Site icon suprovatsatkhira.com

সিন্ডিকেট আর ফটকা-বাজারিদের হাতে জিম্মি জেলার ফুল ব্যবসায়ীরা

মাজহারুল ইসলাম : ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন। এদিকে আগামী কয়েকদিন পরেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সারা বছর অলস সময় কাটালেও এই তিনটি দিবসকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখেন ফুল ব্যবসায়ীরা। এক মুহ‚র্ত স্থিরতার সুযোগ থাকে না ফুল ব্যবসায়ী ও দোকানের কর্মীদের। সোমবার (১৪ ফেব্রæয়ারি) সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সাতক্ষীরার ফুলের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন ২১ শে ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ক্রেতাদের এমন ভিড় থাকতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকবে। বর্তমানে করোনার কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ফুল বিক্রি আশানুরূপ হচ্ছে না বলেও জানান একাধিক ফুল ব্যবসায়ী।

ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে পাওয়া গেছে নানাবিধ অভিযোগ। তারা বলছেন সাতক্ষীরা জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল উৎপাদন না করায় নির্ভর করতে হয় যশোর, গদখালী, ঝিকড়গাছা ও ঢাকা কেন্দ্রিক পাইকারী ফুলের বাজারের উপর। তবে ওইসব পাইকারী বাজারে ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের কারণে নিষ্পেষিত হচ্ছেন খুচরা ফুল ব্যবসায়ীরা। পাইকারী বাজারগুলোতে চাহিদার উপর নির্ভর করেই বেড়ে যায় ফুলের দাম। এরমধ্যে বিশেষ বিশেষ দিনে ফটকা ফুল ব্যবসায়ীদের কারণেও লোকসান গুনতে হয় প্রকৃত ফুল ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের দাবি পাইকারদের কাছেই জিম্মি খুচরা ফুল ব্যবসায়ীরা।

সাতক্ষীরার ফুল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে গত বছর সরকারি বিধিনিষেধ লকডাউনসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়েছে জেলার ফুল ব্যবসায়ীদের। তবে এ বছরেও সরকারি বিধিনিষেধের মধ্যেও নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন তারা।

শহরের লাবনী মোড়ের ফুল ব্যবসায়ী পারভেজ হাসান জানান, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ফুলের চাহিদা একটু বেশি আছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর ফুলের দামও আকাশ ছোঁয়া’। তিনি জানান, ‘বিগত বছরগুলোতে আমরা যে ফুল ১ হাজার টাকা দরে কিনেছি এবছর সেই ফুল ১ হাজার ৮শ’ থেকে ২৫শ’ টাকা দরে কিনতে হয়েছে। এতে খুচরা বিক্রিকালে কাস্টমারের সাথে একটু মনোমালিন্য হচ্ছে’।

ফুল ব্যবসায়ী মিলন হোসেন জানান, ‘আমাদের একটি গোলাপ ফুল কেনা পড়ছে ১৫ থেকে ২৫ টাকায়। আমরা সে ফুল বিক্রি করছি ২০ থেকে ৩০ টাকায়। এছাড়া একটি রজনীগন্ধা ফুল ১৫টাকা, জারবারা ফুল ২০ টাকা, গ্যালোডিয়াস ফুল ২০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এ বছর ফুলের দাম অনেক বেশি’।

ফুল বিক্রেতা মো. টনি হাসান জানান, ‘গদখালী, ঝিকড়গাছা, যশোর ও ঢাকা থেকে সাতক্ষীরায় ফুল আসে। এজন্য পাইকারী ব্যবসায়ীদের থেকে নির্ধারিত দামেই আমাদের ফুল ক্রয় করা লাগে। বর্তমানে একটি কালার গোলাপ আমরা কিনছি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। আমরা যদি একটি ফুলের দাম ৫৫ টাকা চাই তাহলে আজ কেনো ওই কাস্টমার আর কোনদিন আমার দোকানে ফুল কিনতে আসবে না। এদিকে গদখালিতে একটি টিউলিপ ফুলের দাম ধরছে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। এজন্য সাতক্ষীরায় টিউলিপের আমদানি নেই’।

তিনি আরো জানান, ‘সারা বছর লোকসান গুনে বছরের এই তিনটি দিনে বেশি ফুল বিক্রি হয়। কিন্তু এই সময়েই পাইকারী ব্যবসায়ীরা ফুলের দাম বাড়িয়ে দেয়। আমরা তাদের কাছে জিম্মি’। প্রিয়োজনের জন্য ফুল কিনতে আসা আফরিন জামান জানান, ‘আমি ১৫০ টাকা একটি ফুলের তোড়া কিনলাম। অথচ এমন এক তোড়া ফুল আগে ৫০-৬০ টাকয়ও কিনেছি। এবার ফুলের দাম অনেক বেশি’।

ফুল কিনতে আসা রিকি হাসান জানান, ‘বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য ফুল কিনতে আসলাম। কিন্তু ফুলের বাজারে যেন আগুন লেগেছে। তারপর নিরুপায় হয়ে বেশি দাম দিয়ে ফুল কিনতে হচ্ছে’।

সাতক্ষীরা জেলা ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুস সালাম জানান, ‘বছরের হাতে গোনা কয়েকটাদিন ফুলের বেশি চাহিদা থাকে। তারমধ্যে ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন আর মাতৃভাষা দিবস গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু করোনা মহামারিতে স্কুল কলেজ বন্ধ, সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলা লাগছে। জনসমাগম না হওয়ার ফলে মানুষ এসব উৎসবে যোগদান করছে কম। এজন্য ফুলের চাহিদাও কমে গেছে। তবে এ বছর সব ধরনের ফুলের চাহিদা কিছুটা বেশি থাকলেও দাম বেশি হওয়ায় টিউলিপ ফুলের একদম চাহিদা নেই। কিন্তু আশা করছি এ বছর ফুল বিক্রি করে গত বছরের লোকসান কিছুটা পুষিয়ে উঠতে পারব’।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা সারা বছর লোকসান সয়ে ব্যবসা করি। অথচ বছরের গুরুত্বপূর্ণ দিনে কিছু ফটকা ফুল ব্যবসায়ী শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে বসে ফুল বিক্রি করে বাজার নষ্ট করে। এদিকে আমরা সারা বছর কর্মচারীর বেতন দিয়ে দোকান ভাড়া বহন করে লোকসান গুনতে হয়। তারা একদিনে রাস্তায় বসে ব্যবসা করে আমাদের ক্ষতির মুখে ফেলে দেয়’।

জেলা ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুস সালাম আরো জানান, ‘স্থানীয় কিছু সমস্যার পাশাপাশি আরো বড় সমস্যা হলো ফুলের পাইকারী বাজারে সিন্ডিকেট। ফুলের যে মূল্য তারা নির্ধারণ করবে আমরা তার বাইরে কিনতে পারি না। বাণিজ্যিকভাবে যদি সাতক্ষীরায় ফুলের চাষাবাদ করা যায় তাহলে সাতক্ষীরার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় ফুল সরবরাহ করা সম্ভব হতো’।

তিনি জানান, ‘সাতক্ষীরার নগরঘাটা এলাকায় আকরাম আলী নামের এক ব্যক্তি ফুলের চাষাবাদ করছেন। সেখান থেকে কিছু গাধা ফুল ও কিছু গোলাপ আসে যা সাতক্ষীরার চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। আমরা ফুল ব্যবসায়ীরা চাই শুধু একজন না কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে সাতক্ষীরায় আরো একাধিক ব্যক্তি ফুলের চাষাবাদে যুক্ত হোক’।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version