Site icon suprovatsatkhira.com

সফলতা বা ব্যর্থতা নয়: গুরুত্বপূর্ণ হল আন্তরিকতা

প্রেস বিজ্ঞপ্তি : ’করোনাকালে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে যে শিখন ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে শিক্ষকদের আন্তরিকতাটাই মুখ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ, সফলতা বা ব্যর্থতা, এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ করোনাকালে আমরা এমন এক অবস্থার মুখোমুখি হয়েছি, যেখানে প্রায় তিন বছর যাবৎ শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম, ওয়ার্কশীটের ব্যবস্থা করা, গুগল মিটে ক্লাস নেওয়া, যে সকল শিক্ষার্থী বা তাঁর অভিভাবকের অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই, তাদেরকে বাটন ফোনের মাধ্যমে পাঠদানসহ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে। তারপরও বলতে হয়, শ্রেণিকক্ষের পড়াশোনার যে মান, তা কোনভাবেই এইসব বিকল্প ব্যবস্থা দিয়ে নিশ্চিত করা সম্ভব না। তথাপি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের শিক্ষকরা চেষ্টা করে যাচ্ছে।

তাই বলতে হবে সফলতা বা ব্যর্থতা নয়, বাচ্চাদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ হল আপনার-আমার আন্তরিকতা’- ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সাতক্ষীরার সাথে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) বিকাল ৩টায় জুম মাধ্যমে অনুষ্ঠিত ’মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা: করোনাজনিত বন্ধ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণে করণীয় শীর্ষক’ ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: রুহুল আমীন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যালয়গুলোতে একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতেই করোনার কারণে সরকার বাধ্য হয়ে আবারও শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।

এমন অবস্থায় মায়েদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মায়েরা সচেতন না হলে বাচ্চাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, মাদ্রাসা বা কিন্ডারগার্টেন, যেটাই বলেন, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মানের ধারে কাছেও তারা নেই। আমাদের শিক্ষকরা যে প্রশিক্ষণ পায়, তা তাদের জন্য অচিন্তনীয়। ফলে শ্রেণি কক্ষে গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারলে, আমাদের স্কুল ছেড়ে ওসব প্রতিষ্ঠান ছেলে মেয়ে যাবে না। সনাক সভাপতি পবিত্র মোহন দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ২০১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সনাকের সুপারিশে গঠিত একটিভ মাদারস ফোরাম-এর সভানেত্রীবৃন্দ, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সনাক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জন অংশগ্রহণ করেন। এর আগে সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সনাক সদস্য মো. আবুল বাসার (পল্টু বাসার)।

তিনি করোনার মধ্যেও সনাকের আহŸানে সাড়া দিয়ে এমন একটি আয়োজনে শামিল হবার জন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এরপর ’প্রাথমিক শিক্ষায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি ও সেবার মানোন্নয়নে অ্যাকটিভ মাদার্স ফোরাম এর ভূমিকা’ শীর্ষক উপস্থাপনা দেন টিআইবি’র খুলনা ক্লাস্টারের কো-অর্ডিনেটর মো. ফিরোজ উদ্দিন। এরপর মুক্ত আলোচনার শুরুতেই সনাক সহ-সভাপতি মোমেনা খানম সভার সাফল্য কামনা করে বক্তব্য রাখেন। এরপর একে এক করোনকালীন প্রাথমিক শিক্ষার মান নিশ্চিতে মায়েদের ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য রাখেন সিলভার জুবিলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান চায়না ব্যানার্জি, বাটকেলখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদাউস, লাবসা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশপিয়ারা খাতুন, গোবিন্দকাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাছলিমা খাতুন, মুনসিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুষমা রানী মন্ডল, নেহালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা, ফিংড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গুলশান আরা সহ বিভিন্ন স্কুলে গঠিত একটিভ মাদারস ফোরাম এর প্রতিনিধিবৃন্দ। মুক্ত আলোচনা শেষে সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা বাসুদেব কুমার সানা মুক্ত আলোচনায় উঠে আসা চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কর্তৃপক্ষের করণীয় নিয়ে বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

তিনি প্রধান শিক্ষক ও মায়েদের দেওয়া পরামর্শগুলোর প্রশংসা করেন। এরপর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহা. আব্দুল গণি তাঁর বক্তব্যে শিক্ষকদের পাশাপাশি মায়েদের ভূমিকা বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দেন। তিনি বলেন এ ক্ষতি পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা হয়তো সম্ভব না, তবে আমাদের চেষ্টার কোন ত্রæটি রাখলে চলবে না। অশিক্ষিত হলেও অনেক মা আছেন সচেতন, তাঁরা অনেকে রতœগর্ভা মা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠাও করেছেন। সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তাফা কামাল বলেন, গত তিন বছর ধরে প্রায় শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ। আমরা যত যাই বলি এ অবস্থায় মান নিশ্চিত করাতো দূরের বিষয়, বাচ্চাদেরকে পড়াশুনার সাথে সম্পৃক্ত রাখাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ উৎরাতে পারাটাই এখন সবচেয়ে বড় সফলতা। সবশেষে সভাপতি সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি শিক্ষা কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক মনোভাবের প্রশংসা করেন। তিনি টিআইবি’র পরবর্তী প্রকল্পে শিক্ষাক্ষেত্রে সনাকের কার্যক্রম আরো বিস্তৃত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমরা সব সময় কর্তৃপক্ষের সহায়ক হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত আছি। আশা করি সকলের উদ্যোগে সাতক্ষীরা জেলায় মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। অতঃপর সকলকে আরো একবার ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র সরকার, সঞ্জয় কুমার মন্ডল, মাসুম বিল্লাহ, ভূধর চন্দ্র সানা, সন্তোষ কুমার মন্ডল, সনাক সদস্য ও সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জী, ভারতেশ^রী বিশ^াস ও স্বজন সহ-সমন্বয়ক মো. ইয়াসিন সিদ্দিক, ইয়েস দলনেতা হুমায়রা ফারজানা ও সহ-দলনেতা শেখ মোতাহার হোসেন ও সুমাইতা ইয়াসমিন, ইয়েস সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ, সুমিতা কর্মকার, মেহেদী হাসান ও টিআইবি’র এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মো. রবিউল ইসলাম। সভাটি সঞ্চালনা করেন সনাক সদস্য মো. অলিউর রহমান।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version