Site icon suprovatsatkhira.com

সাতক্ষীরায় ওমিক্রনসহ করোনার তৃতীয় ঢেউ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার পরামর্শ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের

নূর মনোয়ার: করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে পূণরায় কম্পিত পৃথিবী। সম্প্রতি সারা দেশে করোনা রোগী বৃদ্ধি ও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত করোনা রোগী ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার করোনা প্রতিরোধে ১১ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। সাতক্ষীরায় করোনা রোগী সংখ্যা বৃদ্ধি, করোনা সন্দেহে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও ভোমরা স্থলবন্দরে সম্প্রতি ভারত থেকে আগত ২ জন পাসপোর্ট যাত্রীর করোনা পজিটিভ হওয়ায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে সবাইকে সতর্ক হওয়ার তাগিদ দিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

ভোমরা স্থলবন্দর স্বাস্থ্য বিভগের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডার (সিএইচসিপি) রবিউল ইসলাম জানান, ভারত থেকে আগত পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ৭২ ঘন্টার মধ্যে আইটিপিসিআর কপি এবং দুই ডোজ টিকা দেওয়া থাকতে হবে। এছাড়া ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারসহ সকলকে অটো টেম্প্রাসার মেশিনের সাহায্যে তাপমাত্রা মাপা হয়। শরীরের তাপমাত্রা ৯৯.৪ ডিগ্রির বেশি হলে মেশিন অটো হুইসেল দেয়। জানুয়ারির ৭ তারিখ এবং ১১ তারিখে ভারত থেকে আগত দুই পাসপোর্ট যাত্রীর করোনা পজিটিভ পেলে আমরা তাদেরকে ফেরত পাঠাই। গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্তৃপক্ষ ভারত থেকে আগত প্রতি পাসপোর্ট যাত্রীর জন্য টিকা কার্ড বাধ্যতামূলক করে।
করোনা নমুনা সংগ্রহ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাব টেকনোলজিস্ট সুব্রত কুমার দাস জানান, জানুয়ারির ১৪ তারিখে করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫ টি, ১৫ তারিখে ১৭ টি এবং ১৬ তারিখে ২০ টি করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। করোনা নমুনা সংগ্রহ প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নমুনার পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন চিকিৎসকের নির্দেশনা, টিকা কার্ড, টিকা কার্ড না থাকলে জাতীয় পরিচয় পত্র এবং নমুনা পরীক্ষার জন্য ১০০ টাকা।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক কুদরত-ই-খুদা জানান, করোনা সন্দেহে রোগী ও করোনা রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে করোনা সন্দেহে রোগীসহ মোট ২৮ জন করোনা রোগী ভর্তি আছে। করোনার জন্য ২৫০ বেড প্রস্তুত আছে। মেডিকেলে করোনা সংক্রান্ত চাহিদার কিছু পূরণ হয়েছে। বর্তমানে ছোট অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ৪৩০ টি, বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ৩০ টি, হাইফ্লো অক্সিজেন মেশিন আছে ৬০ টি, ৩০০ বেডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন চালু আছে। আইসিইউ ৮ টি, সিসিইউ ৬ টি এবং পোস্ট আইসিইউ আছে ৮ টি। মেডিকেলে নার্সদের চাহিদা পূরণ হয়েছে কিন্তু চিকিৎসকের সংঙ্কট আছে। তিঁনি আরও জানান, করোনার প্রথম ঢেউ ও দ্বিতীয় ঢেউয়েয়ে সংঙ্কটময় মুহ‚র্ত পার করেছি করোনার তৃতীয় ঢেউ সে পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় তারজন্য আমাদের সতর্ক হতে হবে। আমাদেরকে ৩ ফুট সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, মাক্স পারা,বার বার হাত ধোয়া, সকল গণ জমায়েত বদ্ধ করা, গণ পরিবহণে চলাচল সীমিত করা সহ করোনার বিধি নিষেধ মেনে চলতে হবে।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা: হুসাইন শাফায়াত বলেন, সম্প্রতি জেলায় করোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাতক্ষীরা স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্ক অবস্থায় আছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে সাতক্ষীরায় ১৮ টি পিসিআর টেস্টে ২ টি করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। বর্তমানে ১১ জন করোনা রোগীর মধ্যে ৮ জন বাড়িতে ও ৩ জন ভর্তি আছে। এছাড়া করোনা সন্দেহে রোগী আছে ৩১ জন। করোনা সংক্রমণ রোধে টিকা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরাতে ১২ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৬ টি টিকার প্রথম ডোজ, ৮ লাখ ৭৭ হাজার ৫১৮ টি দ্বিতীয় ডোজ এবং ৯ হাজার ১০৬ টি টিকা বুস্টার ডোজ দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। করোনা সংক্রমণ রোধে ভোমরা স্থলবন্দরে করোনা নমুনা পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ৬ হাজার লিটার সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে যার মাধ্যমে ১০০ বেডে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ টি করোনা বেড নির্ধারিত আছে।

প্রয়োজনে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা বেড ২৫০ থেকে ৩০০ বেডে উন্নতি করা যাবে ও সদর হাসপাতালেও করোনা বেড নির্ধারিত করা যাবে। জানুয়ারির ১১ তারিখে খুলনায় করোনা মিটিংয়ে করোনা প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে শিদ্ধান্ত হয়েছে। করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগকে সংকটময় মূহুর্ত পার করেতে হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় সমস্ত বিশ^ যখন হিমশিম খাচ্ছে তখন সকলের সহযোগিতায় করোনার দুটি ঢেউ মোকাবেলায় আমরা অনেকটা সফল। করোনা সংক্রমণ বিষয়ে আমাদের সকলের ধারণা তৈরি হয়েছে। সকলকে করোনার তৃতীয় ঢেউ প্রতিরোধে এখনই সতর্ক হতে হবে। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। করোনা তৃতীয় ঢেউ প্রতিরোধে সকলকে সরকারের ১১ দফা নির্দেশনা মানেতে হবে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version