ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২
কলারোয়ার সব স্কুলে শ্রদ্ধা আছে নেই শহীদ মিনার
ফারুক হোসাইন রাজ, কলারোয়া: রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর ও দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছরেও সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটিতে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে দিবসটি পালন করা হয়। আবার কোনো প্রতিষ্ঠানে দিবসটি পালনই করা হয় মিলাদের মাধ্যমে।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১২৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩১টি মাদ্রাসা, ১টি সরকারি কলেজ, ১১টি বেসরকারি কলেজ আছে । এ ছাড়াও রয়েছে ৮টি কিন্ডারগার্টেন, ৮টি এনজিও , ৬টি প্রতিবন্ধী স্কুল ও ১টি মুক্তিযোদ্ধা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শহীদ মিনারের জন্য প্রতিষ্ঠানের জায়গা নির্ধারণ করা আছে শুধু সরকারি বরাদ্দের অপেক্ষায় আটকে আছে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলে বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কোনোটিতে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না বানিয়ে শুধু আলোচনা সভা বা মিলাদ মাহফিল করে দিবসটি পালন করা হয়। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানে তা-ও করা হয় না। এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগ ও তালা কলারোয়া সাতক্ষীরা ১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপির সহযোগিতা কামনা করেছেন। ভাদিয়ালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গতকাল রবিবার গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো শহীদ মিনার নেই। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থের অভাবে প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করতে পারিনি। গত বছর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে শহীদ তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানের চাহিদা দেওয়া হয়েছে তবে কবে যে শহীদ মিনার নির্মাণ হবে সেটি আল্লাহই ভাল জানেন। শহীদ মিনার নেই বলে মিলাদ ও দোয়ানুষ্ঠানে করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে হচ্ছে। আজ শহীদ মিনার থাকলে শহীদ বেদীতে শিক্ষার্থীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারতো। শহীদ মিনার না থাকায় অনেক আনুষ্ঠানিকতা ও শহীদ বেদীতে ফুল দেওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ ওই অঞ্চলের এলাকা বাসীরা। চন্দনপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাছুম বিল্লাহ বলেন, ‘শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য গতবছর জেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে আবেদন করেছিলাম। এখনো তাঁরা শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ দেননি। মাদ্রাসায় শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক মাইল পায়ে হেঁটে পার্শ্ববর্তি চন্দনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড শহীদ মিনারে পুষ্পঅর্ঘ্য অর্পণ করা হয়। বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকলে রাষ্ট্রভাষার আন্দোলনে ভাষা শহীদদের ইতিহাস-ঐতিহ্য শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই জানতে পারে। জয়নগর বসন্তপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিতাই মহালদার বলেন, একদিকে করোনা সংক্রমণ স্কুল বন্ধ। মাতৃভাষা দিবসটি বিদ্যালয়ে কিভাবে উদযাপন করা হবে তা অফিস সহায়ক ভালো বলতে পারবেন তবে বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। তাই একুশে ফেব্রুয়ারির আগের দিন বিদ্যালয়ের মাঠে কলাগাছে কাগজ মুড়িয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে সেখানে ফুল দেওয়া হয়।
চান্দুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র জিসান আহমেদ বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারির দিন ইস্কুল বন্ধ। উপজেলা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে কি সুন্দর অনুষ্ঠান হয় আমাদের ইস্কুলেতো শহীদ মিনার নেই তাই আমরা ফুল দিতে পারিনা । আমরা তাই কাগজে রঙ করে শহীদ মিনার আঁকি’। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এইচএম রোকনুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্রীয় ও মাতৃভাষা কিভাবে ছিনিয়ে আনলো ভাষা শহীদরা তার বিরল স্মৃতি শহীদ মিনার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকা আবশ্যকীয়। উপজেলায় ১২৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মধ্যে ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আছে। কলারোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুলসীডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপীনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বয়েরডাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হিজলদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝাপাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেয়াড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খোরদো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে। শহীদ মিনার নেই এমন সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তথ্য নিয়ে ডিপিও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে তথ্য পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে এলজিইডির নকশা অনুযায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে । অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা কমিটির আগ্রহ ও আন্তরিকতায় এমপিও ডিও লেটার অথবা স্থানীয়ভাবে স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণ করেছেন। এবছর করোনায় স্কুল বন্ধ তবুও সিমিত পরিসরে দিবসটি উদযাপন করতে বিদ্যালয়ে পতাকা উত্তোলন, কুইজ, চিত্রাংকন দোয়া মাহফিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের বরাদ্দ পেতে স্থানয় জনপ্রতিনিধি প্রশাসন ও সরকারের নিকট সহযোগিতা কামনা করেন। এ বিষয়ে তালা- কলারোয়া সাতক্ষীরা ১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি বলেন, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের ইতিহাস ঐতিহ্যে গাথা শহীদ মিনার রাষ্ট্রের অনেক বড় এক শিল্প। এ শিল্প কোন কারো উপর চাপিয়ে দিলে তা রক্ষা করা হয় না বরং অযতেœ অবহেলায় পড়ে থাকে এজন্য শিক্ষকদের বলি শহীদ মিনার নির্মাণ হবে তবে শহীদ মিনার নির্মাণে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি এক টাকা করে হলেও অংশগ্রহণ থাকতে হবে তাহলে শিল্পটির যতœ হবে সেই শহীদ মিনার সকলের কাছে পরিচর্যা পাবে। হাইস্কুলে প্রকল্পের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রাচীর ও শহীদ মিনার নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন সরকার। এজন্য হাইস্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণের বিষয়ে আমি যাইনি তবে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে যারা আমার কাছে অংশগ্রহণমূলক আবেদন করেছে আমি তাদের সাথে অংশগ্রহণ করে শহীদ মিনার নির্মাণের ব্যবস্থা করেছি। প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানেরা আন্তরিকতা ও অংশগ্রহণমূলকভাবে আবেদন করলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ হবে। কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও জুবায়ের হোসেন চৌধুরী বলেন, কলারোয়া উপজেলার ১২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে। শুধু কলারোয়া উপজেলা নই বরং দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা অতি গুরুত্বপূর্ণ এক শহীদ মিনার থেকেই রাষ্ট্রের অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের জানানো সম্ভব হয়। উপজেলার যেসকল হাইস্কুলে শহীদ মিনার নেই ইতোমধ্যে তথ্য নিয়ে শিক্ষা বিভাগের ডিপার্টমেন্টে দেয়া হয়েছে জানা গেছে সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে শহীদ মিনার নির্মাণ করবেন। যে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ডিপার্টমেন্ট বিষয়টা নিয়ে কাজ করছেন। তবে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার অতিগুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করেন তিনি। 8,588,863 total views, 5,549 views today |
|
|
|