Site icon suprovatsatkhira.com

মৃত্যু কি সকলি নেয় ? 

যে কোনো মৃত্যু সংবাদে আমরা একটা ধাক্কা খাই, কিন্তু কোনো কোনো মৃত্যু সংবাদ আমাদের প্রবলভাবে নাড়া দিয়ে যায়, আলোড়িত করে, চুরমার করে দিয়ে যায় অন্তর-অন্তস্তলকে। অর্থাৎ কোনো কোনো মৃত্যু চিৎ চারিত্র্যে অন্য মতো হয়, বিশেষিত হয়ে যায়। এবং লাভ করে উচ্চতা,মহার্ঘ্যতা, দুর্মূল্যতা। এমন এক মৃত্যু-মিতার মুখোমুখি হলাম আমরা ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর উৎসবের দিন। যখন চারিদিকে আলোর ফোয়ারা, উড়ছে ফানুস, ফুটছে আতসবাজি, ভেসে আসছে সুর লহরী ‘‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল’’- অন্যদিকে তখন গোপনে শুকাইছে ফুল, নিভিছে দেউটি,ডুবিছে অর্ক অর্ণব সলিলে। সে নাই সানাইতে তখন কাঁদছে ‘বরসা’ বর্ষা হয়ে নিঝর ধারায়।

‘বরসা’ সহ চায়না বাংলা শপিং কমপ্লেক্স, সিবি হাসপাতাল, দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরা, বরসা রিসোর্ট, বরসা ট্যুরিজম, চায়না বাংলা প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ ময় সাতক্ষীরার আকাশ বাতাস ঝাউপাতা ঝিঁ ঝিঁ সে বড় দুঃখের সময় বলে বেদনা বিধুর হলো কৃষ্ণাভিসারে। যার জন্য সেদিনের এই কৃষ্ণ উৎসার তিনি হচ্ছেন এ কালের সাতক্ষীরার প্রিয় ব্যক্তিত্ব রবি-শশী তারাসম একেএম আনিছুর রহমান, সকলের আনিছ ভাই।

জীবনের সত্যটা এমন- না ফুরাতে আশা, না ফুরাতে ভাষা, না ফুরাতে ক্ষুধা মধ্যাহ্নেই নেমে আসে অপরাহ্নের কালবেলা, ‘‘মেঘ বরণ তরু, মেঘ জটা জুট’’ মহানিশা। যার নির্মম শিকার হলেন সাতক্ষীরা বাসীর আলোকিত প্রিয়জন শ্যাম সমান সুন্দর ‘বরসার’ আনিছুর রহমান। তিনি ছিলেন একজন অনুকরণীয় সফল ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, সমাজ হিতৈষী, ক্রীড়া সংগঠন ও পৃষ্ঠপোষক, প্রকাশনা জগতের অগ্র সৈনিক, অর্থনীতির এক সচল ধারা। আনিছ মানে তারণ্য, আনিছ মানে প্রগতি, আনিছ মানে প্রেরণা, আনিছ মানে জীবন জয়ের জাগর শক্তি, আনিছ মানে সমকাল ¯্রােত, আনিছ মানে জীর্ণ পুরাতন যাক ভেসে যাক, আনিছ মানে চির নূতনের অনির্বাণ শিখা। সাতক্ষীরার মানুষের সাথে তার সম্পর্ক ছিলো ফুলের সাথে পাতার মতো। তার অকাল মৃত্যুতে তার অনেক স্বপ্ন সাধ হোঁচট খেলো, মনে হচ্ছে সামনে হলুদ হেমন্তের অধিবাস।

মৃত্যু কি সকলি নেয়? একজনের নাম-যশ-খ্যাতি-কৃতি ও স্বপ্ন, সফলতা? না, মৃত্যু সকলি কেড়ে নেয় না, যা কিছু অর্জন অনুসৃতি তা থেকে যায় কালের কপোল তলে রক্ত তিলক হয়ে। তার ক্ষয় নেই, বিনাশ নেই। ‘‘মৃত্যু দিয়ে প্রাণের/ মূল্য দিতে হয়/ সে প্রাণ অমৃতলোকে/ মৃত্যুরে করে জয়’’। তাইতো জীবন জন্মে কেউ পিরামিড গড়ে, কেউ তাজমহল, কেউ মহাপ্রাচীর, কেউ টাইটানিক, কেউ বা সুপার সনিক। আনিছুর রহমান সে চেষ্টাই করে গেছের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তার স্বল্প জীবনে। তিনি জানতেন কেউ অবিনশ্বর নয়, জন্মিলে মরিতে হবে- জীবন নশ্বর, অনিত্য অস্থায়ি তাই তাকে মহিমান্বিত করে যেতে হবে। করতে হবে স্বরণীয়-বরণীয় অতুলনীয়। করতে হবে ইতিহাসের শিলালিপি। আর তা করতে হলে কাজ করতে হবে মানুষের কল্যাণে, দেশের মঙ্গলে, সৃষ্টির সৃজনে। আনিছুর রহমান তা করতে যেয়ে উৎসর্গ করে গেছেন তার জীবন যৌবন-ধন-মান। তবেই না তিনি হলেন অমৃতের সন্তান।

সাতক্ষীরা মূলত একটা অনুন্নত পশ্চাৎপদ, রক্ষণশীল কুসংস্কারাচ্ছ জেলা। তাই এখানে শত শত বর্ষেও যুগোপযোগী কাঙ্খিত উন্নয়ন ও অগ্রগতি ঘটেনি। অতি নিকট অতীতে কিছু এনজিও ব্যক্তিত্ব তাদের আধুনিকমনস্ক কর্ম প্রচেষ্টায় সাতক্ষীরার জীবন ও সমাজে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটায়। এদের মধ্যে আনিছুর রহমান ছিলেন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তার হাতের ও প্রাণের ছোঁয়ায়, উৎকর্ষ চিন্তায় ও কর্মে সাতক্ষীরা হয়ে ওঠে উন্নত আধুনিক একটি জেলা। যার আদল উন্নীত হয় দৈশিক ও আন্তর্জাতিক মানের। সাতক্ষীরাবাসী তার কাছে চির কৃতজ্ঞ। তুমি আমাদের অভিবাদন গ্রহণ করো।

অত্যন্ত জীবনবাদি, হৃদয়সংবেদি, দূরদর্শি, উদার দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী আনিছুর রহমান ছিলেন বিষয় বৈচিত্র্য সম্বলিত মানুষ। শিক্ষা- সংস্কৃতি থেকে খেলাধুলা, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য-সাহিত্য, পর্যটন-পরিসেবা সর্ব ক্ষেত্রে আনিছ ছিলেন আইকন বিশেষ। ছিলেন সাহসী,সংগ্রামী, সুনিশ্চিত এক অভিযাত্রী। পথ চলাতেই তার আনন্দ, সে পথ যত বন্ধুর হোক না। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোই ছিল তার জীবনাভিসার। সব্যসাচীর মতো তিনি কাজ করে গেছেন সকল প্রতিকূলতাকে জয় করে। এমন এক অর্জুন মানুষকে হারিয়ে সাতক্ষীরার মানুষ হলো বন্ধুহারা, সাথীহারা, মিত্রহারা। বলা যায় সাতক্ষীরার সমাজে সে ছিল ক্ষণজীবী এক দুর্লভ মানুষ।

সৎ, সত্য, সাহসী ও সংগ্রামী মানুষ কখনো মরে না। আনিছের মৃত্যু তাই অত সহজ নয়। তার জ্ঞান, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, আয়ত দৃষ্টি, কর্ম কুশলতা ও সাফল্য আমাদের কাছে অনুস্মরণীয় এক আদর্শ হয়ে থাকবে। জয় হোক আনিছুর রহমান নামক একজন জিউস ও এ্যাপোলোর। মৃত্যুর কাছে তুমি পরাজিত কিন্তু জয়ী হলে মৃত্যুকে জয় করে। ‘‘মানুষের সাধ্যে যাহা করিবারে পারে আমি তাহা পারিয়াছি/ তার বেশি যে করে সে মানুষ নহে’’ আমি সেই মানুষ ছিলাম, সহজ সরল সসীম মানুষ।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version