প্রয়োজন হলে সাতক্ষীরা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা বরাবর জানাব’। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি আমি আন্তরিকতার সাথে দেখব এবং খুব দ্রæত সমাধান করব’। শ্যামনগর উপজেলা সামাজিক বন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকবার তাদের জেলা দায়িত্বরত এক্সএন সাহেবকে ফোন দিয়েছি। কিন্তু তিনি বিষয়টি আমলে নেন না। দুজনের সমন্বয়ে শ্যামনগর থানায় একটি অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টা কোন পর্যন্ত সেটি কারোরই জানা নেই। এমন দায়িত্ব অবহেলার কারণে একটা অঞ্চলে সামাজিক বনায়নের গাছ ধ্বংস করছে ভূমিদস্যুরা’। উল্লেখ্য, নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরিতে প্রতিনিয়ত হত্যা করা হচ্ছে শত শত গাছ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে এখনই উপযুক্ত তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তির দাবি করছেন সচেতন মহল।

তবে সাতক্ষীরা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের বলেছেন, ‘আমার অফিস থেকে কাউকে জায়গা লিজ দেয়া হয়নি। বন বিভাগের সামাজিক বনায়নের জন্য দেওয়া হয়েছে। এ জায়গার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সামাজিক বনায়নের। তবে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের জায়গা রক্ষা করব’। উচ্ছেদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি লম্বা প্রক্রিয়ার কথা জানান। তবে তিনিও আশ্বাস দিয়েছেন নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধে লোক পাঠাবেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version