”সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে জরুরী ও প্যাথলজি সেবায় দালালদের দৌড়াত্ব বন্ধে কিছুদিন আগে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছিল। কয়েকজনের শাস্তিও হয়েছিল। ফলে কিছু দিন তাদের তৎপরতা বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন তা আবারও শুরু হয়েছে। কারণ হাসপাতাল একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, যেকেউ সেবাগ্রহীতার ছদ্মবেশে হাসপাতাল চত্ত¡রে প্রবেশ করতে পারে। দালালরাও সেবা গ্রহীতার ছদ্মবেশে হাসপাতালে ঢোকে। কিছু মুখ চেনা দালাল আছে। আমরা দেখলেই ব্যবস্থা নেই। এসব দালালরা রোগীদের এটা সেটা বুঝিয়ে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। আমরা প্রায় তাদের অপতৎপড়তা বন্ধে ব্যবস্থা নেই। কিন্তু এটাতো ওদের পেশা, ফলে তারা জেল জরিমানার তোয়াক্কা না করেই এই কাজ করে। এদের আটকাতে গেলে আমাকে আলাদাভাবে ২/৩ জনকে একাজের জন্য নিযুক্ত করতে হবে।
কিন্তু নিয়মিত কাজের জন্যই যেখানে জনবল স্বলতা রয়েছে, সেখানে বাড়তি লোক নিযুক্ত করা কঠিন। এজন্য দালালদের দৌড়াত্ব বন্ধে সামাজিক উদ্যোগ প্রয়োজন।” ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), সাতক্ষীরা-এর উদ্যোগে আয়োজিত সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন জনাব ডাঃ মো: হুসাইন শাফায়াত এসব কথা বলেন। সেবা গ্রহীতাদের যেকোন অভিযোগ গ্রহণ ও নিরসন, নারী আউটডোর রোগীদের জন্য ব্রেস্টফিডিং কর্নার, নারীদের জন্য পৃথক সেবাসংক্রান্ত চার্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক হাসপাতালের যেকোন বিষয়ে ফোকাল পারসন।
তাই তাকে প্রধান করে হাসপাতালের ”অভিযোগ নিরসন কমিটি” গঠনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, হাসপাতালে একটা ব্রেস্টফিডিং কর্নার আমরা চালু করেছি। তবে এটাকে নিয়মিত মেইনটেইন করার জন্য আলাদাভাবে কাউকে নিযুক্ত করা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের লোকবল সংকট প্রকট। আমাদের রোগীরাও হাসপাতাল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে খুব একটা সচেতন নয়। ফলে ব্রেস্টফিডিং কর্নার সব সময় খোলা রাখা যায় না। রোগীরা নোংরা করে ফেলে। এছাড়া নারীদের জন্য পৃথক সেবাসংক্রান্ত চার্ট খুব দ্রæত তৈরি ও দৃষ্টিগোচর স্থানে টানিয়ে দেওয়া হবে বলে তিনি সভায় জানান।
বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টারগুলো হঠাৎ করে বিভিন্ন টেস্টের ফি প্রায় দ্বিগুন করেছে। এবিষয়ে সিভিল সার্জনের দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি বলেন, বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টারগুলো আসলে যতটা না সেবামূলক তারচেয়ে বেশি ব্যবসায়ীক মনোভাব নিয়ে কাজ করে। সমস্যটা এখানেই। তারা মুনাফা করবে, তবে তার একটা মার্জিন অবশ্যই থাকতে হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়াও হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নসহ অবকাঠামোগত বিভিন্ন বিষয়ে তিনি কথা বলেন।
সবশেষে সনাক সভাপতি পবিত্র মোহন দাশ বলেন, সিভিল সার্জন মহোদয়ের ভাল কাজ করার মানসিকতা রয়েছে। কিন্তু তাদেরও লোকবলের সংকটসহ বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সনাক চেষ্টা করে স্থানীয় পর্যায়ের সমস্যাগুলো কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে। তিনি বলেন, ডিসি সম্মেলন, পুলিশ সম্মেলনের মত সিভিল সার্জন সম্মেলনেরও আয়োজন করা প্রয়োজন। এসব বিষয়ে টিআইবি’র মাধ্যমে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অ্যাডভোকেসী করার চেষ্ট করা হবে বলে তিনি সভাকে অবহিত করেন। এরপর তিনি উপস্থিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং সিভিল সার্জনের ইতিবাচক মানসিকতার প্রসংশা করে সভার সমাপ্তি ঘোষনা করেন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিয় সভায় অন্যানের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা পুলক কুমার চক্রবর্তী, সনাক সদস্য ও স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির আহŸায়ক ডাঃ সুশান্ত কুমার ঘোষ, সনাক সদস্য ড. দিলারা বেগম ও পল্টু বাসার, ইয়েস দলনেতা হুমায়রা ফারজানা, ইয়েস সদস্য গোলাম হোসেন ও নিয়াজ মোর্শেদ, প্রমুখ। সভাটি সঞ্চালনা করেন টিআইবি’র এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মো. রবিউল ইসলাম। (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)।