নভেম্বর ১৮, ২০২১
প্রভাষক মামুন হত্যা মামলার পলাতক আসামি জামায়াত নেতা আলতাফ গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক : অবশেষে গ্রেপ্তার হলেন সাতক্ষীরা সিটি কলেজ শিক্ষক মামুন হত্যা মামলার পলাতক আসামি সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সাবেক প্রচার সম্পাদক আলতাফ হুসাইন। র্যাব ১ এর সদস্যরা তাকে নারায়নঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মধুখালির একটি বাড়ি থেকে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার নামে জমি কেনা বেচার দালালি ও সুনির্দিষ্ট প্রতারনার অভিযোগ রয়েছে র্যাবের কাছে। এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানতে পারে তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় হত্যাসহ ১৫ টি নাশকতার মামলা ছাড়াও কয়েকটি ওয়ারেন্ট রয়েছে। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারি সাতক্ষীরায় জামায়াত শিবিরের সহিংস তান্ডবের সময় আলতাফ হুসাইন ও জামায়াতের আরেক নেতা ফিংড়ীর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও প্রভাষক এবিএম মামুন হোসেনকে তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এসময় মামুনের বাড়িঘর জ¦ালিয়ে দেওয়া হয়। জামায়াতের এই তান্ডবের সময় বিপুল সংখ্যক সাধারণ নাগরিকের দোকানপাট, বাড়িঘর ভাঙচুর করার পর অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং জামায়াত শিবির বাহিনীর হাতে একে একে হত্যার শিকার হয় প্রভাষক মামুন সহ ১৭ জন। জেলাব্যাপী অবরোধ সৃষ্টি করে সড়কধারের গাছপালা কেটে ফেলে তারা। এর প্রত্যেকটি ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন আলতাফ হুসাইন। এসব ঘটনায় সাতক্ষীরার যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল খালেক, আজিজুর রহমান, আলতাফ হুসাইন, রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন, মোঃ আলী, ইমান আলী এবং হাবিবুর রহমান সহ ১৯০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০১৩ এর ২৮ ফেব্রæয়ারি জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাইদীর ফাসির রায় ঘোষনার পর সাতক্ষীরায় ঘোষনা দিয়ে সহিংসতায় নামে তারা। প্রথমেই তারা তান্ডবলীলা চালিয়ে হত্যা করে এবিএম মামুনকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে বিজিবি মাঠে নামে। এসময় বেশ কয়েকজন নিহত হয়। একইসময় সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায় আলতাফ হুসাইন সহ তার সহযোগীরা। সাতক্ষীরা সদর থানায় এসটিসি-১১১/২০১৯, এসটিসি-১১২/২০১৯, এসটিসি-১৩৩/১৯১৭ সহ ১৫টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ২০১৭ সালে আলতাফ হুসাইন নিজেকে ‘নিখোঁজ’ বলে কৌশলে খবর প্রচার করেন। সে অনুযায়ী দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে যায়। পরে তাকে ফেনীর ছাগলনাইয়া থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে মর্মে পারিবারিকভাবে প্রচার দেওয়া হয়। এরপরও জামায়াতের এই নেতার কোন চেহারা সাতক্ষীরায় দেখা যায়নি। তিনি ঢাকায় থেকে জমির দালালি করতেন বলে বিভিন্ন সময় খবর পাওয়া যেতো। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের আহসানউল্লাহের ছেলে আলতাফ হুসাইন শহরের রাজারবাগান এলাকায় একটি বাড়ি কিনে সপরিবারে বসবাস করেন। ইসলামের ইতিহাসে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী লাভের পর তিনি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন জামায়াতের ক্যান্টনমেন্ট খ্যাত এলাহি বক্স একাডেমি ও মোসলেমা কিন্ডারগার্টেনে। জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক হিসেবে তিনি ছিলেন প্রভাবশালী নেতা। এই সুযোগ ধরে তিনি দৈনিক সংগ্রামের জেলা প্রতিনিধি হন। জোট সরকার আমলে তিনি যোগ দেন বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে। এরপর তিনি হন সাতক্ষীরার জামায়াত নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা দৈনিক আলোর পরশ এর সম্পাদক। সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বাবুল আখতার জানান, বহু মামলার আসামি জামায়াত নেতা আলতাফ হুসাইনকে সাতক্ষীরায় নিয়ে আসার আইনগত প্রক্রিয়া চলছে। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে তার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য দেওয়া যাবে। 9,024,145 total views, 693 views today |
|
|
|