কলারোয়া প্রতিনিধি: কলারোয়ার ২২ টি ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। প্রতি বছরের মতো চলতি মৌসুমেও ইট ভাটা মালিকরা দিন রাত ভাটায় কাঠ পুড়িয়ে ইট প্রস্তুত করছে।
আইন লঙ্ঘন করে ইটভাটাগুলোতে ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, হাইব্রিড হফম্যান, জিগজ্যাগ ও ভার্টিক্যাল শ্যাফট কিলন পদ্ধতির চিমনি বা পরীক্ষিত নতুন প্রযুক্তির পরিবেশবান্ধব ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। এ ছাড়া ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করলে তিন বছরের কারাদন্ড এবং অনাধিক তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কাগজ কলমে এসব আইন থাকলেও কলারোয়ার ইটভাটা মালিকদের কথা কাজের গরু কিতাবে থাক, গোয়ালে না থাকলেই হলো।
উপজেলা ভাটামালিক সমিতির মাধ্যমে জানা গেছে, কলারোয়া পৌর সদরসহ উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নে মোট ২২টি ইটভাটা আছে। এর মধ্যে মাত্র ১১টি ভাটায় পরিবেশসম্মত জিগজ্যাগ চিমনি আছে। এই ১১ টি ভাটায় জিগজ্যাগ চিমনি থাকলেও অবৈধ ভাটা মালিকদের সাথে পাল্লা করে তারাও কয়লার পরিবর্তে দেদারছে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়াচ্ছেন।
সরেজমিনে উপজেলার দমদম বাজারের রহমান ব্রিক্স, গাজী ব্রিকস, ভাই ভাই ব্রিকসসহ প্রায় প্রতিটি ইটভাটার পাশে ইট পোড়ানের জন্য স্তুপ করে রাখা হয়েছে। ভাটা মালিকদের কেউ কেউ গ্রামাঞ্চল থেকে ট্রাক যোগে কাঠ নিয়ে ইট ভাটার কাছা কাছি রেখেছেন। সেখান থেকে রাতের আধারে ট্রলি বোঝাই করে ইটভাটায় এসব অপরিপক্ক কাঠ ইট পোড়ানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
সরেজমিনে উপজেলার দমদম বাজারের রহমান ব্রিক্সে কাঠ নিয়ে ভাটার চুল্লিতে ফেলতে দেখা গেছে শ্রমিকদের।
ভাটা মালিকদের হাতে নির্যাতনের ভয়ে নাম প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করে ইটভাটার শ্রমিকেরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও মূলত কাঠ দিয়েই ইট পোড়ানো হচ্ছে। ভাটায় সারা রাত ধরে চলে কাঠের ব্যবহার। প্রশাসনের ভয়ে ভাটার সামনে সামান্য পরিমান কয়লা প্রতিকী হিসাবে রাখা হয়। একটি বড় ইটভাটায় এক মৌসুমে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ ইট পোড়াতে ২২-২৫ দিন সময় লাগে। এ সময় কমপক্ষে ১১ হাজার মণ জ্বালানির প্রয়োজন। আবহাওয়া ভালো থাকলে এক মৌসুমে পাঁচ-ছয়বারে ৭০-৮০ লাখ ইট পোড়ানো সম্ভব। এ পরিমাণ ইট পোড়াতে ৬৫ থেকে ৬৭ হাজার মণ (প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন) জ্বালানি কাঠ পোড়াতে হয়। সে হিসাবে কলারোয়া উপজেলায় তিন থেকে চারটি জিগজ্যাগ চিমনির ভাটা বাদে ২২টি ভাটায় প্রায় ১৮ হাজার ৯০০ মণ জ্বালািন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।
উপজেলার দমদম বাজারের ফয়জুল্লার ব্রিক্স এ গিয়ে দেখা গেছে, ট্রলি থেকে কাঠের গুঁড়ি ভাটার চুল্লির পাশে ফেলা হচ্ছে। ট্রলির চালক রেজাউল ইসলাম জানান, তিনি ওই কাঠগুলো উপজেলার বেলেডাঙ্গা থেকে বহন করে এনেছেন। ভাটার শ্রমিক বলেন, এ ভাটায় প্রতিদিন দুই ট্রলি করে কাঠ পোড়ানো হয়।
ভাটামালিক মো: ফয়জুল্লার কাছে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, কয়লার দাম বৃদ্ধির কারণে ভাটায় জ্বালািন হিসেবে কিছু কাঠ পোড়াতে হচ্ছে। তিনি বলেন ভাই এ বিষয়ে কিছু লেখার দরকার নেই। কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন চৌধুরীর জানান, আমিও শুনেছি কিছু ভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।