ফিচার ডেস্ক : দেখতে মরুভূমির মতো ধু-ধু পথ। জনপদ দূরের কথা, পানীয় জলের আশাও সুদূর পরাহত। বলছি, কেনিয়ার লোকিজি অঞ্চলের কথা। সেখানে দূরের অস্তাচলে দু-একটা মরু-বৃক্ষ। লোকালয়ের ছিটেফোঁটা বলতে ঐ অতটুকুই। এর ভেতর দিয়েই ধুলা উড়িয়ে ছুটে চলেছে এক দল উট।
খরাপীড়িত কেনিয়ার এই দৃশ্যও যেন তীর্থের কাক-কালেভদ্রে মেলে। সেখানে ১৩টি উটের পিঠে ওষুধের বোঁচকা নিয়ে যাচ্ছেন উজ্জ্বল হলুদ টি-শার্ট পরা সাত পুরুষ এবং তিনজন নার্স। বোঁচকাগুলোতে রয়েছে ওষুধ, ব্যান্ডেজ আর পরিবার পরিকল্পনা-পণ্য। যেন আস্ত একটি মোবাইল ক্লিনিক।
গন্তব্যে পৌঁছানোর পর সেখানকার পুরুষ, নারী এবং শিশুরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে পড়ে। অস্থায়ী তাঁবু টানিয়ে শুরু হয় স্বাস্থ্যসেবা। পূর্ব আফ্রিকার দেশটিতে এমনিতেই স্বাস্থ্য খাত দুর্বল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি যোগ হয়েছে অর্থনৈতিক অবকাঠামোগত দুর্বলতা।
দেশটিতে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি জনসংখ্যা। এই দেশটি ঘিরে রয়েছে বিস্তীর্ণ সমতল মরুপ্রান্তর আর উপত্যকা। দুই লাখ ২৪ হাজার ৮১ বর্গমাইলের দেশটির যোগাযোগ-অবকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল। যে কারণে রাজধানী নাইরোবির সঙ্গে অন্য প্রদেশগুলোর বিচ্ছিন্নতা তখনই ধরা পড়ে, যখন দেখা যায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবার অভাবে মারা যাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
বাল্যবিয়ে থেকে শুরু করে প্রসূতি সমস্যা-সব কিছুতেই নির্ভরতার প্রতীক এই উট ক্লিনিকগুলো। প্রজননসেবা গ্রহণে পিছিয়ে পড়া কেনিয়ান দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা কিছুটা হলেও নিশ্চিত করেছে উটদের সম্মিলিত খুর। বিপদে বন্ধুর মতো, দুর্যোগপূর্ণ সময়ে বিমাসেবার ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে এ মরুপ্রাণীগুলো।
কেনিয়ার লোকিজি অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম ইওয়াসো। নানিউকি শহর থেকে প্রায় ৫০ মাইল দূরে নানিউকি নদীর মধ্যবর্তী কণ্টকময় এ পরিবেশেই বাস করেন পেরিসিয়া। প্রাকৃতিক সম্পদ কমে যাওয়ায় এই এলাকার মানুষ পানি আনতে গিয়ে কখনো প্রতিযোগিতা করে কিংবা লুকোচুরি খেলে হাতিদের সঙ্গে। সেখানে স্বাস্থ্যসেবা তো সুদূর পরাহত। পিতৃতান্ত্রিক মনোভাবের দরুন প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
এই শ্রেণির মানুষগুলোর জন্যই কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবার আয়োজন করেছে কমিউনিটি হেলথ আফ্রিকা ট্রাস্ট (চ্যাট)। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরাই উটকে পরিবহণ হিসাবে ব্যবহার করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবহেলিত মানুষগুলোর কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে।
গত তিন বছরে চ্যাট কেনিয়ার ১৪টি কাউন্টির এক লাখেরও বেশি মানুষরে কাছে পরিবার পরিকল্পনার ওপর ফোকাস করে টিবি, এইচআইভি এবং কোভিড প্রতিরোধ পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছে। তাদের প্রচেষ্টাতেই প্রায় ৩৭ হাজার নারী দীর্ঘমেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন।