নিজস্ব প্রতিনিধি: অধ্যক্ষের বেতন ছাড় করাতে পরস্পর যোগসাজগে প্রিজাইডিং অফিসার মৎস্য কর্মকর্তার অফিসে বসে কথিত নির্বাচনে পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনায় বে-আইনী ভাবে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি গঠন করায় অধ্যক্ষ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা-প্রশাসক, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। ওই মামলায় বিজ্ঞ আদালত আগামি ২ মার্চ ২০২২ সালে আদালতে উপস্থিত হয়ে কাগজপত্র সহ জবাব দাখিলের জন্য সমন জারি করেছে
ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৪ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দারুল উলুম চৌমুহনী ফাজিল মাদ্রাসায়।
মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য আবু তালেব সরদার বাদী হয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী ৫১০/২১ মামলা দায়ের করেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দারুল উলুম চৌমুহনী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জামায়াতের রোকন আব্দুল কাদের হেলালী আওয়ামী লীগ নেতা, মানবাধিকার কর্মী মোসলেম উদ্দীন হত্যা সহ ৮টি সহিংস মামলার আসামী।
মামলায় অধ্যক্ষ জেল হাজতে থাকা অবস্থায় মাদ্রাসার তৎকালীণ সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস, অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের হেলালী কে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে।
পরবর্তীতে ০১/০৬/২০১৪ সালে ওই মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি গঠন হয়। যার মেয়াদ ২৩/০৮/২০২০ তারিখে বহাল থাকলেও করোনা মহামারীর কারণে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস আদেশের মাধ্যমে আগামি ২৫/৩/২০২২ তারিখ পর্যন্ত বর্ধিত হয়।
যে কারণে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গাইডের ১১ এর (জ) ধারায় উল্লেখ আছে যে, রাষ্ট্রের ধ্বংসাত্মক কোন কাজে অংশ গ্রহণ বা সহায়তা করেন সে ব্যক্তি গভর্নিং বডির সদস্য হতে পারবে না।
সে কারণে অধ্যক্ষের বেতন ভাতা আটকে যায়।
হেলালী তার বেতন ভাতা ছাড় করানোর জন্য উপজলা পরিষদের এক শীর্ষ জনপ্রতিনিধির ছত্র-ছায়ায় ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এর ই,আবি/রিজি/প্রশা/২০১৫/৪০৭৩নং স্মারকে ১/১১/১৭ তারিখের পত্রের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে চলমান কমিটি ক্ষমতা অকার্যকর করে মাদ্রাসায় শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতা উত্তোলনের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক শুধু মাত্র স্বাক্ষরের অনুমতি প্রাপ্ত হয়।
গত ১৪/০২/২০২১ ইং তারিখে ২০২০/৮৩৭ স্মারকে কালিগঞ্জ উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে শুধু মাত্র শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন বিলে স্বাক্ষর করার অনুমতি প্রদান করেন জেলা প্রশাসক।
তবে সব কিছু গোপন করে অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের হেলালী বকেয়া বেতন ভাতা ছাড় করানোর জন্য উপজেলা পরিষদের শীর্ষ এক জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতার ইন্ধনে ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার যোগসাজগে অত্র মাদ্রাসার নির্বাচনের জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম কে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেন।
কোন তপশীল ঘোষনা ছাড়া বেআইনী ভাবে তার অফিসে বসে গত ২৩/১০/২০২১ ইং তারিখে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম, আব্দুল মোতালেব এবং সইলূদ্দীন কে বিজয়ী করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলামের সুপারিশ নিয়ে অধ্যক্ষ ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদনের জন্য ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার বরাবর প্রেরণ করলে তা স্থগিত হয়ে যায়।
অনুমোদনের জন্য কমিটির তালিকায় যাদের নাম পাঠানো হয় তারা হলেন সভাপতি হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ ভাজন সাজেদুল ইসলাম সাজু, নারী কেলেঙ্কারী হতে অব্যহতি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড.আশরাফুল ইসলাম, দাতা সদস্য রফিকুল ইসলাম, শিক্ষক প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন, হাবিবুর রহমান, অভিভাবক প্রতিনিধি উপজেলা চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ ভাজন ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম, (বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত) মোতালেব, (বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত) এবং সইলুদ্দীন (বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত) এবং অধ্যক্ষ আব্দুল কাদির হেলালী।
এছাড়াও অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের হেলালীর বিরুদ্ধে জাল সনদে ১০ বছর বয়সে ফাযিল পাশ করে ১৪ বছর বয়সে চাকুরীতে যোগদান করেন। ইতিমধ্যে অধ্যক্ষের চাকুরীর বয়স সীমা পার হওয়ায় বিগত ম্যানেজিং কমিটির সভায় তাকে অবসরে দিয়েছেন বলে জানা যায়।
ঘটনার সত্যতা জানার জন্য মাদ্রাসায় গেলে অধ্যক্ষকে না পেয়ে তার মুঠো ফোনে ফোন দিলে তিনি সাংবাদিক পরিচয়ে শুনতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে ফোন কেটে দেন। প্রিজাইডিং অফিসার মৎস্য কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বদলী হয়ে সাতক্ষীরায় থাকায় তিনি সিডিউলের ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম বিষয়টি খোজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।