Site icon suprovatsatkhira.com

তালায় পিতা-মাতার দেখভাল করা মেয়ের একমাত্র অবলম্বন লুট করল চাচাতো ভাই

বি. এম. জুলফিকার রায়হান, তালা: তালার খেশরা ইউনিয়নের কলাগাছি গ্রামে অসহায় মেয়ের মাছের ঘের লুট পাট করা হয়েছে। বৃদ্ধ পিতা ও মাতাকে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করার জন্য দরিদ্র সরস্বতী সরকার নিজস্ব সাড়ে তিন বিঘা জমির উপর মাছের ঘেরটি করে আসছিল। এই ঘের লুট পাট সহ হামলা চালানোর ঘটনায় গোটা এলাকার মানুষ লুটকারী অনিল সরকারের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এবিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

উপজেলার কলাগাছি গ্রামের খগেন্দ্রনাথ সরকারের মেয়ে স্বরস্বতী সরকার জানান, কোনও ভাই না থাকায় বৃদ্ধ ও মানসিক প্রতিবন্ধী পিতা খগেন্দ্রনাথ সরকার এবং বৃদ্ধা মাকে নিয়েই তার সংসার। পিতা-মাতা সংসার চালানোর অক্ষম হয়ে পড়ায় পিতার দান সূত্রে পাওয়া বড়আবাদ বিলের সাড়ে ৩বিঘা জমিতে তিনি নিজেই মাছের ঘের করে আসছে। মায়ের সহযোগীতায় নিয়ে স্বরস্বতী দীর্ঘ বছর ধরে এই ঘের’র আয় দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু সম্প্রতি চাচাতো ভাই অনিল সরকার প্রতারণার মাধ্যমে একটি দলিল তৈরি করে ওই জমি তার বলে দাবী করে। এনিয়ে তালা উপজেলা পরিষদে সালিস সভা হয়। সালিসে ওই জমি দখল বা অসহায় স্বরস্বতী সরকারের পরিবারকে কোনও হুমকি বা ক্ষতিসাধন না করার জন্য উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অনিল সরকারকে নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে সে বুধবার গভীর রাতে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে দরিদ্র স্বরস্বতী সরকারের ঘেরের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে মাছ লুট পাট করে।

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকালেও সে মাছ লুট পাট করে। পরপর ৩ দিনে অনিল সরকার প্রায় ২লক্ষ টাকার মাছ লুট পাট এবং বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে আরও প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতিসাধন করে। লুটপাটকালে স্বরস্বতী সরকার ও তার মা বাঁধা দিলে সন্ত্রাসীরা তাদের পিটিয়ে আহত করে। এছাড়া নানাবিধ হুমকি প্রদান করলে অসহায় স্বরস্বতী সরকার ঘটনার জোরালো প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। এক পর্যায়ে বর্বর এই ঘটনায় গ্রামের লোকজন প্রতিবাদমূখর হয়ে উঠলে অনিল সরকার হামলা ও লুট পাট বন্ধ করে।

কলাগাছি গ্রামের অমিত সরকার, হরিচাঁদ, কমলা সরকার, চন্দনা সরকার, পুলিন সরকার, প্রিয় নাথ সরকার সহ অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বৃদ্ধ ও মানসিক ভাবে অসুস্থ খগেন্দ্রনাথ সরকারের ৫ মেয়ের মধ্যে ৪ মেয়ে ভারতে বসবাস করে। একমাত্র মেয়ে স্বরস্বতী সরকার (৩৪) এখনও বিয়ে বা সংসার না করে বৃদ্ধ পিতা এবং মাতার দেখভাল করে। বড়আবাদের সাড়ে ৩বিঘা জমি তাদের পৈতৃক সম্পত্তি এবং এই জমিতে স্বরস্বতী দীর্ঘ বছর ধরে মাছের ঘের করে সংসার চালায়।

গ্রামের সকল লোকজন অসহায় স্বরস্বতী ও তাদের পরিবারকে সহযোগীতা করে। এমনকি ওই ঘেরে কখনও তাদের পাহারাদার লাগে না, গ্রামের লোকেরা ঘেরটির পাহারার কাজ করে দিয়ে তাদের সহযোগীতা করে। সেখানে, প্রতারণার মাধ্যমে জমির দলিল বানিয়ে রাতারাতি ঘেরের বাঁধ কেটে দিয়ে মাছ লুট পাট কোরল স্বরস্বতীর আপন কাকাতো ভাই অনিল সরকার। বিষয়টি চরম ঘৃণ্য এবং বর্বর, যা মেনে নেয়া যায় না। স্বরস্বতী সরকার অসহায় এবং পিতা-মাতার দেখভালের জন্য একমাত্র সন্তান হওয়ায় গ্রামের সব লোক এখন তার পাশে দাঁড়ানোয় সে তালা থানায় অনিল সরকারের বিরুদ্ধে শনিবার (২০ নভেম্বর) অভিযোগ দায়ের করেছে।
এব্যপারে তালা থানার ওসি আবু জিহাদ মো. ফখরুল আলম খান বলেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাটির তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এছাড়া, অপরাধিকে গ্রেফতার করার প্রক্রিয়া চলছে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version