Site icon suprovatsatkhira.com

জাতীয় পর্যায়ে ৭ স্বর্ণপদক জিতে আশাশুনির মেয়ে কচি রানীর অনন্য নজির

সমীর রায়, আশাশুনি : বাংলাদেশ জাতীয় কাবাডি দল ও আনসার দলের অন্যতম সদস্য এবং উশু খেলোয়াড় হয়ে কচি রাণী মন্ডল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাতবার স্বর্ণপদক, রৌপ্য ও ব্রঞ্জ পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার জিতে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাবাডি ও উশু খেলোয়াড় হিসাবে দেশের হয়ে সুনাম অর্জনকারী প্রচার বিমুখ এ খেলোয়াড়ের জন্ম সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা সদরের আশাশুনি গ্রামে। তিনি আশাশুনি হাইস্কুলের প্রয়াত শিক্ষক অমল কৃষ্ণ মন্ডলের মেয়ে।

৬ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি ৫ম। জীবনে তিনি স্থানীয়, ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বিভিন্ন খেলাধুলায় জিতেছেন অসংখ্য পরস্কার। কচি ২০০৭ সালে আশাশুনি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করার পরের বছর তিনি (৮ অক্টোবর ২০০৮ সালে) বাংলাদেশ আনসার ব্যাটেলিয়ান এর সিপাহী হিসাবে যোগদান করেন। চাকরিতে বাংলাদেশ আনসার একাডেমী, গাজীপুর থাকাকালে ২০১০ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ আনসার দলের হয়ে কাবাডি খেলা শুরু করেন। ঐ বছরেই তিনি জাতীয় কাবাডি দলে ডাক পেয়ে চীনে অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাবাডি গেমস এ বাংলাদেশ দলের হয়ে অংশ নেন। ঐ টুর্ণামেন্টে বাংলাদেশ দল ব্রোঞ্জপদক অর্জন করে। ২০১২ সালে বীচ্ কাবাডি টুর্ণামেন্টে চীনে বাংলাদেশ দলের হয়ে অংশ নেন। ঐ টুর্ণামেন্টেও বাংলাদেশ দল ব্রোঞ্জপদক অর্জন করে। ২০১২ সালেই প্রথম মহিলা কাবাডি বিশ্বকাপে ভারতে বাংলাদেশের হয়ে অংশগ্রহণ করেন কচি রানী। ২০১৮ সালে তিনি ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান গেমস কাবাডিতে বাংলাদেশের হয়ে অংশগ্রহন করেন।

এরপর তিনি ২০১৩ সাল থেকে আনসার দলের হয়ে উশু খেলা শুরু করেন। এ দু’টি খেলায় অংশ নিয়ে কমপক্ষে সাতবার জিতেছেন স্বর্ণপদক। এছাড়াও তিনি আরও পদক ও পরস্কার জিতে গড়েছেন কৃতিত্ব। তিনি ২০১৩ সালে ভারতে বঙ্গবন্ধু কাপ কাবাডি খেলায় স্বর্ণপদক পান। ২০১৪ সালে অষ্টম বাংলাদেশ গেমস এ উশুতে স্বর্ণপদক জিতে নেন। ২০২১ সালে নবম বাংলাদেশ গেমস এ অংশ নিয়ে তিনি আনসার দলের হয়ে উশু খেলায় জিতে নেন স্বর্ণপদক। এছাড়াও সর্বশেষ তিনি ২০২২ সালের ২৭-২৮ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত ১৬তম জাতীয় উশু চ্যাম্পিয়নশীপে (মিরপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে) অংশ নিয়ে সেখান থেকেও ৭০ কেজি ওজন শ্রেণীতে স্বর্ণপদক জিতেছেন। জাতীয় উশুতে ২০১৩ সাল থেকে নিয়মিত অংশ নেয়া ২৯ বছর বয়সী আশাশুনির মেয়ে কচির এটি সপ্তম স্বর্ণ জয়।

কাবাডি খেলোয়াড় হিসেবে এশিয়ান গেমস, বিশ্বকাপ, বিচ এশিয়ান গেমস এবং বাংলাদেশ গেমসে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কচি খেলোয়াড় হিসেবে বিশেষ অবদান রাখায় নিজ সংস্থা আনসারের কাছ থেকে ২০১২ সালে পেয়েছেন বিশেষ পুরস্কার। এছাড়াও কাবডি ও উশুতে বিভিন্ন সময়ে জিতেছেন স্বর্ণপদক, রৌপ্য ও ব্রঞ্জ পদকসহ অসংখ্য পরস্কার। এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জননী কচি রাণী মন্ডল বর্তমানেও বাংলাদেশ আনসার একাডেমী, গাজীপুর এ কর্মরত আছেন। ২০১৪ সালে তার বিয়ে হয় কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার আলিয়াবাদ গ্রামে। তার স্বামী পার্থ সারথী সাহা আগে মহিলা অধিদপ্তরের চাকুরী করলেও বর্তমানে তিনি একজন ব্যবসায়ী। খেলোয়াড় হিসাবে এ অর্জনে রয়েছে তার নিজ সংস্থা আনসার এর কর্মকর্তাবৃন্দ, বাবা, মা, শ্বশুর, শ্বাশুড়ী ও স্বামীর বিশেষ অবদান। সব সময় তারা তাকে সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।

আশাশুনির গর্ব কৃতি খেলোয়াড় কচি রাণী মন্ডল এ প্রতিবেদককে জানান, সাতবার স্বর্ণ জিততে পেরে আমি দারুণ খুশি। বলতে পারেন জেতার ব্যাপারে আমার কনফিডেন্স ছিল। এর জন্য বিভিন্ন সময়ে কঠোর অনুশীলন করেছি। উশুতে স্বর্ণপদক জেতার জন্য অনেক কষ্ট করেছি। কাবাডিতেও সাফল্য পেতে কম কষ্ট করিনি। আমার সেই কষ্ট সার্থক হয়েছে। আশাশুনিবাসীর সহযোগিতা পেলে বা তারা চাইলে আশাশুনির মেয়ে হিসাবে আমি উপজেলার আগ্রহী খেলোয়াড়দের তত্বাবধায়ন করে বিভিন্ন পর্যায়ে কাবাডি ও উশু খেলোয়াড় হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। তিনি আরও বলেন, আমার উপজেলার তরুন প্রতিভা খুঁজে বের করে যদি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্তরে কাবাডি এবং উশু খেলোয়োর হিসাবে স্থান করিয়ে দিতে পারি সেটাই হবে আমার স্বার্থকতা।

এসময় তিনি বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা কাবাডি দল ও আনসার মহিলা কাবাডি দল এবং উশু খেলোয়াড়দের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া ও আর্শিবাদ কামনা করেন। তবে দেশের হয়ে সুনাম সুখ্যাতি অর্জন করে চললেও আশাশুনি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার কোন খোঁজ খবর নেওয়া বা সংবর্ধনাও জানানো হয়নি। তিনি নিভৃতে আশাশুনিতে এসে মা ভাইদের সাথে দেখা করে আবার নিভৃতেই চলে যান। তারপরও কোনো আক্ষেপ না করে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার বিমুখ এই কচি রানী ।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version