সমীর রায়, আশাশুনি : জীর্ণ শীর্ণ ও চরম অবহেলায় কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ১৯৬৫ সালে স্থাপিত আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ পি এন এফ ধনীরাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। সারাদেশে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা যেখানে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে আলাদা জায়গা করে দিয়েছে সেখানে এ স্কুলটির ভৌত অবকাঠামো সত্যিই লজ্জাস্কর। স্কুলের শৌচাগার টি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে গত ৮ বছর আগে। ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মচারীদের টয়লেট করতে হয় ১৯৩০ সালে নির্মিত পার্শ্ববর্তী পারিশামারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাথরুমে। শত প্রতিক‚লতার মধ্যে তবুও শিক্ষা ক্ষেত্রে ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করে চলেছে বিদ্যালয়টি। ২০-২১ শিক্ষা বর্ষে ৬৩ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬২ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। যার মধ্যে ২ জন গোল্ডেন এ+ এবং ৩ জন এ+ অর্জন করেছে।
সরজমিনে স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, খাজরা ইউনিয়নের চেউটিয়া বাজার থেকে পূর্ব দিকে দেড় কি.মি. দুরে চেউটিয়া খাল ধারের উত্তর পাশে ১৯৬৫ সালে নির্মিত হয় পি এন এফ ধনীরাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। স্কুলে জমি দান করেন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী প্রফুল্ল গাইন, কার্তিক চন্দ্র রায়, স্বপন কুমার রায় সহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ। খালের দক্ষিণ পাড়ে ইটের সোলিং থাকলেও উত্তর পাশের রাস্তাটি বিগত ৫০ বছর ধরেও কার্পেটিং দুরে থাক ইটের সোলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি। সামান্য বৃষ্টি হলেই যাতায়াত করা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে শিক্ষার্থী, শিক্ষক কর্মচারী ও স্থানীয় এলাকাবাসীর।
ভৌত অবকাঠামো বলতে ২০০৩ সালে ৩ কক্ষ বিশিষ্ট একতলা একটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। কিন্তু গত কয়েক বছর আগে তার সিঁড়ি ঘরটির ছাঁদ ভেঙে সেটা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ভবনটির একটিতে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় এবং দুইটিতে শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। যদিও ভবনগুলোর সংষ্কার করা অতি জরুরী হয়ে দেখা দিয়েছে।
৩ টি টিনসেড যার একটি দীর্ঘ দিন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি দুটিতে ৫ টি ভাগ করে ক্লাস পরিচালনা করা হয়ে থাকে। বাথরুমটা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে গত ৮ বছর আগে। সামান্য বৃষ্টি হলেই স্কুল চত্বরে হাঁটু পানি হয়ে যায়। কাঁদা পানিতে স্কুলের রুম থেকে বাইরে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। টানা ৩য় বার নির্বাচিত স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুরাম সানা জানান- স্কুলে ফটিকখালি গ্রামে দুটি, নয়াবাদ গ্রামের একটি, খালিয়া গ্রামের দুইটি, কাপসন্ডা, চেউটিয়া ও পারিশামারী স্কুলের শিক্ষার্থীরা পাশ করে ভর্ত্তি হয়। মোট ৮ গ্রামের শিক্ষার্থীরা এ স্কুলে পড়াশোনা করে থাকে। চেউটিয়া খালের দক্ষিণ পাড়ের গ্রামগুলির ছেলে মেয়েদের কাঠের তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙাচোরা সাঁকো পার হয়ে যেতে হয়। উত্তর পাশের গ্রামগুলো থেকে আসা ছেলে মেয়েদের মাটির রাস্তা দিয়ে স্কুলে আসতে হয়।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিলন কান্তি মন্ডল জানান- ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলে যাতায়াতের চরম দুরাবস্থা পোহাতে হয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারী ও এলাকাবাসীর। সবাইকে বর্ষা মৌসুমে কাদাপানিতে নাকানিচুবানি খেয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। একমাত্র শুকনো মৌসুমে ছাড়া খালের উত্তর পাশের গ্রামগুলোয় কোন যানবাহন চলাচল করতে পারে না। স্কুল সংলগ্ন কাঠের ব্রিজটি দীর্ঘদিন ধরে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে আছে। পাশাপাশি দুটি স্কুল। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গত বছর সাইক্লোন শেল্টার ভবন করা হয়েছে। কিন্তু যাতয়াতের কোন সুবন্দোবস্ত নেই।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিরাজ মÐল জানান- বর্তমানে স্কুলে ৩৭০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। শিক্ষক রয়েছেন ১১ জন কর্মচারী ৩ জন। সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকের ৩ টি পদ শূন্য। আটটি গ্রামের ছেলে মেয়েরা ইস্কুলে পড়াশোনা করতে আসে। এর মধ্যে ৬ টি গ্রামের ছেলেময়েদের মাটির রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হয়। ২ বছর আগে নতুন ভবন পাওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছিলাম তবে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। চেউটিয়া বাজারের পিচের রাস্তা থেকে কমপক্ষে স্কুল পর্যন্ত রাস্তা কার্পেটিং এবং স্কুল সংলগ্ন কাঠের ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটি সংস্কার করা প্রয়োজন, তাছাড়া স্কুলের মাঠ ভরাট, বাথরুম নির্মাণ, খেলাধুলার পরিবেশ তৈরি করা, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা ও নতুন ভবনের খুব প্রয়োজন। তাই অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আমাদের স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ ডালিম কাছে স্কুলটিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করতে প্রয়োনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
ইউপি চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ ডালিম জানান- স্কুল সংলগ্ন এলাকার সব রাস্তা সংস্কারের জন্য এমপি স্যারকে তালিকা দিয়েছি। খুব দ্রæত কাজ শুরু করতে পারবো বলে আশা করি। তাছাড়া স্কুলের ভবন নির্মাণ করতে যা কিছু প্রয়োজন সেটা প্রধান শিক্ষকের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।